কেন ও কিভাবে বাড়াতে হবে আমাদের পাঠাভ্যাস ? - দৈনিকশিক্ষা

কেন ও কিভাবে বাড়াতে হবে আমাদের পাঠাভ্যাস ?

মাছুম বিল্লাহ |

মানব জীবনের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে বইয়ের কথা উল্লেখ করে বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ” মানুষ জন্মায় প্রাণী হয়ে। সেটা এক ধরনের মানুষ। আরেক ধরনের মানুষ হচেছ বিকশিত মানুষ। মানুষের বিকাশের জন্য বই পড়লেই হবে। কারন যে বই পড়ে, সে কবিতা পড়ে, গান শোনে, চিত্রকলা বোঝে। পূর্ণিমার আলো, নীল আকাশ-সবই বোঝে।”
বইকে নানা মনীষী নানা অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। তবে সবার কথার মিলিত সুরটি হচেছ বই পড়ার আনন্দ এবং আহরণের বিষয়টি। বই পাঠে যা অর্জন করা যায, তা অন্য কোন বিষয় থেকে পাওয়া যায়না। বিজ্ঞান-অর্থনীতি বা সামাজিক সূচকে যত উন্নতি করা হোক না কেন, বই পাঠে যা অর্জিত হয়, তার কোন তুলনা নেই।কোন জাতি সভ্যতার কোন সোপানে অবস্থান করছে তা পরিমাপ করা হয় সেই জাতির পাঠাভ্যাস এবং গ্রন্থগারের মাপকাঠি দিয়ে। সভ্যতার এই পরিমাপটি যুগ যুগ ধরে স্বীকৃত হয়ে আসছে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-অর্থনীতিতে । উন্নত দেশগুলোতে পাঠাগারের নান্দনিক অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। কোন কোন দেশের সমৃদ্ধ লাইব্রেরিগুলোকে বলা হয়ে থাকে ত্রিকালের সিড়ি বা জীবিত ও পরলোকগত মানুষের শান্তিপূর্ন সহাবস্থান।বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে, সেসব উন্নতির ঢেউ আমাদের দেশে লেগেছে। কিন্তু এত পরিবর্তনের স্রোতের মুখেও বইয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ এখনও বিলুপ্ত হয়নি। ব্ই পড়ার বিকল্প তৈরি হয়নি। ছাপার অক্ষরের পরিবর্তে এসেছে ’ই-বুক’। যে প্রকরণেই থাকুক না কেন, বই থেকে যাবে। আমরা জ্ঞাননির্ভর যে সমাজের কথা বলি, তা নির্মাণে বই পাঠের কোন বিকল্প নেই। বই পাঠের অভ্যাস বাড়াতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পাঠাগারের সংখ্যা বাড়ানো এবং সেসব পাঠাগারে পাঠের সুযোগ বাড়ানো । আমাদের বর্তমানের পাঠাগারগুলোকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলত হবে।

দেহ, মন ও আত্মার প্রশান্তি ও সামঞ্জস্যপূর্ন বিকাশের নামই শিক্ষা। আর এই শিক্ষার প্রধান উপকরণ হচেছ বই। বই জ্ঞানের বাহক ও আনন্দের প্রতীক। ভাল বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে। বইয়ের আকর্ষণ আদিম আকর্ষণের মতোই দুর্বার। এর মাধ্যমই প্রতিভার স্পন্দন অনূভূত হয়। বই পবিত্র এক আলোকদীপ্তি।আলোকিত মানুষ ও সুশীল সমাজ গড়তে জ্ঞানচর্চা ও এর উপকরণ যেমন—বই, পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদি সংরক্ষনের কেন্দ্র হচেছ পাঠাগার বা গ্রন্থাগার। এটি শক্তি, সৌষ্ঠব, বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানের ভান্ডার, যা মানসিক শক্তির বিশাল সরোবর । গ্রন্থাগার মানুষের জীবনে এক শাশ্বত আলোর উৎস, যা আলোকিত করে তোলে মানুষকে আর তাদের আলোয় আলোকিত হয় সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব। গ্রন্থাগার প্রকৃত অর্থেই দেখাতে পারে আলোর ঠিকানা। নেশার কবল থেকে মানুষকে ফেরাতে পারে সুস্থ জীবন। শেখাতে পারে বাস্তবতা এবং মুক্ত ও মানবিক চিন্তায় উব্ধুদ্ধ করে নির্মূল করতে পারে ধর্মীয় গোঁড়ামি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ।  বৃদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও মানসিক বিকাশে প্রতিটি স্কুল, কলেজ, ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় গ্রন্থগার স্থাপন করা দরকার। সেখানে সব বয়সের মানুষ পত্রিকা, গল্প, উপন্যাস, ধর্মীয় বই, খেলাধুলার বই, ভ্রমণকাহিনী, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীগ্রন্থ পড়ার সুযোগ যাতে পায়। এভাবে পাঠাভ্যাস গড়তে পারলে তাদের মধ্য সৃষ্টি হবে সৃজনশীল চেতনার । খারাপ সঙ্গ, নেশা, আড্ডা এগুলো তারা বাদ দিয়ে পড়ার জগতে, বইয়ের জগতে প্রবেশ করবে।গ্রন্থগারই তাদের দেখাতে পারবে সঠিক আলোর ঠিকানা, উদ্বুদ্ধ করবে মানবিক চেতনায়। তাই জ্ঞান, আলো ও হ্রদয়ের প্রশান্তির জন্য বই হোক শ্রেষ্ঠ বন্ধু এবং বই হোক নিত্যদিনের সঙ্গী।

মাদক , সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্পে আক্রান্ত গোটা সমাজ। মাদকের থাবায় আক্রান্ত হতাশাগ্রস্ত তরুণ সমাজ ধীরে ধীরে পা বাড়ায় অপরাধের দিকে। খুন, টেন্ডারবাজি, রাজনৈতিক মাস্তানি, জমি দখল ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সন্ত্রাসীরা অনেকেই ভাড়ায় খাটে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি গোষ্ঠী তরুণদের ব্যবহার করে শান্তিপূর্ন গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও পদ্ধতিকে ধ্বংস করার পায়তারা করছে।ফুটবলের রাজা পেলের মতে মানুষের পেটের খোরাকের সঙ্গে সঙ্গে মনের খোরাকও জোগাতে হয়। খাাঁটি স্বর্ণ দিয়ে যেমন গহনা হয়না, প্রয়োজন হয় খাদের, তেমনি পরিপূর্ণ মানুষ হতে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকাও আবশ্যক।আমাদের সমাজে বর্তমানে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, গ্রন্থাগার ইত্যাদির রয়েছে যথার্থ অপার্যপ্ততা। ফলে ছাত্রছাত্রী ও তরুণ প্রজন্ম প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছেনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত চাপ, পুরনো ধাঁচের শিক্ষা ব্যবস্থা ও মুখস্থ বিদ্যার প্রভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অল্প বয়সেই পড়াশোনার প্রতি এক ধরনের অনীহা সৃষ্টি হয়। বই পড়ার প্রতি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আমাদের প্রাণের মেলা, বই মেলা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ,আমাদের সৃজনশীল প্রকাশকগন, স্বনামধন্য  ও নতুন নুতন লেখকগন প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ৩৯ বছর ধরে সারা দেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বইপড়া কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ ছাত্রছাত্রী এই কর্মসূচির সদস্য। ২৩ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বইপড়া উৎসব পালিত হয়। ওই দিন সারা দেশে একসঙ্গে প্রায় দশ লাখ পাঠককে উপহার দেওয়া হবে এবার। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে ২০১৬ সালে বইপড়া কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরীর ১১১টি স্কুল থেকে অংশগ্রহণকারী মূল্যায়ণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হাতে পুরুস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে কিছুদিন পূর্বে। বইপড়া কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আজিমপুর গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয় ইসলাম বলছিল, ” বই পড়তে ভালো লাগে বলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। পুরুস্কার পাওয়ায় ভাল লাগাটা আরো বেড়ে গেল।আমার পড়া বারটি বইয়ের মধ্যে শরৎচন্দ্রের পল্লী সমাজ বইটি অসাধারন লেগেছে। শহরের মানুষগুলোও যে গ্রামের মানুষের কথা ভাবে সেই বিষয়টি উঠে এসেছে এই বইয়ে।বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ” আমি তোমাদের বয়সে বই পড়িনি, আমার স্কুলজীবনের স্বপ্ন ছিলি ভিন্ন। বই পড়ার সুযোগ হয়নি বলে ২৫লাখ পাঠককে বই পড়ার সুযোগ করে দিচিছ। তোমাদের কিছু করতে হবেনা, শুধু বই পড়লে হবে। তাতেই তুমি সব পারবে। তোমরা সবাই আলোকিত মানুষ হও।’ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ’ তোমরা যারা বই পড়বে তারাই এই দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাবে। শুধু বিষয়ভিত্তিক কিংবা পেশাভিত্তিক বই পড়লে হবেনা, সব ধরনের বই পড়া উচিত।বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও কালের কন্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ” তোমাদের মাঝে আসলে আমার জীবনকে আলোকিত মনে হয়। তোমরা বই পড়ে আলোকিত হবে, তোমাদের মাধ্যমে দেশ এবং

