‘গাড়ি সেবা প্রকল্প’ এখন সরকারের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈষম্যমূলক এক নীতিমালার ভিত্তিতে চালু করা এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তা। কিন্তু বৈষম্যমূলক নীতিমালার কারণে হাজার হাজার কর্মকর্তা এই সুবিধার বাইরে থাকছেন। ফলে এ নিয়ে আন্ত:ক্যাডার ক্ষোভ দানা বাঁধছে প্রশাসনে।
প্রাধিকার অনুযায়ী ইতিপূর্বে সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সরকারি খরচে একটি পদবিশেষ দুটি করে গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি যান অধিদপ্তর থেকে গাড়ি কিনে তা কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য দেয়া হতো এবং এখনো হচ্ছে।
২০১৭ সালে সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি ক্রয় এবং পরিচালন বাবদ কিছু অর্থের সরবরাহ করে আসছে সরকার। সরকারের ভাবনা ছিল কর্মকর্তাদের গাড়ি কিনতে সুবিধা দেয়া হলে যানবাহন অধিদপ্তর থেকে আর গাড়ি সরবরাহের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা ঘটছে উল্টো। বেশিরভাগ কর্মকর্তা পুলের গাড়িও নিচ্ছেন আবার সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়িও কিনছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুইভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রশাসনের বাইরে থাকা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। যেমন তারা পুলের গাড়ি পান না আবার সুদমুক্ত গাড়ি কেনার সুযোগ তাদের জন্য রহিত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের নীতিমালার (আ) উপধারা অনুযায়ী বিসিএস ইকনোমিক ক্যাডারের যুগ্ম প্রধান বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা ( যাদের বেতন স্কেল যুগ্ম সচিবের সমান) লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফট) থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য গাড়ির সুবিধা পান, চুক্তিতে নিয়োজিত, প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়।
অপরদিকে ২০১৭ সালের ২০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন শাখার জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকারের উপসচিবদেরকেও সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন সর্বশেষ ঘোষিত ৮ম বেতন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী সকল সরকারি চাকরিজীবীর পরিচয় হবে কর্মচারি হিসাবে। আর পদমর্যাদা নির্ধারিত হবে বেতন স্কেল অনুযায়ী। বিদ্যমান বেতনক্রম অনুযায়ী উপসচিবরা (যারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন) ৪র্থ গ্রেডের বেতন স্কেলভুক্ত। পর্যায়ক্রমে যুগ্ম সচিব ৩র্থ গ্রেড, অতিরিক্ত সচিব ২য় গ্রেড এবং সচিব ১ নম্বর গ্রেডভুক্ত বেতন স্কেল প্রাপ্ত। কিন্তু একই বেতন স্কেলধারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আরও যে ২৬টি ক্যাডারের কর্মচারি রয়েছেন, তারা পুলের গাড়িও পাচ্ছেন না আবার সরকারের গাড়ি সেবা প্রকল্পের সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। অর্থাত্ বেতন কমিশনের প্রতিবেদন উপেক্ষা করে বৈষম্যমূলক ওই নীতিমালা করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ আর প্রতিমাসে গাড়ি পরিচালন ব্যয় বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তথ্য, কৃষি, ইকনোমিক, ট্যাক্স, অডিট, টেলিযোগাযোগ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, চিকিত্সক ইত্যাদি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই সুবিধা বঞ্চিত। ফলে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্যান্য ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পূর্বসৃষ্ট বৈষম্য এখন বড় ধরনের বিরোধ তৈরি করেছে।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক