“আপনারা কে কিভাবে বদলির তদবির করেন তা আমার জানা আছে। কার কি যোগ্যতা তাও আমি জানি। নায়েমে পদোন্নতি বিষয়ক সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে আপনারা আজকে যা বললেন তাতে তো আপনাদের চাকরিই থাকে না। আজকে আপনাদের দেয়া বক্তৃতার সূত্র ধরে চাকরিচ্যূত করা যায় কিন্ত তা করছি না। তবে, ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হোন।” এভাবেই শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তাকে কঠোর বার্তা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) ফ্যাকাল্টিদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন শিক্ষামন্ত্রী। সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠানের শুরুতে নব নিযুক্ত মহাপরিচালককে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে মতামত ব্যক্ত করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুনা বিশ্বাস ও ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন এবং নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক।
বক্তৃতার সুযোগ পেয়ে নায়েমে প্রেষণে কর্মরত বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কল্যানী নন্দী ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। সম্প্রতি নায়েমের তিনজন স্থায়ী কর্মকর্তাকে বিধি মোতাবেক এসএসবির মাধ্যমে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমে তৃতীয় গ্রেড প্রদান করে সরকার। তিনজনের মধ্যে দুইজনকে নায়েমের পরিচালক পদে পদোন্নতি দিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই এসএসবিকে ‘অবৈধ’ ‘গোপন’ ও ‘রাতের আধাঁরে’ হিসেবে অভিহিত করেন কল্যানী নন্দী। মন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করে দেয়া বক্তৃতায় তিন পরিচালকের পদোন্নতি স্থগিত রাখার দাবী জানান কল্যানী।
কল্যানীর সুরে সুর মিলিয়ে প্রায় একইভাবে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তৃতা দেন অপর বি সি এস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কালাচাঁদ শীল। নায়েমে প্রেষণে কর্মরত এই কর্মকর্তাও প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত পদোন্নতি স্থগিতের দাবি জানান। রাতের আধাঁরে অযোগ্য লোকদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কালাচাঁদ শীল।
প্রায় একইসূরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন অপর বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা মামুনুল হক। নায়েমের উপ-পরিচালক পদে প্রেষণে কর্মরত শাহিদুর রহমান নায়েমের নিয়োগ বিধি নিয়ে কথা বলেন।
এ অবস্থায় মন্ত্রী বলেন, “আপনাদের কার কি যোগ্যতা, কিভাবে আপনারা ভালো ভালো পদে বছরের পর বছর থাকেন তা আমি জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত পদান্নতি নিয়ে আপনারা যা বললেন তাতে আপনাদের চাকরিচ্যুত করা যায়। ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হলো। ”
নায়েমের স্থায়ী কর্মকর্তা ও সম্প্রতি তৃতীয় গ্রেড পাওয়া পরিচালক ড. আতিকুল ইসলাম পাঠান তার বক্তৃতায় নায়েমে প্রেষণে কর্মরত শিক্ষা ক্যডার কর্মকর্তাদের ১৫/২০ বছর যাবত একই কর্মস্থলে চাকরি করার নানা ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন। বিদেশে প্রশিক্ষণে নায়েমের স্থায়ী কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার চিত্র তুলে ধরেন।
এর আগে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়েছে, শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কোনো সদস্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মী, অধ্যক্ষ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অশোভন, শিষ্টাচার বহির্ভূত ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন। এতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ না করে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত টকশোতে উপস্থিত হয়ে স্পর্শকাতর বক্তব্য দিচ্ছেন কিছু শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। এসব কার্যকলাপ কর্মচারি আচরণ বিধি ১৯৭৯, কর্মচারি শৃ্ঙ্খলা বিধি ১৯৮৫ এবং আইসিটি আইনের পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর অন্যথা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, সরকারি বেসরকারি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য নায়েম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গত কয়েকবছর যাবত শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক একজন এপিএসএর আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা নায়েমে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আারও পড়ুন:
তৃতীয় গ্রেড পেলেন নায়েমের ৩ জন : ফের বিশৃঙ্খলার চেষ্টা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের!
মহাপরিচালককে গালাগালি করে ফাঁসছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা