দেশের বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ হোঁচট খাওয়ার প্রেক্ষাপটে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে কাল বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আবারও বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিকাল ৩টায় ইউজিসি মিলনায়তনে এই বৈঠক হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ এখনও আশা ছাড়ছেন না।
তিনি বলেছেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত পদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে। সে ক্ষেত্রে বুধবারের সভায় সবার মতামত নিয়ে মার্চের প্রথমার্ধের মধ্যেই একটি রূপরেখা দেয়া সম্ভব হবে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, এই বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সব উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেই ইউজিসি এবার থেকেই সমন্বিত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।
এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানোর আগে ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানোও হয়েছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটও এতে ‘রাজি’ হয়েছে।
কিন্তু ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট আগের মতোই আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এবার কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ইউজিসির মধ্যেই।
ইউজিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষার্থীদের চাহিদার প্রথম সারিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই যদি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় না আসে, তবে এই পরীক্ষার আয়োজন করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকের হয়রানি থেকে রেহাই দেওয়া খুব একটা সম্ভব হবে না। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় না এলে শিক্ষার্থীদের ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও বিশেষ কোনো লাভ হবে না। এখন ইউজিসি চিন্তাভাবনা করে দেখছে আদৌ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়।
একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়।
শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ ও অভিভাবকদের ব্যয় লাঘবের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা চালিয়ে এলেও সফল হচ্ছিল না। এবার বেশ আঁটঘাট বেঁধেই নেমেছিল, কিন্তু তাতেও সংশয় তৈরি হল।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত ডিসএপয়েন্টিং; আন এক্সপেক্টেড না। উনারা থাকলে আরও ভালো হত; সবাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় না এলেও তারা এগিয়ে যাবেন। আমরা এখনও আশাবাদী যে অন্যরা একসেপ্ট করবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে প্রগ্রেস হবো। কালকে বসলে পরে বোঝা যাবে আমরা কী করব? আমরা সেন্ট্রাল এডমিশন টেস্টে যাব, না কি গুচ্ছ পদ্ধতিতে আগাব। কিছু একটা করব আমরা। বসে থাকব না, চেষ্টা করব, যদি ইউনিভার্সিটিগুলো রাজি থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে সরে আসবে কি না- এই প্রশ্নে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আলমগীর বলেন, এই সিদ্ধান্ত তো আমাদের নয়, এটা তাদেরই (বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য) সিদ্ধান্ত ছিল। ইউজিসি ফ্যাসিলেটরের ভূমিকার পালন করছে। তারাই বলেছিলেন, তারা একসাথে ভর্তি পরীক্ষা নেবেন। তবে এখনও তারা ক্লিয়ার করেনি কারা নেবে আর কারা নেবে না। এখন তারা ফোরামে এসে বলুক।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওখান থেকে সরে আসবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। আগামীকাল এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে, বলেন তিনি।
সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, আমরা তাদের সহায়তা করে দেখেছি এটা করা যায়।
বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজার আসনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।