কেন পড়ব লোকপ্রশাসন - দৈনিকশিক্ষা

কেন পড়ব লোকপ্রশাসন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ লোকপ্রশাসন সম্পর্কে বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহমুদুর রহমান। রোববার (১৩ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়-

কী পড়ানো হয়?
জন্ম থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই আমরা প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত। কোনো একটা কাগজ বা সনদপত্র নেওয়ার জন্য আমাদের কোনো না কোনো অফিসে যেতে হয়। সেই অফিসের কিছু নিয়মকানুন থাকে, যেগুলোর মধ্যে আমাদের পড়তে হয়। এখানে একটা বিষয় দৃশ্যমান, সরকারের কাজ দুটো—সেবা আর ব্যবস্থাপনা। সরকার কিছু সেবা দিয়ে থাকে এবং এই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। জনগণের সেবাটা মুখ্য রেখে সরকার কীভাবে এই দুটো কাজ পুরোপুরি করতে পারে, এটাই লোকপ্রশাসনের মূল বিষয়। আবার সরকার যেসব নীতি গ্রহণ করে—তার দুটো ধাপ থাকে। নীতি প্রণয়ন ও নীতি বাস্তবায়ন। সাধারণত বলা হয়, লোকপ্রশাসনের মূল কাজ দ্বিতীয়টা। নীতি প্রণয়নের কাজটা সংসদ বা আইনসভার। তবে পরোক্ষভাবে একজন প্রশাসকও এখানে ভূমিকা রাখতে পারেন। এসব কারণে প্রশাসন রাজনীতি থেকে পুরোপুরি আলাদা হতে পারে না। তাই লোকপ্রশাসনের মূল তত্ত্বগুলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে কিছু এসেছে, আবার ব্যবস্থাপনা থেকেও কিছু এসেছে। এবং ‘ম্যানেজারিয়াল’ ধারণাটা আসলে লোকপ্রশাসনের ধারণার পরবর্তী পদক্ষেপ।
একজন শিক্ষার্থীকে এসব বোঝানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরুতে আমরা তাত্ত্বিক কিছু বিষয় পড়াই। প্রশাসনের একেবারে তাত্ত্বিক দিকগুলোর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞানের মূল যে বিষয়গুলো আছে, যেমন অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয় তখন। এ ছাড়া হিসাববিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কেও আমরা একটা প্রাথমিক ধারণা দিই। পরবর্তীকালে আমরা ব্যবহারিক দিক, যেমন বাংলাদেশের প্রশাসন ও রাজনীতির ইতিহাস, আমাদের স্থানীয় সরকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো শুরু করি। এসবের পর শিক্ষার্থীরা একটু তুলনামূলক আলোচনায় ঢুকে পড়ে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের লোকপ্রশাসনের তুলনার পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু বিষয়, যেমন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পড়তে হয়। চতুর্থ বর্ষের পড়ালেখা হয় গবেষণামূলক। প্রশাসনের ব্যাপারে সাম্প্রতিক যে অগ্রগতিগুলো হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও জানানো হয়।

ভবিষ্যৎ কী?
আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন পাঠ্যসূচির মধ্যে ব্যবসায় প্রশাসনসম্পর্কিত পড়া খুবই কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পাঠ্যসূচিতে ব্যাপারটা একেবারে ভিন্ন। এই পার্থক্যের কারণ হলো, এটাই সময়ের দাবি। দেখা যায় অত্যন্ত পুঁজিবাদী রাষ্ট্র যেগুলো, সেখানে কিন্তু লোকপ্রশাসন স্কুলগুলোকে তারা অর্থনীতিভিত্তিক হিসেবে তৈরি করেছে। আবার তুলনামূলকভাবে কম পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের পাঠ্যসূচিতে ইতিহাস, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটগুলোকে সামনে রেখেছে। এভাবে আমরাও প্রয়োজন অনুযায়ী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করেছি, সামনেও করব। তবে পাঠ্যসূচিতে যতই পরিবর্তন আসুক না কেন, একদম মূল কথা যেটা—জনগণের সেবা দেওয়াকে লক্ষ্য ধরে নিয়ম মেনে চলার কাজটা ঠিক থাকবে। এ কারণে বিষয় হিসেবে লোকপ্রশাসনের ভবিষ্যৎটাও উজ্জ্বল।

ক্যারিয়ার কোথায়?
শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হিসেবে প্রথমেই আমাদের মাথায় থাকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। আমাদের এখান থেকে পড়াশোনা করা ছেলেরা যেন সরকারি পদে জায়গা পায়, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে লোকপ্রশাসন পড়েই যে সবাই প্রশাসন ক্যাডার হয়, কিংবা অন্য বিভাগের কেউ প্রশাসন ক্যাডার হতে পারে না, ব্যাপারটা এমন নয়। আমাদের সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাটা সব বিভাগের জন্য উন্মুক্ত। তবে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্থক্য হলো পরীক্ষা পাসের পর তাদের এমন কিছু বিষয় শিখতে হয়, যেগুলো আমাদের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে শিখে যোগদান করে। এ ছাড়া, বিসিএসের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি চাকরিকেও গুরুত্ব দিই। স্নাতক পর্যায়ের শুরুতে অর্থনীতির কিছু মূল বিষয় পড়ে পরবর্তীকালে তুলনামূলক কিছু কোর্স পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের বেসরকারি চাকরি কিংবা ব্যাংকগুলোতে কাজ করার রাস্তাটাও খুলে যায়।

কাদের পড়া উচিত?
এখানে আমার সঙ্গে অনেকে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তবে আমার মতে যাদের সেবা করার মতো মানসিকতা রয়েছে, তাদের লোকপ্রশাসন পড়া উচিত। আর আমাদের দেশের মতো দেশগুলোতে এটা বেশি প্রয়োজন। সরকারি কাজ সম্পর্কে আমাদের এক শিক্ষক বলতেন, ‘আসা-যাওয়ায় মাইনে পাই, কাজের বিনিময়ে উপরি চাই।’ এই ধরনের মানসিকতা যার নেই, আমার মতে তারই লোকপ্রশাসন পড়া উচিত, সে বিজ্ঞান, ব্যবসা, মানবিক—যাতেই পড়ুক না কেন।

অনুলিখন: সাহিব নিহাল

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044121742248535