মেয়েকে বকাঝকার অপরাধে ক্লাস চলাকালীন সময়ে শ্রেণীকক্ষে ঢুকে এক শিক্ষিকাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে অভিভাবক স্বামী-স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আড়পাড়া শিবনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঘটনার পর আহত শিক্ষিকা সুলতানা রিজিয়া নাছরিনকে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আপাতত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ওই মহল্লায় বসবাসকারী আবদুল আলিম ও তার স্ত্রী নুরজাহান এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে স্কুল চলাকালীন সময়ে শিশুদের সামনে শিক্ষিকাকে আঘাত করার সময়ে হইহুল্লোড় চেচামিচিতে শিশুদের মাঝে ভয়ানক ভীতির সৃষ্টি হয়। এ সময় ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে।
এ ঘটনার পর দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে তার সহকর্মীসহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েই কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ইতোমধ্যে আবদুল আলিমের স্ত্রী নুরজাহানকে আটক করেছে।
সরকারি আড়পাড়া শিবনগর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অর্চণা রাণী জানান, ঘটনার দিন সকালে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জুয়াইরিয়া লাবিবা নামের এক শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে মনযোগী না হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে সামান্য বকাঝকা করেন। দুপুরে ছুটির পর ওই শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যায়। এরপর দুপুর দুইটার পর ওই মেয়ের বাবা আবদুল আলিম ও তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলে প্রবেশ করে। ওই শিক্ষিকাকে মারধর করে হাত ভেঙে দেয়।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আবদুল আলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার সন্তানকে মারার কারণে তিনি শুনতে স্কুলে গেলে ওই শিক্ষিকা তেড়ে আসলে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় ওই শিক্ষিকা পড়ে গেলে তার হাতে আঘাত লাগে। তাকে কোনভাবেই মারা হয়নি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জানান, স্কুল চলাকালীন সময়ে আক্রমনাত্মকভাবে কিছু করা হলে তা দেখে ছোট ছোট শিশুরা ভয় পায়। ওই অভিভাবকের কোন কথা থাকলে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দিতে পারতেন। তা না করে স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষিকার গায়ে হাত তোলাটা ঠিক হয়নি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি জগদ্বীশ চন্দ্র জানান, স্কুল চলাকালীন সময়ে একজন শিক্ষকের উপর হামলা করে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়াটা অমানবিক এবং তা মেনে নেয়া যায় না। আমরা দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে বিকালেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরবর্তীতে সংগঠনের পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা জানান, আমি বিকেলে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর কালীগঞ্জ থানার ওসিকে জানিয়েছি বিয়টি আইনগত ব্যবস্থা নিতে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, ঘটনাটি জানার পর পুলিশ ইতোমধ্যে আবদুল আলিমের স্ত্রী নুরজাহানকে আটক করা হয়েছে। আর আবদুল আলিমকে আটকের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।