আমরা সকলে আলোকিত হব। আমি একজন ব্যর্থ মানুষ, কারন ব্যর্থ লোকেরাই লেখক হয়। ক্রিকেটা বা ফুটবল খেলতে না পারলেও বই পড়তে পারতাম। তোমরা বই পড়, নিজের জীবন গড় মনের মতো।’ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ” জ্ঞান থেকে কল্পনাশক্তি বাড়ানো প্রয়োজন, এটি দামি খাবার বা ফলমূল থেকে বাড়বেনা। জন্মের পর মানুষে কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করার একমাত্র পদ্ধতি বই পড়া। এই দেশের সবাই যদি বই পড়ে, এই দেশ নিয়ে আর চিন্তা করতে হবেনা, আসলে লেখাপড়া গুরুত্বপূর্ন নয়, মূল হচেছ শিক্ষা অর্জন। নিজেরা বই পড়, তোমাদের বন্ধুদের বই পড়তে উৎসাহ দাও।’আনিসুল হক বলেন, ” ছোটরাই বাংলাদেশ, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আজকে এখানে উপস্থিত ইমদাদুল হক মিলন ভাইয়ের দুটি বই পড়েছিলাম আর ভেবেছিলাম, আমিও তো লিখতে পারি। তিনি আমার লেখার শিক্ষক। এখানে উপস্থিত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সবাইকে আমি অনুসরণ করি।’

বই পড়া সম্পর্কে বিল গেটস  বলেছেন, ” ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। আর এই স্বপ্ন পেয়েছিলাম বই থেকে। আপনারা যদি আমার ঘরে যান, দেখবেন বই, অফিসে যান, দেখবেন বই, যখন আমি গাড়ীতে থাকি, আমার সঙ্গে থাকে বই।” আজকাল ছেলেমেয়েরা যারা সফল হতে চায়, বড়লোক হতে চায়, নাম করতে চায়, মানুষের উপকার করতে চায় বিল গেটসের এই উপদেশ তাদের কাজে লাগবে। জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, দুটি যদি জোটে তবে একটিতে ফুল কিনিও হে অনুরাগী-কবির এই কথা কী আমরা ভুলে গেছি?আমরা যদি মাসে ৩০০-৫০০ টাকার মোবাইল বিল দিতে পারি, তাহলে বছরে কেন দুই হাজার টাকার বই কিনব না? আমাদের যদি সোয়া কোটি ফেসবুক গ্রাহক থাকে, তাহলে কেন অন্তত সোয়া কোটি বই বিক্রি হবেনা? ।স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে বই দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। উদ্যোগের অভাবেই দেশে আশানুরূপ পাঠক বাড়েনি।

সত্যিকারের সুনাগরিক সৃষ্টিতে পাঠক তৈরির বিকল্প নেই। সেটার জন্য ঢাকার বাইরেও নিয়মিত বইমেলার আয়োজন করা প্রয়োজন। পাঠক বৃদ্ধির জন্য, বইয়ের প্রসারের জন্য, সৃজনশীল ও মননশীল সমাজ গঠনের জন্য দেশের সব বিভাগীয় শহরেই অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের দাবি উঠছে, কয়েক বছর ধরে। বিষয়টি নিয়ে কর্তপক্ষকে গুরুত্বসহ ভাবতে হবে। বই মেলা সম্পর্কে ইমদাদুল হক মিলন বলেন” বাংলাবাজারের স্বর্ণযুগ গেছে বছর পঁচিশেক-১৯৮০ থেকে ২০০৫। তখন প্রতিমাসেই লেখকদের বই বেরুচেছ। উপন্যাস সবচেয়ে বেশি। গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-ছোটদের-সাহিত্য-সায়েন্স ফিকশন-মুক্তিযুদ্ধের বই। বাংলাবাজারের বিভিন্ন দোকানে বসে আড্ডা দিতে দিতে দেখছি মফস্বল থেকে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা তেকে বই বিক্রেতারা আসছেন লিস্ট নিয়ে। এই বই, ওই বই। দোকানের কর্মচারীরা রেক থেকে বই নামিয়ে কুল পাচেছন না। কী বিক্রি একেকটা দোকনে! বইন্ডিংখানা থেকে ভ্যানে করে বই আসছে, বই যাচেছ। লোকজনের আনাগোনায় গম গম করছে বাংলাবাজার। বছরের শুরুতে পাঠ্যবই বাজারে আসার সময় ওদিকটায় হাঁটা-চলাই করা যেতনা।অন্য সময়ও চেহারা প্রায় ওরকম। ক্রেতা আসছেই, বই বিক্রি হচেছই। একটা সময়ে প্রতিমাসে একটা করে চার-পাঁচ ফর্মার বই লিখতাম আমি। বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি। বছরে দুটো-তিনটা, পাঁচটা, এডিশন। প্রকাশকদের মুখ উজ্জল। হুমায়ুন ভাইয়ের বই পেলে প্রকাশক বড়লোক। দিনে দিনে সেই অবস্থা বদলে গেল।আমাদের প্রকাশণা হয়ে উঠল বাংলা একাডেমি মেলাকেন্দ্রিক। সারা বছরের বই বলতে গেলে প্রকাশকেরা ছাপেনইনা। ন্ডড়োহুড়ি শুরু করেন নভেম্বর ডিসেম্বরের দিকে। একসঙ্গে চাপ পড়ে লেখকদের ওপর, প্রচছদশিল্পী আর কম্পোজিটরদের ওপর, প্রেস আর বাইন্ডিংখানায়। বাইন্ডিং খানায় থেকে বই পাকারই সময় পায়না। কাঁচা নড়বড়ে বই চলে আসে বাজারে। ওই এক মাসের বই বিক্রিতে সারা বছরের ব্যবসা নাকি হয়ে যায় কোনো কোনো প্রকাশকের। শুধু বাংলা একাডেমি বইমেলা উপলক্ষ্যে বই বের করার লক্ষনটা খুবই খারাপ। এই অবস্থা থেকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে হবে প্রকাশকদের। বাংলাবজারটাকে ফিরিয়ে নিতে হবে তার আগের ঐতিহ্যে, আগের সুসময়ে।

