ঘরে ঘরে বিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

ঘরে ঘরে বিদ্যালয়

রতন ভট্টাচার্য |

বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রথাগত ও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানের একটি স্বীকৃত স্থান। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য তাকে অবশ্যই বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু একজন ছাত্র দিনে কতটা সময় বিদ্যালয়ে কাটায়? দুই থেকে ছয় ঘন্টার বেশি অবশ্যই নয়। বাকি সময়টা সে তার পরিবার বা সমাজের সাথে অতিবাহিত করে। মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা শিশুর প্রথম শিক্ষক এবং শিশুর আবাসস্থল শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে সমাজে যত পরিবার, তত বিদ্যালয়। তারপর রয়েছে সমাজ, প্রথাগত বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এক কথায় বলতে গেলে আমাদের রয়েছে ঘরে ঘরে বিদ্যালয়।

শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ক্ষমতা সীমিত হলেও তা একেবারে অস্বীকার করার মতো  নয়। মনে রাখা দরকার, পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেকটি শিশু ভিন্ন ভিন্ন পারিবারিক পরিবেশ থেকে এসে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্কুল বা  বিদ্যালয়ে যোগ দেয়। পরিবারের ওপর শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব অর্পিত না হলেও শিশুরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় আবদ্ধ হয়ে বহু সামাজিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, সামাজিক আচরণ সম্পাদন করতে শেখে এবং তার সামাজিক বিকাশ শুরু হয়। অনেক সময় পারিবারিক জীবনের এই শিক্ষা শিশুর মনে সংকীর্ণতা এনে দেয় আবার এটা  ইতিবাচকও  হতে পারে । পরিবারের মধ্যে পিতা-মাতা বা অন্য বয়স্কদের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে  শিশুরা বিভিন্ন ঘটনাকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে  পর্যবেক্ষণ করতে শেখে। পরিবারের মধ্যেই শিশুর মানসিক সংকীর্ণতা সঞ্চারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সদভ্যাস যেমন অভ্যাস,  কুঅভ্যাসও তেমনি অভ্যাস এবং তা ব্যক্তিসত্তার উপাদান হিসেবে থেকেই যায়। একবার কোন কুঅভ্যাস গড়ে উঠলে তা দুর করা মুশকিল হয়ে পড়ে। যেমন কোন বয়স্ক ব্যক্তির অনুকরণে কোন শিশু বা কিশোর যদি হাতে থুতু দিয়ে বইয়ের পাতা ওল্টনোর কুঅভ্যাস রপ্ত করে  থাকে , তা সহজে পাল্টানো যায় না।

কেউ যদি পরিবারের বয়স্কদের নিকট থেকে ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজন করতে শেখে, তাহলে তার সেই কুঅভ্যাসকেও সহজে পরিবর্তন করা যায় না। শিশু পরিবারের মধ্যে বয়স্কদের অনুসরণ করে এরকম নানা ধরণের কুঅভ্যাস গঠন করে, যা আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। শিশুর জন্ম থেকে তার বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় পরিবারের এই প্রভাবকে বিশেষভাবে নজর না দিলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

শিশুর আচরণ, অভ্যাস গঠন, প্রাক্ষোভিক ( emotional ), মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য যে শিক্ষা তার দায়িত্ব অনেকাংশ পরিবারকে নিতে হবে। তবেই পরিবারগুলো ও  সমাজ শিশুর প্রাথমিক অনিয়ন্ত্রিত বা অনানুষ্ঠানিক  শিক্ষার দায়িত্ব নিতে পারবে।

আধুনিক শিক্ষার ব্যাপ্তি ঘটার ফলে পরিবারগুলোর উন্নতিও হয়েছে বটে, তবে তা এখনও তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌছেনি । তাই প্রতিটি শিশুর পূর্ণাঙ্গ সুষম জীবন বিকাশ বা সুশিক্ষার জন্য প্রতিটি পরিবারকে সৎ, আধুনিক, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে।  মনে রাখতে হবে, পরিবার শিশুর অনিয়ন্ত্রিত বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করলেই শিশু ও সমাজ উভয়েরই মঙ্গল হবে।

 

লেখক : অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, স্ট্যাটিস্টিকস, কামেলা হক ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061299800872803