কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত - দৈনিকশিক্ষা

কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গণমাধ্যমে নানা ধরনের সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। কোনো কোনোটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় একজন উপাচার্য অবশেষে অপসারিত হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না। তবে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে নানা ধরনের সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, টিভি চ্যানেলে অনেক আলোচক উপাচার্যদের নিয়ে নানা ধরনের কড়া মন্তব্য করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে এটি খুবই মনোবেদনার কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমি এই লেখায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারেই কোনো মন্তব্য না করে সামগ্রিক সমস্যাটি নিয়ে চুম্বক আকারে কিছু কথা বলব এবং করণীয় কিছু চিন্তা উপস্থাপন করব। কর্তৃপক্ষ কী করবে, সেটি তাদের বিবেচনার বিষয়। রোববার (৬ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় শত বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কৃষি, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চাশ কিংবা পঞ্চাশোর্ধ্ব। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অভিহিত করা হয়। এগুলোর মধ্যেও আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। এখন অশান্ত পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে পুরনো, নতুন এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালগুলোতে। সমস্যা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব অবস্থান থেকে, একটির সঙ্গে অপরটিকে মিলিয়ে দেখা ঠিক হবে না। পুরনো প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরুতে যতটা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণাকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা কারণে সে সুযোগ খুব একটা পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা লাভের পরও বেশ কিছুদিন মর্যাদার সঙ্গেই পরিচালিত হয়েছিল। সেই প্রজন্মের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শুরুতে অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ বজায় রেখেই পরিচালিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নগর থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে স্বাধীনতার পর কয়েক বছরের মধ্যেই আঞ্চলিকতা, সাম্প্রদায়িকতা ও গ্রাম্যতার প্রভাবে ক্রমেই বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা থেকে সরে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আশির দশক থেকে সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা এবং অন্য কিছু সমস্যায় আক্রান্ত হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা ধরনের রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন সৃষ্টি করতে থাকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত থাকার কোনো সুযোগ ছিল না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজধানী কিংবা বড় শহরগুলোর বাইরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেগুলোতে স্থানীয় রাজনীতি, আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি খুব সহজেই জায়গা করে নিতে থাকে।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাকে মাথায় নিয়ে কিভাবে যাত্রা শুরু করলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবহির্ভূত কোনো নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে না, সেটি সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসির মতো প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় খুব বেশি ছিল না। ফলে শুরু থেকেই নতুন প্রজন্মের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়েছে ধারণাবহির্ভূত নামসর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃপক্ষ নিয়ে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ধরনের শিক্ষার পরিবেশ থাকতে হয়, প্রশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কী ধরনের লক্ষ্য থাকতে হয়, অভিজ্ঞ প্রশাসকের দরকার হয়—এ সব কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে একেবারেই অনভিজ্ঞ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। প্রয়োজন ছিল, পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কিছু সময়ের জন্য প্রেষণে (ডেপুটেশনে) হলেও নিয়ে আসা, যাঁদের হাত ধরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে বাস্তবোচিতভাবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন। কিন্তু তা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায়ই ঘটেনি। অধিকন্তু সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানের বিষয়টি এবং প্রশাসনে নিয়ম-শৃঙ্খলা, সরকারি আইন, বিধি-বিধান, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসবের প্রয়োগে অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় না রেখে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নেবেন—এমন আশা করা একেবারেই বাতুলতা মাত্র। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার প্রভাব এত বেশি যে সেখানে যোগ্য এবং অভিজ্ঞদের প্রবেশ একেবারেই ভিন্নভাবে নেওয়া হয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত পদোন্নতি, দায়দায়িত্বপ্রাপ্তিতে অভিজ্ঞতার এত ঘাটতি নিয়ে যাঁরা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনে স্থান করে নেন, তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তাই প্রাধান্য পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালতায় তাঁদের অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ ঘটেনি। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানের সংকটটি চূড়ান্তভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়কে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুযোগ দেয়নি। সরকার যাঁদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয় কিংবা উপাচার্য হওয়ার জন্য যাঁরা তদবির করে নিয়োগটা বাগিয়ে নেন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, সেই চ্যালেঞ্জ কতটা নিয়েছেন বা নেওয়ার অবস্থানে রয়েছেন, সেটা মস্ত বড় প্রশ্ন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকে সৃষ্ট সমস্যা, নতুন করে যুক্ত হওয়া এসব সমস্যায় একেকটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত ঘটানোর উপক্রমে উপনীত প্রতিষ্ঠানের ওপর গিয়ে বসেন উপাচার্যরা। নিজেরাও অনেক সমস্যার জন্ম দেন, নানা ধরনের তদবির ইত্যাদিতে আত্মসমর্পণ করেন। ফলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নানা স্বার্থচিন্তায় যেভাবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তা থেকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রত্যাশা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে।