বইমেলা ও বই প্রকাশে এখনও পুরোপুরি পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি আমাদের দেশে, যদিও আমাদের বইমেলা একটি ইউনিক বিষয়। আইন অনুযায়ী একজন লেখককে তাঁর প্রকাশকের সঙ্গে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করতে হবে এবং তাঁর স্বত্ত্ব কাপিরাইট  নিবন্ধিত হতে হয়। এ ব্যাপারে অসীম সাহা বলেন, ” আমাদের দেশের বড় লেখকরা তাঁদের লেখার জন্য বড় ধরনের রয়্যালীট পান। ফলে তাঁরা কাপিরাইট বা স্বত্ত্ব অধিকার নিয়ে মুখ খোলেন না। কিন্তু মাঝারি বা ছোট লেখকরা কপিরাইট না থাকায বরাবরই বঞ্চিত হন। অনেক সময়ই তাঁরা প্রকাশকের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত ব্যবহার পেয়ে থাকেন।” বইমেলায় বইয়ের চেয়ে মেলার আনুষ্ঠানিকতা গুরুত্ব পাচেছ বেশি বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। তাছাড়া বইমেলাকে ঘিরে সাহিত্যের নামে আগাছা প্রকাশনায় ভরে ওঠে মেলা। ২০১৬ সালের বই মেলায় বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী  প্রকাশিত হয়েছে তিন হাজার ৪৪৪টি বই। ২০১৫ সালে তিন হাজার ৭০০ বই, ২০১৪ সালে দুই হাজার ৯৫৯টি বই, ২০১৩ সালে তিন হাজার ৭০টি বই। বাংলাদেশ কপিরাইট কার্যালয়ের রেজিষ্ট্রার জাফর আর চৌধূরী বলেন, ” গত কয়েক বছরে দেখা গেছে শুধু একুশে গ্রন্থমেলায়ই প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার করে নতুন বই প্রকাশিত হচেছ। অথচ কপিরাইট  নিবন্ধনের পরিমাণ একেবারেই হাতেগোনা।

ফলে লেখকরা তাঁদের গ্রন্থস্বত্ত্রে সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচেছন। কপিরাইট কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭অর্থবছরে মাত্র ১১৩টি সাহিত্যকর্ম কপিরাইট নিবন্ধিত হয়েছে। আগের পুরো বছরে ২৩৬, তার আগের বছর ১৭৫টি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হচেছ যেমন গত দু’বছর থেকে মেলায় শিশুদের মধ্যে বইয়ের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বইমেলায় তাদের জন্য নির্ধারিত দিন ও সময় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।শিশুদের মতো বৃদ্ধ কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্য এমন নির্ধারিত দিন ও সময় আলাদ করে দেওয়া যেতে পারে।অনেক প্রবীন পাঠক রয়েছেন যারা প্রবল ইচেছ থাকা সত্ত্বেও মেলায় অস্বাভাবিক ভীড়ের কথা চিন্তা করে মেলায় আসার কথা চিন্তা করেন না। সেখানে শারীরিক মানসিক দৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের জন্যও শিশুদের মতো করে আলাাদ সময় , সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। মেলায় তাদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য  স্বেচছাসেবকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের স্বাভাবিক চলাচলের ব্যবস্থা করলে বইমেলা আরও অর্থবহ, প্রাণবন্ত, সফল, সার্থক ও সকলের জন্য বইবান্ধব হবে।

বই পড়া সম্পর্কে বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় লেখক হুমায়ন আজাদ বলেছিলেন, ’ বই পড়া যায়না, নিজেকে পড়তে হয়।মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয়। বুঝতে হয়, জ্ঞান বা শিল্পকলার প্রতি আকর্ষণ থাকতে হয়; এবং বই পড়ে হাতে নগদ আমরা কিছু পাইনা  । একটি ফাইল চাপা দিয়ে এক লাখ টাকা রুজি করতে পারি, যদি মন্ত্রী হই , তাহলে স্ত্রীর নামে পঞ্চাশ কোটি টাকার জমি পাঁচ হাজার টাকায় নিতে পারি, এমনকি একটি পোক্ত ক্যাডার হলেও দিনে দশ হজার টাকা অর্জন করতে পারি। আমাদের রাষ্ট্র যারা চালায়—মন্ত্রী, আমলা, বিচারপতি, ব্যবসায়ী, শিল্পপাতি, সোনপাতি এবং অন্যরা বই পড়েনা; কেননা তাতে কোন আশু লাভ নেই; বরং পড়া বেশ কষ্টের কাজ; আর শিল্পকলা ও জ্ঞানে গুলশান বারিধারায় প্রাসাদ ওঠেনা।’ আমাদের সবাইকে এই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে । আর সেজন্য প্রয়োজন আমাদের পাঠাভ্যাস বাড়ানো।

মাছুম বিল্লাহ

শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

(প্রাক্তন ক্যাডেট কলেজ শিক্ষক ও বর্তমানে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত)

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010316133499146