কোয়ার্টার্সে থাকতে চান না অনেক অধ্যাপক - দৈনিকশিক্ষা

কোয়ার্টার্সে থাকতে চান না অনেক অধ্যাপক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিপুল ভাড়া দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক কোয়ার্টার্সে থাকতে রাজি নন বেশিরভাগ অধ্যাপক। ঢাকার বাইরেই এ প্রবণতা বেশি। জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষকই কোয়ার্টার্সের বাইরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ বাইরে অনেক কম ভাড়ায় মানসম্মত বাসা পাওয়া যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসাগুলো খালি পড়ে থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা না থাকায় এসব বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা উঠেছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ব্যবহার করা অধ্যাপকদের ৪০ শতাংশের বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণ (মেইনটেন্যান্স) ফি না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ১০ কোটির বেশি টাকার অডিট আপত্তি উঠেছে। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। ৯ আগস্ট রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ওই শিক্ষকদের কাছ অর্থ আদায়ে তাগাদা দেওয়ার জন্য উপাচার্যদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আট হাজার ৭৪০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৪৭৮টি খালি পড়ে আছে। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ অধ্যাপকই ফ্ল্যাটে থাকেন না। এসব ফ্ল্যাটের সংরক্ষণ বাবদ সরকারের বিপুল ব্যয় হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানা গেছে, দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টিতে কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট নেই। এগুলো হলো- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্‌ (বিইউপি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে না থাকার কারণ তুলে ধরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমার বিশ্ববিদ্যালয় একটি উপজেলায়। অধ্যাপক হিসেবে আমার মূল বেতনের ৪০ শতাংশ ৩০ হাজার টাকার বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার অতি পুরোনো ও জরাজীর্ণ। সেখানে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে থাকার চেয়ে দুমকী উপজেলা সদরে ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় আলিশান বাসায় বসবাস করতে পারছি। কেন তাহলে কোয়ার্টারে থাকব, বলুন?'

মফস্বল ও জেলা সদর থেকে দূরে স্থাপিত বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই একই দশা। পুরোনো কৃষি কলেজগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করায় অতি পুরোনো ভবনগুলোতে অধ্যাপকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে চান না।

জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেড-১ অধ্যাপকদের বেতন স্কেল ৭৮ হাজার টাকা। আর গ্রেড-২ অধ্যাপকদের ৭৩ হাজার ৪৯০ টাকা এবং গ্রেড-৩ অধ্যাপকদের মূল বেতন ৬৬ হাজার টাকা। একাধিক অধ্যাপক জানান, ঢাকার বাইরে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ার্টারে কেউই থাকতে চাইবেন না। অতি যুক্তিসংগত কারণেই এটি কমানো প্রয়োজন।

তারা বলেন, তা ছাড়া অধ্যাপকরা তাদের পদমর্যাদা অনুসারে ১৮৫০ বর্গফুটের বাসা কেউই পান না। সর্বোচ্চ ১৪০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের বাসা রয়েছে, তাও হাতেগোনা দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এত ছোট বাসায় থেকে বেশি ভাড়া তারা দিতে চান না।

ইউজিসি সূত্র জানায়, বেশি ভাড়ার পাশাপাশি নতুন করে সমস্যা বেধেছে বাসাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ফি নিয়ে। ৪০ শতাংশ বাসা ভাড়া কেটে রাখার পরও এই ফি দেওয়ার বিধান ছিল। ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারি বাসায় থাকার জন্য এই ফি কেটে রাখা হতো। দুটি স্লটে তা ভাগ করা ছিল। বেতন স্কেলের প্রথম থেকে নবম গ্রেডে কর্মরতদের জন্য সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ১০তম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত ৫ শতাংশ হারে রক্ষণাবেক্ষণ ফি দিতে হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বিপুল অর্থ ভাড়া হিসেবে দেওয়ার পরে বাড়তি এই অর্থ দিতে আপত্তি জানান। এতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ ফি মওকুফ করে দেয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট বিভাগ তা মানতে নারাজ। তারা অডিট আপত্তি দিয়েছে। এতে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিপুল অর্থের অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে।

দেখা গেছে, যেসব শিক্ষকের নামে অডিট আপত্তি এসেছে, তাদের অন্তত ৪০ শতাংশই অবসরে চলে গেছেন। এমনকি অনেকে তাদের সমুদয় পাওনাও নিয়ে গেছেন। ২০১৫ সালের নতুন জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর অবশ্য সরকার রক্ষণাবেক্ষণ ফি উঠিয়ে দেয়।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার তাদের সহকারী হাউস টিউটর, হাউস টিউটর, প্রক্টদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে বাসা বরাদ্দ দিয়েছে, ভাড়া কাটেনি। এ নিয়েও অডিট বিভাগ আপত্তি তুলেছে।

এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অডিট ও আইন) খালেদা আক্তার এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কোনো বিষয়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি অডিট আপত্তি উঠলে তা তদারকি করার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তাই ১০ কোটি টাকার বেশি অডিট আপত্তি ওঠায় তা অর্থ মন্ত্রণালয় সরাসরি তদারকি করবে। আর মফস্বলে বাসা ভাড়া তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বাস্তবতার নিরিখে একটি নীতিমালা করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অডিট ও আইন) খালেদা আক্তার এ কমিটির প্রধান। ইউজিসির সচিব এবং অর্থ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার দু'জন কর্মকর্তা কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন।

ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান বলেন, বাস্তবতার নিরিখেই ঢাকার বাইরে বিশেষ করে উপজেলা সদরে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাসা ভাড়া কমানো প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভায় একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খালেদা আক্তার বলেন, নীতিমালা হয়ে গেলে এ সংকট দূর হবে বলে তারা আশা করছেন।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004767894744873