খুলনা মেডিকেল কলেজে রোগী না দেখেই নেগেটিভ সনদ! - দৈনিকশিক্ষা

খুলনা মেডিকেল কলেজে রোগী না দেখেই নেগেটিভ সনদ!

খুলনা প্রতিনিধি |

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু হাসপাতালের নিবন্ধন খাতায় স্পষ্ট ঠিকানা না থাকায় তাঁকে খুঁজে পেতে বিপাকে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন। প্রথমে জানানো হয়, ওই ব্যক্তি জেলার রূপসা উপজেলার কালীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু সেখানে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে ওই ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল থাকায় রূপসা উপজেলার এক সাংবাদিকের করোনা আক্রান্তের গুজব রটে। এতে বিপাকে পড়েন ওই সাংবাদিক ও তাঁর পরিবার। পরবর্তী সময়ে প্রকৃত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মেলে নগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশায়। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

খুলনার সরকারি হাসপাতালগুলিতে আসা রোগীদের অস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না লেখায় প্রতিনিয়ত এমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ গত রোববার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআরে করোনা পজিটিভ আসা একই পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। তাঁরা বর্তমানে খুলনার করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের রোগী নিবন্ধকরা নিজেদের কষ্ট লাঘবে দিনের পর দিন এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ব্যক্তি হাসপাতালের আসা রোগীদের নাম-ঠিকানা কোনো রকমে লিপিবদ্ধ করে দায়িত্ব শেষ করেন। অন্যদিকে এখানে রোগী না দেখে করোনা নেগেটিভ সনদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, হাসপাতালে নাম নিবন্ধনকারীরা (বিশেষ করে খুলনা মেডিকেল কলেজের ফ্লু কর্নারে) দূর থেকে নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর নেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কাজটি সংক্ষেপে শেষ করেন। এতে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। আবার রোগী না দেখে অনেক কর্মরত চিকিৎসক করোনাভাইরাস নেগেটিভ লিখে দিচ্ছেন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেমনটি হয়েছে রোববার শনাক্ত হওয়া একই পরিবারের তিনজনের ক্ষেত্রে। তাঁরা গত ২৯ মে তাঁদের করোনা নেগেটিভ ছাড়পত্র নেন। ওই দিন তাঁরা ফ্লু কর্নার থেকে হাসপাতালের মেডিসিন সাধারণ ওয়ার্ডে অবস্থান নেন। এক দিন পর তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। তাঁদের ঠিকানা খুলনা নগরের শেখপাড়া হলেও সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়েও তা পায়নি। তাঁরা নিজেরা আবার গত সোমবার সকালে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে উপস্থিত হন। পরে তাঁদের করোনা রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা পরিচয় গোপন করে ঠিকানা নগরীর শেখপাড়া উল্লেখ করেন।

এর আগে গত ১৭ মে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে রোগীদের করোনামুক্ত সার্টিফিকেট দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগে আউটসোর্সিং কর্মচারী আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিরাপত্তাকর্মী আরিফুল ইসলাম কয়েকজনকে ৫০ টাকার বিনিময়ে করোনামুক্ত সার্টিফিকেট এনে দেন। এতে লেখা ছিল, ‘এই রোগী বর্তমানে সুস্থ, ভবিষ্যতে জ্বর-সর্দি ও কাশি হলে যোগাযোগ করবেন।’ ওই সার্টিফিকেট পেতে শ্রমিকদের চিকিৎসকদের কাছে যেতে হয়নি। তা ছাড়া সার্টিফিকেটে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সিল-স্বাক্ষরও ছিল।

নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো. মোনতাজুল হক বলেন, কোনো রোগী হাসপাতালে তথ্য গোপন করলে অনেক ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়। সম্প্রতি তিন রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে। এ জন্য রোগীকে তাঁর সুচিকিৎসার জন্য সঠিক ঠিকানা দিতে হবে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও খুলনা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ রোগীর ঠিকানা গ্রহণে ত্রুটির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়কে বলেছি। হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রয়োজনে কাউন্টার বাড়াতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অবহেলা বা ত্রুটির সুযোগ নেই। রোগীর পরিষ্কার ঠিকানা, প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।’

চিকিৎসক নেতা মেহেদী নেওয়াজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া করোনা নেগেটিভ লিখে সার্টিফিকেট প্রদান বিষয়ে বলেন, ‘কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর দায় এড়াতে পারবেন না। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

তবে এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066108703613281