গ্রন্থাগার অতীত ও বর্তমান শিক্ষা-সংস্কৃতির সেতুবন্ধন - দৈনিকশিক্ষা

গ্রন্থাগার অতীত ও বর্তমান শিক্ষা-সংস্কৃতির সেতুবন্ধন

মাছুম বিল্লাহ |

দেশের গ্রন্থাগারগুলোকে এক নতুন অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত করার নিমিত্তে এবং সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান গ্রন্থাগার, বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত গ্রন্থাগারের মধ্যে একটি কার্যকর এবং ফলপ্রসূ সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথম জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়। এবার পালিত হচেছ তৃতীয় জাতীয় গ্রন্থগার দিবস। ‘পড়বো বই, গড়বো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ তৃতীয় জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের শ্লোগান বা প্রতিপাদ্য।

গ্রন্থাগার হচ্ছে সভ্যতার বাহন। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রন্থাগারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তাই, এ দিনটিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে প্রথম ঘোষণা করা হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। তবে, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি একটি কৃতিত্ব পাওয়ার দাবিদার। কারণ জাতীয় পর্যায়ে একটি গ্রন্থদিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম ব্র্যাক  শিক্ষা কর্মসূচিই থেকেই আসে। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন শুরু করেছে। এজন্য সরকার বিশাল ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি প্রায় তিন হাজার গণপাঠাগার গড়ে তুলেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যাদের ইচ্ছে থাকলেও সহজে বই পড়ার সুযোগ ছিল না। গণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বই তাদের হাতের নাগালে নিয়ে এসেছে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি।

অধিকাংশ গণকেন্দ্র যেহেতু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই গ্রামীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। গ্রন্থাগার অতীত ও বর্তমান শিক্ষা-সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। কারণ গ্রন্থাগার মানবজাতির শিক্ষা, রুচিবোধ ও সংস্কৃতির কালানুক্রমিক পরিবর্তনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। একটি জাতি এবং তার ভবিষ্যত বংশধররা গ্রন্থাগারের মাধ্যমে তার অতীত ইতিহাস জানতে পারে, উজ্জীবিত হতে পারে নতুন প্রত্যয়ে।

প্রতিদিন বই পড়লে জানা যায় নতুন কিছু। কাজে মন না বসলে মনকে কেন্দ্রীভূত করা প্রয়োজন আর সেটি করতে পারে বই। কোনো বিষয়ের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী ও ফোকাসড হতে বই পড়ার জুড়ি নেই। বৃদ্ধ বয়সে অ্যালঝাইমার্স সিনড্রোমের মতো স্মৃতিভ্রম রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি যাদের বই পড়ার অভ্যাস নেই। বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় জানা যায় যে, বইয়ের সম্ভাব্য বাস্তবতা ও কল্পনা পাঠকের মনে নতুন আবেগ ও অনুভূতি সৃষ্টি করে। যা তাকে অন্য সংস্কৃতির মানুষকে বোঝা ও তাদের প্রতি সহমর্মী হতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ ও অশান্তি দূর করতে হলে বই পড়তে হবে। ফেলুদা, ব্যোমকেশ কিংবা শার্লক হোমসের মতো ডিটেকটিভ উপন্যাস পাঠকের বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার উন্নতি ঘটায়। একজন চিত্রশিল্পী অনুপ্রেরণা পায় বিখ্যাত চিত্রশিল্পিদের রেখে যাওয়া চিত্রকর্ম থেকে। তেমনি একজন লেখক বিখ্যাত সব লেখকদের লেখা পড়ে নিজে সাহিত্য সৃষ্টির স্পৃহা পান। একজন ভালো পাঠকই একজন ভালো লেখককে পরিণত হতে পারেন।

