খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয়েছে। শনিবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৯টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে কালোব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শোক র্যালি শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্থাপিত কালজয়ী মুজিব চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রার, ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাউপস্থিত ছিলেন।
পরে খুবিতে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এর পরপরই শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর উপাচার্য আইন ডিসিপ্লিন কর্তৃক পনেরই আগস্ট উপলক্ষে প্রণীত স্মরণিকা ‘অগ্নিগিরির অস্তাচলে’ এর ডিজিটাল ভার্সন উন্মোচন করেন।
সকাল ১১টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু : বাঙালির কান্ডারি’ বিষয় শীর্ষক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ওয়েবিনারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এ. কে. আজাদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মান্নান।
ওয়েবিনারে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতির স্বাধিকার, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তি।
আলোচনাকালে সকল বক্তাই দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন, পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের আগে দেশে কোনো সরকার বিরোধী আন্দোলন-বিক্ষোভ হয়নি। পনেরই আগস্টের রাতের হত্যাকাণ্ড ছিল একটি পরিকল্পিত নীল নকশা, গভীর ষড়যন্ত্র। এটা ছিল দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র, বঙ্গবন্ধু যাতে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আত্মনির্ভরশীল করতে না পারেন সেই দুরভিসন্ধি। সেদিন খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু এদেশের জনমানুষের হৃদয়ে, রক্তের সাথে, প্রকৃতির সাথে মিশে আছেন।
আলোচনা সভা থেকে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে এখনও যারা বিদেশে পলাতক আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির কলঙ্ক মোচনের দাবি জানানো হয়।
আলোচনা সভার সভাপতি উপাচার্য বলেন, যে আদর্শের মধ্যে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণ নিহিত থাকে সেই আদর্শ কখনও শেষ হয় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মধ্যে সেই চেতনা ছিলো বলেই তা কখনও ম্লান হবে না, তা চিরকাল এই দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর কাছে অম্লান হয়ে থাকবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। আলোচনা সভাটি ওয়েবিনারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়া বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।