বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়। একটা দুঃসময়ের মধ্যদিয়ে অতিক্রম করে চরম অবনতির পথে ধাবিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সময়ের পরিক্রমায় দেশের উচ্চশিক্ষার এই বিদ্যাপীঠগুলো হারাচ্ছে তাদের গৌরবান্বিত মহিমা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টানলে প্রথমে চলে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। আবাসিক ব্যবস্থা, সুবিশাল ক্যাম্পাস সম্বলিত ও স্বনামধন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গে প্রতিষ্ঠিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক প্রতিষ্ঠানের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার (২৭ মে) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধ লিখেছেন সারোয়ার ভুঁইয়া
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালি জাতির উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়। ঐ সময়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে শিক্ষার প্রসারতা ছিল ক্ষীণ এবং কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ সময়ের ব্যবধানে তাদের অবস্থার সঙ্গে আমাদের বর্তমানে অবস্থান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের বিচারে তারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বহুগুণে এগিয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দের পর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিকাশের গতিকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে দেশে পরিলক্ষিত হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার পূর্বকালীন সময়ে ন্যায্যতার দাবিতে যৌক্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ তাত্পর্য বহন করে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অবিস্মরণীয়।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যথেষ্ট সুনাম ছিল। যার কারণে দেখা যেত নেপাল, ভারত, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসতো। বিদেশি শিক্ষার্থীরা মূলত ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতো। কেননা তখনকার সময়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর সামরিক সরকারের আমলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস শুরু হয়; কেননা শিক্ষার্থীদের জাগরিত মন-মানসিকতাকে দমিয়ে রাখতে পারলে স্বৈরশাসকদের ক্ষমতার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। স্বৈরশাসকদের পতনের পর ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আগ্রাসন তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আদর্শহীন ছাত্র-রাজনীতির কারণে এ ধারা বর্তমানেও অব্যাহত আছে বলে মনে করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শের সঙ্গে রাজনীতির ধারা বৃদ্ধি, শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের খর্বায়ন, আবাসন ব্যবস্থা দূরীকরণ, গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা না গেলে সময়ের স্রোতধারায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে। যার ফলে শিক্ষাথীদের মেধাকে অন্তঃসারশূন্য করে গোটা জাতি তথা বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়