‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ ৪টি গ্রাম বেধে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট হঠাৎ করে একদল লোক এসে ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ করা জমি মেপে পিলার মাটিতে পুতে দিতে শুরু করে। তখন এলাকাবাসী ওই লোকদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জমির মধ্যে রায়ের মহল এলাকার আকমানের মোড় থেকে গুটুদিয়া ইউনিয়নের লাইন বিলপাবলা গ্রামের কাঁচনাপাড়া কাটাখালের পাশ দিয়ে খৈত্রবাড়ি হয়ে ধাইগ্রাম বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে খামারবাটি ও লতা গ্রাম হয়ে আড়ংঘাটা এলাকায় মিশেছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রস্তাবিত ১৫শ’ একর জমির মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে ৮ হাজারের অধিক বাসিন্দার মধ্যে অধিকাংশই সংখ্যালঘু সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস। ওই ৪ গ্রামে আবহমানকাল ধরে পিতৃপুরুষের ভিটায় বসবাসরত মানুষের সঙ্গে একাধিক মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি মন্দির, মসজিদসহ প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি অধিগ্রহণের ফলে বাপ-দাদার ভিটা হারানোর আশঙ্কায় চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তার পাশাপাশি বাস্তভিটা রক্ষার জন্যও ওই ৪ গ্রামের মানুষের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন অব্যাহত রেখেছে।
এ প্রসঙ্গে খামারবাটি এলাকার প্রভাষক সুকৃতি মন্ডল বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এত বিলান জমি থাকতেও আমাদের ৪টি গ্রামের মানুষ বসতভিটা হারাতে বসেছি।
লাইন বিলপাবলা এলাকার শিক্ষক দিপক কুমার বালা বলেন, বহুবছর আগে থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষরা এই বিল এলাকায় বসতি গড়ে তোলেন। এলাকার প্রায় সকলেই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন বাস্তচ্যুত হলে আমাদের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।
ধাইগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ী বিপুল মন্ডল বলেন, আমাদের গ্রামের দক্ষিণ পাশে ফাঁকা বিল থেকে জমি নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়, আমাদের গ্রামগুলোও বেঁচে যায়।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি মেম্বর কবিতা রাণী বিশ্বাস বলেন, শুধু আমাদের উচ্ছেদ না করে বিশ্ববিদ্যালয় বানাক।
খুলনা জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন বলেন, এলাকাবাসী আমার কাছে দরখাস্ত করুক। আমি যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবো।
খুলনা- ৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব, যাতে গ্রামগুলো বাদ দিয়ে ফাঁকা বিলের জমি নিয়ে বিশ^বিদ্যালয় হয়।