এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে, ক্লাস করেন তিন মাস। বেশ ভালোই চলছিল দিনগুলো। হঠাৎই জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি ছোট ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেন উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। তবুও জীবন থেমে থাকেনি। পরিবারের সহযোগিতা আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে শেষ করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। করেছেন চাকরিও।
বলছিলাম তেজগাঁও সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করা মাসুদ রানার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে ঢাকা কলেজ ভ্যেনুতে মামাতো ভাইকে নিয়ে হাজির হয়েছেন মাসুদ। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় সেখানেই। পরে শুনিয়েছেন নিজের জীবন সংগ্রাম আর সাফল্যের গল্প।
মাসুদ জানান, কাজিরপাড় সমাজকল্যাণ দিঘির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজে। তিন মাস না যেতেই দুর্ঘটনার শিকার হন। ছোট ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে বেবিটেক্সি আর ট্রাক্টরের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্পাইনাল কর্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চলাচলের ক্ষমতা হারান। দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসা শেষে আলোর মুখ দেখেননি। শেষে হুইল চেয়ারে বসেই উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাসে ফেরেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পাস করেন।
এইচএসসি পাসের পর চলে আসেন ঢাকার ফার্মগেটে খালার বাসায়। ভর্তি হন তেজগাঁও সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করেছেন, এরপর স্নাতকোত্তর। বর্তমানে গোম্যাক্স ট্রেকার নামে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।
মাসুদ রানা বলেন, আমি অসচ্ছল প্রতিবন্ধীভাতাও গ্রহণ করিনি। পরিবারের অবস্থা ভালো হওয়ায় আর্থিক সমস্যায় ভুগতে হয়নি। তবে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনায়।
তিনি বলেন, শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত কোনো সময় দেয়া হয় না। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলোর সিঁড়িতে হুইল চেয়ারে যাতায়াত ব্যবস্থা নেই, এটা খুবই দুঃখজনক। অধিকাংশ সময় ভবনের উপরের তলাগুলোতে পরীক্ষার সিট পড়ত আমি তো উপরে যেতে পারতাম না, নিচতলায় বসে পরীক্ষা দিতাম। ওই কক্ষের শিক্ষককে আমার উপরের কক্ষ (যে কক্ষে পরীক্ষার সিট পড়েছে) থেকে প্রশ্ন-খাতা আনতে হতো। অনেক শিক্ষক বিরক্তি প্রকাশ করতেন, বাজে ব্যবহার করতেন। এসব সহ্য করে আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে যারা অক্ষম তাদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে পড়ালেখার ব্যাপারে তারাও উৎসাহী হবে বলে মনে করেন তিনি।