দশ বছর আগে আয়লার ভয়ঙ্কর স্মৃতি উসকে দিয়ে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ক্রমশ গতিপথ বদলে তীব্র শক্তি নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে। শুধু তাই নয়; যে হারে শক্তি বাড়াচ্ছে বুলবুল, তাতে আয়লার ধ্বংসযজ্ঞকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করেছে। এর ফলে প্রাথমিকভাবে শনিবার মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দিকে আছড়ে পড়ার কথা থাকলেও তার আগেই অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যা কিংবা তার পরপরই আঘাত হানতে পারে বুলবুল।
বাংলাদেশ আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে ছুটে আসছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুল উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার আগে শনিবার সকাল থেকে বাগেরহাটের মোংলা ও পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হলেও কক্সবাজারে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখা বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় শনিবার সন্ধ্যার দিকে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। যদিও এর আগে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানতে পারে শনিবার মধ্যরাতে। কিন্তু সময়ে সময়ে গতিপথ ও শক্তি পাল্টে দ্রুত এগোতে থাকায় শক্তিশালী এই ঝড় শনিবার সন্ধ্যায় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ তখন ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে উপকূল অতিক্রম করার সময় এর শক্তি কিছুটা কমতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে চলা এই ঘূর্ণিঝড় ওড়িশার কাছাকাছি পৌঁছে ফের বদল করবে তার গতিপথ। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে বুলবুল। এরপর উপকূলবর্তী অঞ্চলে তাণ্ডব চালানোর পর এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১১৫ কিলোমিটার থাকলেও ১৩০-১৩৫ কিলোমিটার বেগেও তাণ্ডব চালাতে পারে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে ইতোমধ্যে মাঝারি ও কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।