নিয়মিত বই পড়লে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। ফলে, অন্যের সাথে কথা বলার সময় স্বাভাবিকভাবেই নাানান যুক্তি, উদাহরণ ও উক্তি ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জিত হয়। যা নিজেকে অন্যের কাছে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। বই সহজ জীবনের দুয়ার খুলে দেয়। জীবনকে সুন্দরভাবে বাঁচতে বই হয়ে ওঠে প্রধান সঙ্গী। শত ব্যস্ততার মাঝে কিছুট স্বস্তির খোরাক হতে পারে প্রিয় কোনো বই। বই ভালো বন্ধু, এই শ্লোগানের মাধ্যমে পাঠক তৈরি করা যায়। একজন পাঠক তৈরি করতে পারেন একাধিক পাঠক। সুপরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে নতুন পাঠকের মাঝে বই পড়ার নেশা একবার তৈরি করে দিতে পারলেই হয়। একখানা বই পড়ে একাধিক লোক যদি তা নিয়ে আলোচান করে, তবে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য। এতে করে বেশ কিছু ভালো পাঠক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমাদের হৃদয়কে প্রসারিত করার, স্বপ্নকে বিশাল করার নিমিত্তে আমাদের বই পড়তে হবে, পড়াতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে। সামাজিক নানা অনাচার, উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, বইয়ের পরিবর্তে অস্ত্রের ঝণঝনানি, রাজনীতির নামে বর্বরতা যা গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হতে পারে বই পড়া, বই পড়ানো, বইয়ের জগতে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে ডুবিয়ে রাখা। নেতৃত্বের বিকাশ শুধু কথা বলার দ্বারা হয় না, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জ্ঞানভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাবে নেতা হওয়ার উপায় হচ্ছে সন্ত্রাস করা, অন্যকে ভীতি প্রদর্শন করা, শক্তি প্রদর্শন করা। তাই তারা বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। তাদেরকে আবারও বই পড়াতে হবে। পাঠক এখনও বই পড়ে তবে তারা পড়তে চায় স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই। নতুন লেখকদের ভেতরেও অনেক প্রতিশ্রুতিশীল লেখক আছেন। দেশের লাইব্রেরিতে তাদের বইয়ের সংগ্রহ থাকলে পাঠকরা তা পড়তে পারেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক, ব্যস্ত এবং ক্যরিয়ার অরিয়েন্টেড। তাই তারা, বই কম পড়তে চান। যাও পড়তে চান তাড়াহুড়ো কর হাতের মুঠাফোন খুলেই পড়ে ফেলেন। কাগজের বইয়ের জন্য অপেক্ষা করেন না বা প্রয়োজনও মনে করেন না। তারপরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রতি বছর বই মেলা হয়, মোটামুটি ভালো পরিমানে বই বিক্রি হয়। এটি পজিটিভ দিক। তার সাথে যুক্ত হলো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। চমৎকার একটি উদ্যোগ। এই উদ্যোগ সকলের দোরগোড়ায় নিয়ে যাবে বই। দেশের সব ধরনের লেখকদের দেশ, সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য, মানবিকতা নিয়ে চিন্তার নির্যাস পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে দেশের সর্বত্র এবং সব ধরনের মানুষের কাছে।

ব্যাপক মুক্তজ্ঞানের চর্চা প্রয়োজন বর্তমান সমাজে যা শুধু পাঠ্য বইয়ের জ্ঞান অর্জন দ্বারা সম্ভব নয়, মনুষত্বের প্রকৃত বিকাশও সম্ভব নয় শুধুামত্র পাঠ্যবই পড়ে। শস্য ভাণ্ডারের মতো লাইব্রেরিতে জ্ঞান জমা করে রাখা হয় আর তাই লাইব্রেরিকে বলা হয় জ্ঞানের ভাণ্ডার। দেশে নতুন নতুন লেখক তৈরি হচ্ছেন। তাদের বইয়ের বাজার তৈরি করতে হবে, তাদের ধারণাগুলোকে সমাজে ধরে রাখতে হবে। তাই দরকার নতুন নতুন লাইব্রেরি, প্রয়োজন নতুন নতুন পাঠক তৈরি করা। পাঠকরা লেখকের ভাবনায় প্রভাবিত হন। সুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতি হতে হবে আর তাই বই পড়তে হবে, বই পড়াতে হবে। হৃদয়কে আমরা যদি বড় করতে পারি, স্বপ্নকে বিশাল করতে পারি তাহলে সামাজিক নানা অনাচার, শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা দূর হবে। আর এগুলো করা সম্ভব বই পড়ার ও পড়ানোর  মাধ্যমে। জ্ঞানার্জন, গবেষণা, চেতনা ও মূল্যবোধের বিকাশ, সংস্কৃতিচর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করে তোলা এবং পাঠাভ্যাস নিশ্চতকরণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। মনের তৃপ্তি ও দীপ্তি গ্রন্থপাঠের মাধ্যমেই সম্ভব। গ্রন্থ মানুষকে দেয় জীবনীশক্তি, জ্ঞানকে নিজের মধ্যে বন্দি করে রাখার ক্ষমতা। তাই গ্রন্থ নির্বাচনে পাঠককে গ্রন্থাগারে যেতে হয়, যেতে হয় বইয়ের দোকানে। এই দিবস সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
 
বর্তমান বিশ্বে পুরনো গ্রন্থগার হিসেবে মিসরের St. Catherine’s Monastery Library কে গণ্য করা হয়। এটি আনুমানিক ৫৬৫ খৃষ্টাব্দে স্থাপিত হয়েছিল। ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরনো গ্রন্থাগার হচেছ  তামিল নাড়ুর তানজোরের Saraswathi Mahal Library।। এটিকে ইতিহাসবিদরা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো গ্রন্থাগার বলে গণ্য করেন। এ গন্থাগারে তালের পাতা ও পুরনো কাগজের ওপর তামিল ও সংস্কৃতি ভাষায় লিখিত কিছু পান্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। ভারতের সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগার হচ্ছে কলকাতার National Library of India, যেটি ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি’ নামে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে এর নামরকরণ করা হয় ‘ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি’। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে এর নাম রাখা হয় National Library of India, যেখানে ২০ থেকে ২২ লাখ বই সংরক্ষিত আছে। গ্রন্থাগার মানব মনের চেতনা ও মননকে সমৃদ্ধ করার এমন একটি উৎসঘর যেখানে বই, জার্নাল, পত্রপত্রিকা সংরক্ষিত থাকে জ্ঞানপিপাসু ও গবেষকদের জন্য। গ্রন্থ মুদ্রিত তথ্য, গবেষণা, জ্ঞান, যুক্তি সভ্যতার জাগরণকে নব নবরূপে এগিয়ে নেয়। কীভাবে রেনেসার শক্তি সমাজ-সভ্যতা এবং মানবতাবাদী চিন্তা-মননকে প্রগতি ও সংস্কারের পথে নিয়ে যাচ্ছে তা জানার জন্য ছুটতে হয় গ্রন্থাগারে। গ্রন্থাগার সব ধরনের পাঠকদের জন্য।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, মধ্যযুগে হোসাইন শাহি বংশধররা প্রথম রাজকীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে মিশনারির লোকজন হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে প্রথম একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করেন, যেখানে মুদ্রিত বই ও পান্ডুলিপি রাখা ছিল। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতা আলিয়া মাদরাসা ও বেনারসে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় মিশনারিজদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে কলা ও বিজ্ঞান নির্ভর লাইব্রেরি স্থাপিত হয় ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে। ঐ বছরই এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতায় আরেকটি গন্থাগার স্থাপন করে।

