বহুল আলোচিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়া হবে। তবে আদেশ হবে দুপুরে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেগম জিয়ার আবেদনটি আদেশের জন্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের কার্যতালিকার ৫ নম্বরে রাখা ছিল। যার ওপর শুনানি শেষে দুপুরে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত। এদিকে, খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মতি দেননি বলে জানান আদালত। মেডিকেল প্রতিবেদন পড়ার পর এ কথা জানানো হয়।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আজই আদেশ না দেয়ার জন্য আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশের দিন ঠিক ছিল।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল বুধবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। আর্থ্রাইটিসের উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দেননি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে গতকাল কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতা ও আইনজীবীরা। প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছেন সরকারপক্ষের আইনজীবীরাও। আবার যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আদেশকে কেন্দ্র করে সবার চোখ আজ উচ্চ আদালতের দিকে। খালেদা জিয়া কি জামিন পাবেন? নাকি আবেদন খারিজ হয়ে যাবে? এ নিয়ে জনমনে রয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি নেতা ও আইনজীবীরা বলছেন, ন্যায়বিচার পেলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে আশাবাদী। তবে দুদকের আইনজীবী বলছেন, তার জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সিলগালা প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বিএসএমএমইউর একজন আইন কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসংক্রান্ত সিলগালা করা প্রতিবেদন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের আদেশ প্রদানকারী বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদনের ওপর আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কেউ কেউ বলছেন, 'রাজনৈতিক সমঝোতা' হলেই কেবল খালেদা জিয়া জামিন পেতে পারেন। কেউ-বা বলছেন, স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে আদালতের আদেশ। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে টেলিফোন করায় সমঝোতার বিষয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেকে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থ্রাইটিসের উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দেননি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এর কারণ জানিয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রস্তুত করেছেন তার আইনজীবীরা। আজ বৃহস্পতিবার জামিন শুনানিতে আদালতের সামনে এ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। আইনজীবীরা জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে তাকে হাইকোর্টে সশরীরে হাজির করার জন্য আবেদন করা হবে।
অন্যদিকে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার আইনি কোনো ভিত্তি নেই। যখন শুনানি হবে, তখন তারা এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
এদিকে, আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার অধিকারী। তা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা আর দোষ চাপানো হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের ওপর। এটা হাস্যকর। বিএনপি নেতাদের উচিত তাদের নেত্রীকে রাজি করানো- যেন তিনি চিকিৎসা নেন।
এর আগে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার জন্য সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন চেয়ে আবেদন করেন। গত রোববার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে মেডিকেল বোর্ড চিকিৎসা শুরু করেছে কিনা এবং শুরু হলে বর্তমান অবস্থা কী- এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে জানাতে বিএসএমএমইউর উপাচার্যকে নির্দেশ দেন।
সেদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে খালেদা জিয়াকে সশরীরে আদালতে হাজিরের আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, ‘যদি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠানো না হয়, তাহলে জানি না আদালত সেটি কীভাবে নেবেন। তারপরও দেখব সরকারের কোনো প্রভাব রয়েছে কিনা। সে ক্ষেত্রে আদালতকে অনুরোধ করব, যেন সশরীরে হাজির করে দেখা হয়’।
আরও পড়ুন : খালেদা জিয়ার জামিন : আদালতের দিকে তাকিয়ে বিএনপি
যেভাবে মুক্তি পেতে পারেন খালেদা জিয়া
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আবারো জামিন আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া
প্যারোলে মুক্তিতে অনীহা খালেদা জিয়ার
জামিন পেলে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে পারেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি: ফখরুল
এ বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন ধারার চিকিৎসা। এ চিকিৎসা নিতে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সম্মতির প্রয়োজন। এটি ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা। হয়তো মেডিকেল বোর্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। ম্যাডামের সম্মতি না থাকলে এ ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আমরা চাই, তার সুচিকিৎসা হোক’।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা ও কৌশল নির্ধারণ করতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে সিনিয়র আইনজীবীরা গতকাল বুধবার বৈঠক করেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।