ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ঝড়ে এখনো লণ্ডভণ্ড শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাবগুলো। ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক ও চিহ্নিত কয়েকজন জুয়াড়িকে গ্রেফতারের পর এক মাস অতিক্রান্ত হলেও স্বাভাবিক হয়নি ক্রীড়াঙ্গনের পরিবেশ। দীর্ঘদিন ধরে যেসব ক্লাব কর্মকর্তা এই ক্যাসিনো ও জুয়ার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ছিলেন, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ক্লাবপাড়া হয়ে পড়েছে নীরব, নিস্তব্ধ। রোববার (২০ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আনোয়ার আলদীন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১ অক্টোবর পেশাদার ফুটবল লিগের দলবদল শুরু হলেও উত্তাপ নেই ফুটবলপাড়ায়। ক্যাসিনো আক্রান্ত ক্লাবগুলো ছাড়া অন্য ক্লাবগুলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) গিয়ে খেলোয়াড়দের নিবন্ধন করাচ্ছে। তারা ঘর গুছিয়ে ফেলছে। প্রিমিয়ার লিগের কোনো কোনো দল ইতোমধ্যে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। ফুটবল অনুরাগীদের প্রশ্ন, ক্যাসিনো আক্রান্ত ক্লাবগুলো কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? খেলোয়াড় আর খেলা-সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো কোথায় যাবেন? গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনোতে অভিযানের পর আরো সাতটি ক্লাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার অবৈধ ব্যবসা ভেঙে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিলগালা করে দেয় মতিঝিলের আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ফকিরেরপুল, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র, ওয়ান্ডারার্স, কলাবাগান ক্লাব। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনো শেড সিলগালা করে দিলেও মূল অফিসটি পৃথক থাকায় বন্ধ করা হয়নি।
গ্রেফতার এড়াতে ক্যাসিনোসহ অপকর্মে জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ, ঢাকা মহানগরের কাউন্সিলরসহ প্রায় অর্ধশতজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এসব প্রভাবশালী নেতা খেলোয়াড় আর খেলা-সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোকে অধিকারে নিয়ে ক্লাবগুলো পরিণত করেছিলেন ক্যাসিনো আর মদ-জুয়ার আখড়ায়। অভিযানের পর মোহামেডান ক্লাব বাদে অন্য সাত ক্লাবের ফটকে এখনো তালা। কবে এই তালা খুলবে, কেউ বলতে পারছেন না। তবে একটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনো শেড ও রুমগুলো সিলগালা রেখে ক্লাবের খেলোয়াড়দের রুমগুলো খুলে দেয়া হতে পারে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে দলবদল ২০ নভেম্বর শেষ হলে ডিসেম্বরে ফেডারেশন কাপের মধ্য দিয়ে নতুন মৌসুমের পর্দা উঠবে। ১ জানুয়ারি শুরু হওয়ার কথা পেশাদার লিগ। স্বাধীনতা কাপ হবে লিগের মাঝে। আসন্ন লিগেও চার জন বিদেশি খেলতে পারবেন। নিবন্ধন করা যাবে পাঁচ জনের নাম। প্রিমিয়ার লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতোমধ্যে পাঁচ বিদেশিকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে পুলিশ ক্লাব। তারা অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। এদিকে ক্যাসিনো-কেলেঙ্কারিতে জড়িত পেশাদার লিগের মোহামেডান, আরামবাগ ও মুক্তিযোদ্ধা দল বিপাকে পড়েছে। দলবদল শুরু হলেও ক্যাসিনো-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ায় আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি ও অন্যতম অভিযুক্ত এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এখনো ফেরেননি সিঙ্গাপুর থেকে। মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে। তাই এ দুই ক্লাবের দলবদল কীভাবে হবে, তা কেউ জানে না। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাবেক ফুটবলার ও কর্মকর্তারা নিয়মিত বসছেন মোহামেডান ক্লাবে। কীভাবে আসন্ন প্রিমিয়ার লিগে দলবদল করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করছেন বলে জানালেন মোহামেডানের সাবেক অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ও স্থায়ী সদস্য মোস্তাকুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা ইতিমধ্যে ২২ ফুটবলারকে টোকেন মানির চেক দিলেও তাদের মধ্যে চার-পাঁচ জন ফুটবলারের চেক ফেরত এসেছে। এ বিষয়ে ক্লাবের ফুটবল ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। উনি দল গঠনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। আরামবাগের হাল কে ধরবেন, তা এখনো জানা যায়নি। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘেও তালা ঝুলছে। এই ক্লাবও ফুটবলে প্রিমিয়ার লিগে খেলে। তারাও সমস্যায় পড়েছে। কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলে। ক্লাবের লোকজন নিজেরা চাঁদা তুলে এখন দল গঠনের চেষ্টা করছেন।