কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত থাকার দায়ে বদলির আদেশাধীন সরকারি হাইস্কুল শিক্ষকদের বদলির আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ১৩ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে পাওয়া বদলির স্থগিতাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামালের হাতে তুলে দেন কোচিংবাজ শিক্ষকরা।
তবে, বৃহস্পতিবার আ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের দেয়া ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করতে আপিল করা হলে আপিল মঞ্জুর হয় বলে জানা যায়। একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে ১৫/২০ বছর যাবত চাকরি করেছেন এমন ৮ জন শিক্ষককে ঢাকার বাইরের কয়েকটি স্কুলে বদলি করা হয়। বদলির আদেশ পেয়ে তারা নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হন। বদলি করা সব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকায় তাদেরকে বদলির সুপারিশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এর আগে গত ২৯শে জানুয়ারি ঢাকার অপর কয়েকটি স্কুলসহ মোট ২৫ জন এসব শিক্ষককে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্কুলে বদলির আদেশ জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুুলের ৮জন নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। অধিদপ্তরের করা বদলির আদেশে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁদের পুরনো কর্মস্থল ছাড়তে বলা হয়েছিল এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছিলো। তারা অধিদপ্তরের আদেশ না মেনে আদালতের স্মরণাপন্ন হন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে বদলির আদেশের পর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ শিক্ষক তাদের বদলি ঠেকাতে প্রথমে গত ৩০শে জানুয়ারি কয়েকজন অভিভাবককে দিয়ে বদলির আদেশ বাতিলের চেয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করান।
গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. শাহজাহান সিরাজকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, মোহাম্মদ ইসলামকে নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, মো. জাকির হোসেনকে নোয়াখালীর চাটখিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, মো. শাহজাহানকে চাঁদপুর গভ. টেকনিক্যাল হাই স্কুলে, মো. আবদুল ওয়াদুদ খানকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এমইউ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে, মো. আলতাফ হোসেন খানকে নেত্রকোনার জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, মো. আযাদ রহমানকে পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ও রণজিৎ কুমার শীলকে হবিগঞ্জের রাজারবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
গত ডিসেম্বরে রাজধানীর আট স্কুলের ৯৭ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছিল দুদক। তাদের মধ্যে সরকারি চার স্কুলের ২৪ জন এবং এমপিওভুক্ত চার স্কুলের ৭৩ জন শিক্ষক ছিলেন। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর একই প্রতিষ্ঠানে থেকে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ করা হয়েছিল। তাই সে সময়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। এ ছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
এর আগে গত নভেম্বরে রাজধানীর ২৪ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককেও বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। সে সময় কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওই শিক্ষকরা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত এক বিদ্যালয়ে রয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন। তাঁরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন।