বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গ্রন্থাগার পেশাজীবীরা শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কোরিয়া, কাতার, সৌদিআরব ও ভিয়েতনামে লাইব্রেরিয়ান পদটি টিচার-লাইব্রেরিয়ান নামে পরিচিত। কিছু কিছু দেশে গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের শিক্ষক ও গবেষকদের প্রশিক্ষক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
পৃথিবীতে জ্ঞান সংরক্ষণের চাহিদার জন্ম থেকেই গ্রন্থাগারিক পেশার সৃষ্টি এবং পৃথিবীর আদি পেশার মধ্যে গ্রন্থাগার পেশা একটি অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পেশা। বাংলাদেশে ২৭টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রন্থাগার পেশাজীবীরা ডকুমেন্টেশন অফিসার, ক্যাটালগার, গ্রন্থাগারিক, সহকারি গ্রন্থাগারিকসহ বিভিন্ন নামের পদে কাজ করে যাচ্ছেন।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ শুরু হয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গ্রন্থাগার পেশাজীবীর পরিমান বাকী ২৬টি মন্ত্রণালয়ের গ্রন্থাগার পেশাজীবীর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর গ্রন্থাগার হলো শিক্ষাব্যবস্থার হৃৎপিন্ড। একজন গ্রন্থাগার পেশাজীবী পরিচালকের ভূমিকায় থেকে সব বিষয়ে জ্ঞান আহরন, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিয়োজিত থাকেন। পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালকের ভূমিকায় শিক্ষক। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের আলাদা আলাদা বিষয়ে শিক্ষা দেন। একইভাবে ওই একই প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার পেশাজীবী গ্রন্থাগারে একই ধরণের কাজ করেন। সুতরাং গ্রন্থাগার পেশাজীবী ও শিক্ষক একে অন্যের সহযোগী ও পরিপূরক।
মাধ্যমিকে একজন গ্রন্থাগার পেশাজীবী ১০ম গ্রেডধারী এবং ন্যূনতম যোগ্যতা হলো স্নাতকের পাশাপাশি ১ বছরের প্রফেশনাল পোষ্ট গ্রাজুয়েট সমমানের ডিপ্লোমা। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন সহকারী শিক্ষকের একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা ১১তম গ্রেডের ক্ষেত্রে স্নাতক। যদি তিনি বি.এড প্রফেশনাল কোর্সধারী হন তবে ১০ম গ্রেডধারী হবেন অর্থাৎ গ্রন্থাগার পেশাজীবী ও একজন শিক্ষক সমান গ্রেডধারী। যোগ্যতায় কোন অংশেই গ্রন্থাগার পেশাজীবী কম নন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মে তারিখে একটি আদেশ জারির মাধ্যমে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের নন-টিচিং স্টাফ থেকে বাদ দেয়ায় সহকারি শিক্ষকদের মতোই গ্রন্থাগার পেশাজীবীরাও ২৫ শতাংশ উৎসব বোনাস পেয়ে থাকেন। আর কর্মচারীরা পান ৫০ শতাংশ। তাছাড়া ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার ক্লাস বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। যেহেতু সহকারী গ্রন্থাগারিকরা সরাসরি শিক্ষাদানের সাথে জড়িত, তাই শ্রেণিভিত্তিক, গ্রেডভিত্তিক, একাডেমিক যোগ্যতা কিংবা সরাসরি পাঠদান বিবেচনায় গ্রন্থাগার পেশাজীবী ও সহকারি শিক্ষক সম-পর্যায়ের। তাই শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক পেশাজীবী একে অন্যের পরিপূরক হলেই কেবল ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব।
লেখক:- সভাপতি, বাংলাদেশ বিদ্যালয় গ্রন্থাগার সমিতি।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]