শিক্ষাকে আমরা শিক্ষণ হিসেবে ধারণ করতে পারি না, আমাদের দেশে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব। শিক্ষা নিয়ে আমাদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই, তবুও যেন উন্মোচিত হয় না এর বিশেষ দিকটি।
অনুধাবনে আমরা ব্যর্থ হই মূলত শিক্ষার মূল নিহিতার্থ অর্থটি বের করতে না পারায়। শিক্ষার সঙ্গে বাস্তবতার প্রেক্ষাপট মেলাতে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক গবেষণা। মঙ্গলবার (২১ মে) দৈনিক ইত্তেফাক প্রত্রিকায় এ নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। নিবন্ধনটি লিখেছেন আমজাদ হোসাইন হৃদয়।
শিক্ষা নিয়ে সুদূর অতীতেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং যার ধারা বর্তমানেও চলমান। তবে আমাদের দেশে বাস্তবমুখী ও কার্যকরভিত্তিক শিক্ষার স্বরূপ এখনো পর্যন্ত নিরূপিত হয়নি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শিক্ষা নিয়ে যে প্রকৃত গবেষণার দরকার ছিল এখনো পর্যন্ত সে সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কিভাবে বাস্তবসম্মত শিক্ষা ও কার্যকরভিত্তিক শিক্ষা গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে লক্ষণীয় যে, শিক্ষার হার প্রায় ৬৩ শতাংশ কিন্তু বাস্তবসম্মত না হওয়ায় শিক্ষা, চিকিত্সা এবং অন্যান্য খাতে অন্য দেশের বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে, যা বলা যায় মেধা আমদানি। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে আমরা হতে পারি অন্য দেশের মডেলস্বরূপ। তবে আশারবাণী বর্তমানে এই ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে ব্যানবেইস, নায়েম, প্লানিং কমিশন, বিআইডিএসসহ বেশ কিছু সংস্থা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।
শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশের উন্নয়নে গবেষণার প্রয়োজন অনেক। শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণা প্রয়োজন। তাই আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা শেষে গবেষণায় নিয়োজিত হতে হবে।’ শিক্ষা গবেষণা হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। যাতে এর গবেষণা গুণগত মানসম্পন্ন ও ফলাফল গ্রহণযোগ্য হয়।
ইউরোপিয়ান এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা গবেষকদের গ্রুপ রিসার্চ করতে অনুপ্রাণিত করে। উক্ত রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন শিক্ষাবিষয়ক গবেষকদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপের কাউন্সিল অব এডুকেশন, ওইসিডি এবং ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সংক্রান্ত রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন ও ইনস্টিটিউটকে এই শিক্ষা গবেষণা একসঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে।
আর এগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ, তার প্রচার ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান করে। শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণায় শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মৌলিক ও ফলিত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনো একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতে পারে। এই গবেষণায় শিক্ষার বিভিন্ন দিক যেমন শিক্ষণ শিখন, শিক্ষাদান পদ্ধতি,
শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তনশীলতাসহ অনেক ক্রিটিক্যাল ইস্যু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এছাড়া সময়ের সঙ্গে শিক্ষার পরিবর্তনের গতিধারা কী হবে তাও নির্ধারিত হতে পারে শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাস্তব ও কার্যকরভিত্তিক শিক্ষাই হবে ট্রাম্পকার্ড। তাই আমাদের এই দিকে সুনজর দেওয়া প্রয়োজন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়