ক্লাসে ফিরতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। এর জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করেছেন। ক্লাসে ফিরতে গতকাল বুধবার ও আগের দিন তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তিনি 'আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন' লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরা রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন- তিনি শিক্ষকসুলভ আচরণ করেন না। শিক্ষার্থীদের কাছে বিভাগের অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করে থাকেন। এসব অভিযোগে সে সময় বিভাগে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। পরে বিভাগ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বিভাগের ৩১ জন শিক্ষক তার সঙ্গে কাজ করবেন না জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই তাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছুটিতে পাঠানোর চিঠি দেয় সিন্ডিকেট।
তবে রুশাদ ফরিদীর অভিযোগ, তাকে মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বিভাগের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রতিহিংসামূলকভাবে তার নামে অভিযোগ আনা হয়েছে। বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তিনি এর চেয়ারম্যানের কাছে সাতটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন।
তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে ভিসি, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর উকিল নোটিশ পাঠান। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাড়া না দিলে একই বছরের ১৩ জুলাই তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২৪ জুলাই সিদ্ধান্তটি কেন অবৈধ নয়, সেটি জানাতে উচ্চ আদালত রুল জারি করেন। এ বছরের ২৫ আগস্ট বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সিন্ডিকেটের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন এবং একই সঙ্গে তাকে কাজে যোগদান করারও নির্দেশ দেন।
তবে আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা বিভাগে পৌঁছেনি। এ অবস্থায় গত সোমবার তিনি রায়ের কপি ও যোগদানের কাগজপত্র বিভাগে জমা দিতে গেলে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া চিঠি রিসিভ করা যাবে না। তখন তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া চিঠি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে রুশাদ ফরিদী বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান চিঠি গ্রহণ না করার কারণে ক্লাসে ফিরতে পারছি না। প্রতিবাদস্বরূপ দু'দিন ধরে ক্লাসে ফেরার দাবিতে চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে অবস্থান করছি।
এ ব্যাপারে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিক উজ জামান বলেন, মামলা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে, বিভাগের সঙ্গে নয়। যদি কোনো কাগজ গ্রহণ করতে হয়, তাহলে তা গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
এ নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া। আদালতের আদেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলে আমরা পদক্ষেপ নেব।'