খুনিদের সঙ্গে ক্যাম্পাস ভাগাভাগি আর নয় - দৈনিকশিক্ষা

খুনিদের সঙ্গে ক্যাম্পাস ভাগাভাগি আর নয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

‘বুয়েটের মতো জায়গায় এ রকম ঘটনা কী করে সম্ভব’—গত কয়েক দিনের আন্দোলনে আমাদের সবচেয়ে বেশি শোনা বাক্য এটিই; যা বুয়েটকে নিয়ে মানুষের ধারণা ও প্রত্যাশারই বহিঃপ্রকাশ। তবে ‘বুয়েটের মতো জায়গা’ বলেই বোধ হয় নরপিশাচেরা শিক্ষার্থীদের বারবার নির্যাতনের পরও পার পেয়ে যাচ্ছিল। ভেতরে-ভেতরে এ সমস্যা এত বড় হয়ে উঠলেও এত দিন তা কারও নজরে পড়েনি। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, বিশ্বাস করা সত্যিই কষ্টকর যে দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবী ছেলেটা নিপীড়ক হতে পারে—নোংরা রাজনীতির জন্য তার ক্লাসমেট, বড় ভাই, ছোট ভাইকে পিটিয়ে স্টাম্প ভাঙতে পারে! কাজেই আমরাও আমাদের স্বাভাবিক বোধশক্তির ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতি থেকে চোখ ফিরিয়ে নিই। নির্যাতন করে শিক্ষার্থীর হাত ভাঙা, কানের পর্দা ফাটানোর মতো খবরগুলো নিয়মিত বিরতিতে গণমাধ্যমে এলেও আমরা তাদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখি না। এই অবজ্ঞারই ফলাফল আবরার ফাহাদ হত্যা।

বুয়েটের হলগুলোও আদতে দেশের বাদবাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে আলাদা নয়। এখানেও চলে নষ্ট ছাত্ররাজনীতির চর্চা, সিটের জন্য ধরনা দিতে হয় রাজনৈতিক বড় ভাইদের কাছে। হলে ঢুকতেই সবাইকে ধরিয়ে দেওয়া হয় এক আজগুবি ‘ম্যানারের লিস্ট’। বুধ-বৃহস্পতিবার রাতে ‘ভাইদের’ রুমে সবচেয়ে ছোট ব্যাচের ডাক পাওয়া নিশ্চিত। তবে কেবল এই নির্দিষ্ট সময়েই ডাক আসবে তা–ও নয়, যেকোনো সময়েই যেকোনো ‘ফল্ট’–এর কথা বলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। রুমের ভেতরে চলে বেধড়ক মারধর। আবার সাধারণ ছাত্রদের ছাদে তুলে পেটানোও বুয়েটের প্রাত্যহিক ঘটনা।

মারধরের ক্ষেত্রে লাঠি, স্টাম্প ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়; আর সঙ্গে রয়েছে নানা উদ্ভট ও আপত্তিকর শারীরিক শাস্তি। একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার করা প্রয়োজন, হলের এ ব্যাপারগুলোকে শুধু র‍্যাগ হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায় না। বরং তা পরিস্থিতির গভীরতাকে কমিয়ে দেয়। মূলত আমরা র‍্যাগ হিসেবে যে বিষয়টিকে চিহ্নিত করি, তা হলো শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়রদের দ্বারা জুনিয়রদের কোনো উদ্ভট বা আপত্তিকর আদেশ-নিষেধ পালনে বাধ্য করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও হতে পারে। কিন্তু বুয়েটের হলে আসলে ছোট-বড় সবাই এই নিপীড়নের শিকার। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অধিকার বা বাক্‌স্বাধীনতা হলগুলোতে নেই। যে কেউ ‘পলিটিক্যালদের’ বিরুদ্ধের কথা বললেই তাকে পিটিয়ে চুপ করানো হয়, নতুবা বের করে দেওয়া হয় হল থেকে। উদাহরণ আছে ব্যাচমেট ব্যাচমেটদের হাতে, এমনকি সিনিয়ররা তার জুনিয়র কিন্তু পলিটিক্যালদের হাতে বেধড়ক নির্যাতনের শিকার হওয়ার। আর এটার মূলে আসলে ছাত্ররাজনীতি, একটা অবারিত ক্ষমতার চর্চা। যে ছেলেটি ভালো ফল আর সুন্দর ক্যারিয়ারের স্বপ্ন নিয়ে হলে আসে, ক্ষমতার বলয়ে ঢুকে পড়লে তারও বিগড়ে যেতে খুব বেশি দেরি হয় না। বর্তমানে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির যে অবস্থা, তাতে কারও কোনো দায়বদ্ধতা বা নীতিবোধের জায়গা নেই। এটি শুধুই এখন একটা ‘শোম্যানশিপ’।

প্রথম বর্ষের একটি ছেলে যখন দেখে তার ‘পলিটিক্যাল’ বড় ভাই যা খুশি তা করে বেড়াচ্ছে, তাকে বলা-কওয়ার কেউ নেই, তখন সে অসহায় হয়ে চুপ করে যায় অথবা ক্ষমতার লোভে বিপথগামী হয়। এভাবেই এই ‘বাজে রাজনীতি’ ও নিপীড়ন চক্রাকারে চলতে থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিচারহীনতার ইতিহাস। বারবার আমরা বিচার দাবি করে পথে নেমেছি, প্রশাসনের কাছে এই ‘জানোয়ারদের’ শাস্তি দাবি করেছি—ফলাফল প্রতিবারই শূন্য। বরং প্রতিশ্রুতি পেয়ে আমরা হলে ফেরত যেতেই ফের শিকার হয়েছি নির্যাতনের। যে বা যারাই কথা বলেছে, তাদের হামলার মুখে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সুস্থ ছাত্ররাজনীতি বা অন্যান্য কোনো বায়বীয় শব্দের ওপর আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি না। খুনিদের সঙ্গে একই ক্যাম্পাস আমরা ভাগাভাগি করতে পারি না। স্বীকার করি, এত দিন আমরা মেনে নিয়েছি বলেই হয়তো এত বড় একটা ঘটনা ঘটাতে খুনিরা সাহস পেয়েছে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততার একটি বড় দায় রয়েছে ‘পলিটিক্যালদের’ হাতে এই অসীম ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হওয়ার পেছনে।

তবে আজ আমরা সমবেত হয়েছি আমার ভাইয়ের রক্তের শোধ তুলতে, সব অন্যায়–অবিচারের কালো হাত চিরতরে ভেঙে দিতে। তাই এই ক্ষমতার চর্চা আর মেনে নেওয়া হবে না, মেনে নেওয়া হবে না প্রশাসনের নীরবতা। আর তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এতে খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা যেমন সহজতর হবে, তেমনি ছাত্র নির্যাতনের মতো বাজে সংস্কতিগুলোকে দূর করাও সম্ভব হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার তাঁর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বুয়েট প্রশাসন চাইলে তাদের নিজ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। কাজেই এখন দাবি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন, তা হলো প্রশাসনের সৎসাহস ও সদিচ্ছা। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের ভাইয়ের খুনের বিচারসহ সব দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত মাঠে আছি। আমরা সবাইকে আমাদের পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এবং যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।

লেখকেরা বুয়েটের আন্দোলনরত ১২ শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048751831054688