১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গে  চারটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেগুলো হচ্ছে বগুড়া উডবার্ন লাইব্রেরি, যশোর ইনস্টিটিউট লাইব্রেরি, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ও বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় স্থাপিত হয় রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি, ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি, সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে, রাজশাহীর সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে, কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় অন্যদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহীর শাহ মখদুম পাবলিক লাইব্রেরি। ১৮৯০ থেকে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বর্তমান বাংলাদেশ তদানীন্তন পূর্ববঙ্গে যে গ্রন্থাগারগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলো হচ্ছে নোয়াখালী টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাইজ মেমোরিয়াল লাইব্রেরি সিলেট ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে, ভিক্টোরিয় পাবলিক লাইব্রেরি নাটোরে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে, চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি পাবলিক লাইব্রেরি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে, রামমোহন পাবলিক লাইব্রেরি ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে  ও হরেন্দ্রনাথ পাবলিক লাইব্রেরি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে যতটা জানা যায় যে, ৭১টি লাইব্রেরি রয়েছে। ষোল কোটি মানুষের জন্য সরকারি পর্যায়ে এই সংখ্যক লাইব্রেরির সংখ্যা নিতান্তই কম। এগুলোর সার্ভিস কতটা কি অবস্থায় আছে তা নিয়েও কথা আছে। কিন্তু লাইব্রেরি আমাদের প্রয়োজন। লাইব্রেরি প্রয়োজন শুধু বিভাগীয় শহরে নয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে গঞ্জে এবং শহরের পাড়ায় পাড়ায়।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে বলেন, ‘লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথে চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি। কোন পথ অনন্ত সমুদ্রে গিয়াছে, কোন পথ অনন্ত শিখরে উঠিয়াছে, কোন পথ মানব হৃদয়ের অতল পর্শে নামিয়াছে। যে যেদিকে ইচ্ছা ধাবমান হও, কোথাও বাঁধা পাইবোনা। মানুষ আপনার পরিত্রাণকে এতটুকু জায়গার মধ্যে বাঁধাইয়া রাখিয়াছে।’ কোনো শিক্ষক বিশেষ কোনো কারণে বিদ্যালয়ে না আসতে পারলে শিক্ষার্থীদের পাঠাগারে পাঠিয়ে দেয়ার রীতি কোথাও কোথাও চালু আছে। এটি একটি চমৎকার পন্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি লাইব্রেরিতে না থাকে কিংবা লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বই না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা অবসর সময় ব্যয় করে অপ্রয়োজনীয় কাজে।

জ্ঞানপিপাসু , মেধাবী শিক্ষার্থীদের আরও চিন্তাশীল করতে, উন্নত দেশ ও জাতি গঠন করতে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের বিপল্প নেই। প্রতিটি বিদ্যালয়ে, প্রতিটি মহাবিদ্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, প্রচলিত গ্রন্থাগারগুলোর প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। দিনের চরম ব্যস্ততার মাঝেও আমরা যদি কিছু সময় বের করে কয়েক পাতা বই পড়ি, তবে কিছুদিন পর বই পড়ার সময় এমনিতেই বেরিয়ে আসবে। সময় পেতে কষ্ট হবে না। আমরা নিজেরা একে অপরকে বই উপহার দিতে পারি। আজকে সমাজের হানাহানি, হিংসা, দ্বেষ, বাস্তবাদিতা, ভোগবাদিতার মধ্যেও স্থিরতা, শান্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে আসতে পারে একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ  যা সময়োপযোগী বই পড়ার মধ্য দিয়ে সম্ভব।

প্রমথ চৌধুরী তাঁর বই পড়া প্রবেন্ধ যথার্থই বলেছেন, ‘আমি লাইব্রেরিকে স্কুল-কলেজের ওপরে স্থান দিই এই কারণে যে, এ স্থলে লোকে স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দচিত্তে স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়; প্রতিটি লোক তার স্বীয় শক্তি ও রুচি অনুসারে নিজের মনকে নিজের চেষ্টায় আত্মার রাজ্যে জ্ঞানের পথে এগিয়ে নিতে পারে। স্কুল-কলেজ বর্তমানে আমাদের যে অপকার করছে সে অপকারের প্রতিকারের জন্য শুধু নগরে নগরে নয়, গ্রামে গ্রামে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা কর্তব্য। আমি পূর্বে বলেছি যে, লাইব্রেরি হাসপাতালের চাইতে কম উপকারী নয়, তার কারণ আমাদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরি একরকম মনের হাসাপাতাল।” আমাদের সমাজ ও মনে যে ব্যাধি বাসা বেঁধেছে, পড়ার অভ্যাস হচ্ছে তার ঔষধ আর গ্রন্থাগার হচ্ছে তার হাসপাতাল।

লেখক: মাছুম বিল্লাহ, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ শিক্ষক।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014845132827759