গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশে সঞ্চরণশীল ভাইরাস দ্বারা একটি কার্যকর টিকা উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) আওতায় এ গবেষণা পরিচালিত হয়। মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্ষুরা রোগ বাংলাদেশে গবাদি পশুর একটি অন্যতম প্রধান সংক্রামক ব্যাধি। বাংলাদেশে সঞ্চরণশীল ভাইরাস দ্বারা টিকা উদ্ভাবন প্রাণিসম্পদ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ও সুরক্ষায় এ টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ট্রাইভ্যালেন্ট টিকা তৈরিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং খামারি পর্যায়ে প্রতিমাত্রা টিকা ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ রোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়। এ রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত টিকা প্রধানত আমদানি করা হয়। এসব টিকা উৎপাদনে যে ভাইরাস ব্যবহৃত হয়, তা দেশে বিদ্যমান ভাইরাস থেকে ভিন্ন কিংবা সে টিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিজেন থাকে না। ফলে প্রায় সময় এগুলো কাজ করে না। উদ্ভাবিত এই টিকা বাংলাদেশে বিদ্যমান ক্ষুরা রোগের তিন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে গবাদি পশুকে অত্যন্ত সফলভাবে সুরক্ষা প্রদানে সক্ষম হবে এবং এর মূল্য বাজারে প্রচলিত ভ্যাকসিনের চেয়ে অনেক কম হবে।
তিনি আরো বলেন, এ গবেষণা পরিচালনার জন্য ল্যাব স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগকে দুইটি উপপ্রকল্পের আওতায় হেকেপ মোট ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ জন গবেষক এই উদ্ভাবনের সাথে জড়িত ছিলেন। এ উদ্ভাবনের প্যাটেন্টের জন্য এরই মধ্যে আবেদন করা হয়েছে।
ক্ষুরা রোগ গবাদি পশুর একটি অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগ, যাতে গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া-শুকরসহ অন্যান্য প্রাণী আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্ষুরা রোগের প্রতি সংবেদনশীল গৃহপালিত প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৫১ লাখ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) আওতায় এই টিকা উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু হয়। এজন্য ল্যাব স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগকে দুটি উপপ্রকল্পের আওতায় হেকেপ ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, হেকেপ পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহান্ত, ইউজিসির সদস্য ড. ইউসুফ আলী মোল্লা, ড. আক্তার হোসেন এবং ড. জাফর ইকবাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
পরে গবেষক দলের প্রধান ড. মো. আনোয়ার হোসেন টিকা উদ্ভাবন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।