এমনিতেই আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রম যুগের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। গবেষণার বাধ্যবাধকতার মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেই বললেই চলে। এর ওপর নানা ধরনের প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার ফলে এগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক থেকে এখন মাদরাসা, কলেজ বা স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানের ধারেকাছেই ঘোরাফেরা করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একনিষ্ঠভাবে লেখাপড়া, গবেষণা, শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ একেবারেই দুর্বলতম অবস্থানে চলে গেছে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে; কিন্তু গবেষণা ও প্রকাশনায় নেই তেমন অর্থের সংস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবলের যে কাঠামো রয়েছে, তাতে চতুর্থ, তৃতীয় থেকে উচ্চস্তরে পিরামিডের কাঠামোই যেন মনে করিয়ে দেয়। অথচ উন্নত দুনিয়ায় বিপরীতটিই দেখা যায়। সেটিই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা কাম্য। ছাত্ররাজনীতির নামে সব সময়ই সরকারি ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী করে বেড়ায়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার পর কোনো উপাচার্য বা প্রশাসনের মান-মর্যাদা থাকার কোনো কারণ নেই। বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী, সৎ ও যোগ্য শিক্ষকরা কমবেশি অবহিত। সে কারণে এসবের সঙ্গে যাঁরা আপস করতে পারবেন না তাঁরা উপাচার্য নিয়োগের দৌড়ে এক পাও হাঁটতে চান না। যাঁরা হাঁটেন বা দৌড়ান, তা কতটা বুঝে করেন, নাকি নিজের জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে উপাচার্য পদবি সংযুক্ত করতে বা অন্য কিছু আহরণ করতে যুক্ত হচ্ছেন, তা তাঁরাই ভালো বুঝবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা ভেতরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়কে কেউই মানসম্মত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা কিংবা পরিচালনা করার আশা করতে পারেন কি না, জানি না। আমরা বিশ্ব র্যাংকিংয়ে নেই বলে আক্ষেপ করছি। কিন্তু মানসম্মত পড়াশোনা, গবেষণা, শিক্ষার পরিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যদি আমাদের নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়কেও দৃঢ়ভাবে পরিচালনা করা যায়, তাহলে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা কতটা দেশের মেধা ও মননে উৎকর্ষ সাধনে যোগ্যতার প্রমাণ দেবে, সেটি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় চেতনা ও ধারণাকে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে ধারণ, গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে হবে। সেখানে কূপমণ্ডূকতা, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ইত্যাদির স্থান মোটেও হতে পারে না। যোগ্য, মেধাবী, সৎ, দক্ষ শিক্ষকদের নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় গৌরব করতে পারে। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, শ্লীলতাহানিকারী ও দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিয়ে তা করা যায় না। সেটি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি পাটকলের মধ্যে পার্থক্য খুব একটা থাকবে না। আমাদের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল প্রশাসন নামমাত্র; কিন্তু সেখানে ছাত্রসংগঠনের নামে যা চলে, তা শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে মোটেও যায় না।

শিক্ষার্থীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখন নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকে না, উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন না করেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়ে বের হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও শ্রেণিপাঠ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সময় দেওয়ার মতো শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেকেই বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও, প্রজেক্ট ইত্যাদির মাধ্যমে অতিরিক্ত উপার্জনে ব্যস্ত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিধি একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। সর্বত্রই নিজেদের প্রডাক্টকে প্রাধান্য দেওয়ার নামে যোগ্যদের, এমনকি পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর গবেষণা ডিগ্রি নিয়ে আসা প্রার্থীদের নির্লজ্জভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রখর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ও গবেষণায় প্রভাবিত করতে পারেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা দুঃখজনক হলেও খুবই কম। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই দুঃখজনক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রভাব, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি তাঁদের কতটা মেধা ও যোগ্যতার বিকাশে পিছিয়ে দেয়, সেটা তাঁদের অনেকেই বুঝতে পারেন বলে মনে হয় না।

প্রশাসনে অভিজ্ঞ কর্মকর্তার সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেহেতু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের অধিকার সংরক্ষণ করে, তাই সেখানে যোগ্যতার মাপকাঠি প্রয়োগে নির্বাচনী বোর্ড খুব কমই দৃঢ়তা দেখাতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেনাকাটা, টেন্ডার, নির্মাণ, পরিবহন ইত্যাদি নিয়ে যা রয়েছে, তা মোটেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। সে কারণে প্রয়োজন হচ্ছে দক্ষ, অভিজ্ঞ, মেধাবী, যোগ্য, শিক্ষক ও প্রশাসন ছাড়া কোথাও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং যেগুলো এসব সমস্যায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে কিভাবে মর্যাদার সঙ্গে পরিচালিত করা যাবে, বিশ্ববিদ্যালয় আইন, বিধি-বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ বজায় রাখা যাবে, তা নিয়ে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নৈর্ব্যক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের ইউজিসির কার্যক্রমকে আরো বেশি তদারকিমূলক এবং আইন প্রয়োগে যথাযথ ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসির মর্যাদা ও অবস্থানকে গুরুত্ব প্রদান করলে ইউজিসিও সেভাবে যদি কাজ করতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হতে পারে। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে ইউজিসি তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেবে, মন্ত্রণালয় তা শুধু বাস্তবায়ন করবে—এমনটিই হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগেও ইউজিসির মতামত নেওয়া যেতে পারে। সর্বত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে মানের অভিন্নতা থাকতে হবে।

দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে যথেষ্ট জোড়াতালি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। মানসম্মত জার্নাল, প্রকাশনা থাকা দরকার। একই সঙ্গে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের স্বাক্ষর রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং ইউজিসি মানসম্মত পাঠ্য বই প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারে। সেটি তরুণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের চাহিদা পূরণে অবশ্যই ভূমিকা রাখবে। উন্নত দুনিয়ায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরাই একক বা যৌথভাবে মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা নির্ভরযোগ্য প্রকাশনা সংস্থা সেটি প্রকাশের ব্যবস্থা করে। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত বই রচনা ও প্রকাশের সুযোগ নেই। ফলে তরুণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পাঠদান ও গ্রহণে বাজারের নিম্নমানের বইয়ের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়। এ রকম অসংখ্য সমস্যা আমরা এখনো তলিয়ে দেখছি না। বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশ ও জাতির চাহিদা পূরণে এখনই মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণায়, নীতি-নৈতিকতায়, সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত চেতনায় দাঁড় করাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

লেখক : মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034949779510498