মেয়েকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) পড়তে পাঠিয়ে কখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়নি। বলছিলেন অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দিতার বাবা রতন দত্ত। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করা ছাত্রসংগঠন না থাকাকে তাঁর অন্যতম স্বস্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। রতন দত্তের মতো কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্ররাজনীতির অনেক ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁরা চান না বিশ্ববিদ্যালয়ে তা থাকুক।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ইতিহাস জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র প্রফেসর ড. আনিসুর রহমান বলেন, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর ছাত্র-ছাত্রীরা তৎকালীন উপাচার্যের কাছে দাবি জানান, রাজনীতির নামে তাঁরা লাশের মিছিল আর অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখতে-শুনতে চান না। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এ দাবি মেনে নেওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
সেই থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর কেমন আছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়? পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ছাত্ররাজনীতির দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৫১ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। অথচ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতানুগতিক ছাত্ররাজনীতি না থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণহানি বা রক্তপাত ঘটেনি। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে সহিংসতার সুযোগ নেই বলেই ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় আছে বলেই মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তথাকথিত লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি চায় না। তিনি আরও বলেন, বিরাজমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভবিষ্যতেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ঢোকার কোনো সম্ভাবনা নেই।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কাসফী চৌধুরী মনে করেন, যেহেতু সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হচ্ছে না, তাই সরাসরি ছাত্ররাজনীতি না থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা বরং লাভবান হয়েছে।
সহিংসতামুক্ত ক্যাম্পাস : দলীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি অবস্থা জারি, সবাইকে হল ত্যাগের নির্দেশ, বিগত ২৮ বছরে এসব দৃশ্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখতে হয়নি। দুই যুগের বেশি সময়ে কখনো অভ্যন্তরীণ ছাত্র কোন্দলের মুখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অচলাবস্থায় পড়তে হয়নি। দলীয় কোন্দলে ও নোংরা রাজনীতির ছোবলে পরে ক্যাম্পাসে কখনো রক্তের দাগ লাগেনি। বরং একটি পরিবারের মতোই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি। যৌক্তিক সব আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে।
হল রোডের ভাই ভাই রেস্তোরাঁর মালিক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পাঁচ বছর ব্যবসা করি। ছাত্র ভাইরা সাধারণত বাকিতেই খায় না। চাঁদাবাজি আর কী করবে!’