গুণগত শিক্ষা বাস্তবায়নে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করতে শিক্ষাকে সরকারিকরণ প্রয়োজন - দৈনিকশিক্ষা

গুণগত শিক্ষা বাস্তবায়নে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করতে শিক্ষাকে সরকারিকরণ প্রয়োজন

মো. সবুর আহাম্মদ খান |

আমি একটি কলেজের রসায়ন বিষয়ের প্রভাষক। শিক্ষকতা পেশায় অনেক আশা নিয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে যোগদান করি। শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল হবে এবং এমপিও শিক্ষকদের বঞ্চনার অবসান ঘটবে এটাই শিক্ষকতায় আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু স্বতন্ত্র বেতন স্কেল তো হলোই না, উল্টো ২০১৫ স্কেল প্রদান করার পর অবসর ও সুবিধা বোর্ড কোনো সুবিধা ছাড়া অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করে শিক্ষকদের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা এবং ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া বর্তমান যুগে কল্পনা করা যায়?  এরপরও আমরা গুণগত শিক্ষা কি দিয়ে আশা করি?

বিশেষ করে কলেজ প্রভাষকদের অভিশপ্ত অনুপাত প্রথা আরেকটি কষ্টদায়ক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের ছাত্র নতুন কলেজে যোগ দিয়ে সহকারী অধ্যাপক হন আর শিক্ষক তার কলেজে প্রভাষক হিসাবে অবসরে যান। আমি মনে করি এই অপমানের চেয়ে একজন শিক্ষকের জন্য মৃত্যু শ্রেয়। সুতরাং গুণগত শিক্ষা চাইলে অভিশপ্ত অনুপাত প্রথা বাদ দিয়ে প্রভাষকদের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি করা উচিত। তা না হলে রাষ্ট্র যদি কাজের স্বীকৃতিই না দেন তাহলে গুণগত শিক্ষা আশা করবে কি দিয়ে।

আর শিক্ষকদের প্রায় ১৬ বছর আগে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্ধারিত ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দেয়া উচিত। কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বিলুপ্ত করে পেনশন ব্যবস্থা চালু করা উচিত। কারণ, কল্যাণ ও অবসর সুবিধা পেতে পেতে অনেক শিক্ষকের মৃত্যু হয়। যেমন কিছুদিন আগে একজন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে এই সুবিধা না পেয়ে। এটা কতটা অমানবিক রাষ্ট্রই বিচার করবে। শিক্ষকতা করে যদি জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা না পায় তাহলে এই শিক্ষকতা পেশায় ভালো শিক্ষক আসবে না। আর যারা এসেছে তারা উৎসাহ হারাবে। ফলে যত নীতিমালাই আমরা করি না কেন এর ফলাফল শূন্য হবে।

আসল কথা হলো শিক্ষাকে সরকারিকরণ ছাড়া কখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে না। বৈষম্যহীন শিক্ষার একমাত্র সমাধান সরকারিকরণ। স্বাধীনতার পরপর জাতির পিতা যদি রাষ্ট্রের কল্যাণের কথা ভেবে অর্থনৈতিক সংকট সাপেক্ষেও ৩ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করতে পারে তাহলে বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া স্বত্বেও কেন আমরা শিক্ষাকে সরকারিকরণ করতে পারছি না?

আমি মনে করি, এখানে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব, না হয় শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করে এমন কিছু ব্যক্তির অপকৌশল রয়েছে। শিক্ষা সরকারিকরণের আদর্শ সময় হচ্ছে মুজিব শতবর্ষ। একশ বছর পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও থাকবেন না, আমরাও থাকব না। ফলে এদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা স্মৃতিকে স্বর্ণাক্ষরে জাতির হৃদয়ে লিখে রাখতে শিক্ষা সরকারিকরণ করুন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারিকরণের প্রয়োজনীয়তা গুণগত শিক্ষার জন্য, বৈষম্যহীন শিক্ষার জন্য এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য। আমি আশা করবো জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে শিক্ষাকে সরকারিকরণ করে ১৮ কোটি জনগণের চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দেবেন।

লেখক : মো. সবুর আহাম্মদ খান, প্রভাষক, রসায়ন বিভাগ, পয়ালগাছা পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067579746246338