গ্যাং কালচার এবং করণীয় - Dainikshiksha

গ্যাং কালচার এবং করণীয়

পলাশ রায় |

ভারতবর্ষের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ বা তরুণদের ভূমিকার শেষ নেই। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ৭০ এর নির্বাচন এবং সর্বোপরি একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্র কিংবা তরুণ সমাজই ছিল প্রাণ। এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, সব সময় মুক্তির মিছিলে তরুণ সমাজ ছিল অগ্রভাগে, ছিল চেতনার ধারক-বাহক। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে সে ইতিহাস যেন উপহাস করে বলে ওঠে ‘আবার তোরা মানুষ হ’। আমার আজকের এ লেখার বিষয় ইতিহাসের শোক আর গর্বগাঁথা সে অধ্যায় নয়। রাজধানীসহ দেশের জেলা উপজেলায় গড়ে ওঠা বন্ডবাহিনীর ভয়ঙ্কর দৌরাত্ম্য নিয়ে অঙ্গতির কিছু বিয়ষ আমাকে অনেক দিন ধরেই পীড়া দিচ্ছে, করছে বেদনাহত।

বরগুনার বন্ডবাহিনীর কথা সারাদেশের মানুষের কাছে এখন আর অজানা নয়। শনিবার রাজধানীর রায়ের বাজার থেকেও ধরা পড়ে ১৭ গ্যাং কিশোর। যাদের পেশা ছিনতাই, চাঁদাবাজি কিংবা প্রতিপক্ষের সাথে খুনোখুনি। সারাদেশে জেলায় জেলায় এমনকী উপজেলাগুলোতেও এমন গ্যাং কালচার গড়ে ওঠেছে। একটা বিষয় লক্ষ করলে দেখা যাবে, গত ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি জোট সরকারের আমল থেকেই এ গ্যাং কালচারের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। আর সে থেকেই অপ্রতিরোধ্যভাবে চলছে কিশোর-তরুণদের এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতি। গণমাধ্যমসহ সামাজিক মহলেও এ গ্যাং কালচারের জন্য অনেক সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন। অঘটন ঘটলে তাই পুলিশ দিশেহারা হয়ে যায়। চলে চিরুনি অভিযান। ধরা পড়ে শীর্ষস্থানীয় গ্যাংয়ের তরুণ-কিশোররা। কিন্তু আসলেই কী পুলিশ এ ঘটনায় দায়ী বা তারা কতটা দায়ী, সে বিষয় কী কেউ খতিয়ে দেখেছেন? বর্তমান সময়ে দেশের পুলিশ অনেক আধুনিক। সমরাস্ত্র, প্রযুক্তি, জনবল এবং দাপটেও। তাদের গ্যাং পালতে হয় না। এখন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে তবে, সারাদেশে গ্যাং কালচার কেমন করে বিস্তার লাভ করছে?

এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, এদেশের প্রশাসন অনেকটাই রাজনৈতিক দল বা প্রভাবশালীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বরগুনার এক বন্ডবাহিনীর দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। সারাদেশে আমরা ছোট বড় যেসব বন্ড বাহিনী দেখছি সেগুলো আসলে রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এবং নিজের অবৈধ প্রভাব বিস্তারে, দখলদারিত্বে নেতারা এসব বন্ড বাহিনী গড়ে তোলেন। আর তার বলি হয় দেশের অগণিত কিশোর তরুণরা। ভালো করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বন্ডবাহিনী প্রধানসহ দলের সদস্যদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এরমানে যারা আসলে বাঁধনহারা সংসারের চিন্তা-ভাবনা বা দায়িত্বমুক্ত এবং সর্বোপরি ওদের অপরিপক্ক মস্তিষ্ককে সহজেই বিপথগামী করা যায় বলে দেশের তরুণ-কিশোরদের নিয়ে এ গ্যাং তৈরি করেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা।

বর্তমান সময়ে বিরোধী দলকে তেমন একটা দমন করতে হয় না। এজন্য পুলিশই যথেষ্ট। কিন্তু পুলিশ দিয়ে নিজ দলের প্রতিপক্ষকে দমন করাটা আবার অনেকটা অসম্ভব। তাই এই গ্যাং গড়ে উঠেছে একই রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায়। আর যে কারণে পুলিশের পক্ষে এ গ্যাং কালচার প্রাথমিক পর্যাযয়ে দমন করা সম্ভব হয় না। যখন বিষফোঁড়ার আকার ধারণ করে তখন পুলিশকে কঠোর হতে হয়। কিন্তু তাও ওই গ্যাং দলের সদস্য পর্যন্ত। তাদের নেপথ্যের গডফাদার অধরাই থেকে যান। যার ফলে বরগুনার মতো ঘটনা ঘটলে গ্যাং কালচার কোথাও কোথাও সাময়িক বন্ধ থাকে মাত্র।

না আমি কেবল সমস্যা বা তার কারণ ঈঙ্গিত করেই আমার লেখা শেষ করতে চাই না। এ গ্যাং কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরতে চাই। অবশ্য দেশের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টিতে পড়বে কিনা তা যথেষ্ঠ সন্দেহের বিষয়।

দেশের রাজনীতিতে কিশোর তরুণ বয়সের অর্থাৎ ২০ বছরের কম বয়সের ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। রাজনৈতিক আন্দোলন, শিক্ষাসংক্রান্ত কিংবা গঠনমূলক যে কোনো আন্দোলন, দাবি, সভা-সমিতি বা প্রতিবাদ গঠনমূলক ভাষা আর কার্যক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো পরিচালিত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। সকাল-সন্ধ্যার পর কোনো ছাত্রসংগঠন তাদের রাজনৈতিক বা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। দেশের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ২০ বছরের কম বয়সের তরুণ-কিশোর অংশ নিতে পারবে না। এখানে কথা উঠতে পারে দেশের সব কিশোর-বা তরুণ কী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়ার সুযোগ পাবে? যারা পাবে না তারা কী করবে? উত্তর একটাই, ছাত্রসংগঠন কেবল ছাত্রদের জন্যই আর তা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক। যারা শিক্ষার্থী নয় তাদের ২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে। আর সেখান থেকে সাংগঠনিক দক্ষতায় নেতা হওয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের জন্য। এ প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন সমাজের গ্যাং কালচার রোধ হতে পারে বলে আমার ধারণা।

পলাশ রায় : সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011748075485229