দুই জেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কলেজের ফুল টাইম শিক্ষক তাশদীদ হোসেন অলীভ। প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলছে এমন ঘটনা। কলেজ কর্তৃপক্ষ নাকি এই অনিয়ম জানতই না। কলেজ দুটির দূরত্বও অনেক। একটি কলেজ হচ্ছে—মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অপর কলেজটি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার শামসুর রহমান সরকারি ডিগ্রি কলেজ। বিশাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে যেতে হয় এই দুই স্থানে। দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রথমত নৈতিকতার বিষয়। ছাড়া সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একজন কীভাবেই দুই কলেজে চাকরি করে চলেছেন সেটিও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এমন ঘটনা একজনের নয়, আপাতত দুই জনের তথ্য পাওয়া গেছে। অপর জন কে এম জাহিদ হাসান।
তাশদীদ হোসেন অলীভের নাম মুন্সীগঞ্জর স্বনামধন্য কলেজটিতে রয়েছে ১৪ নম্বর তালিকায় প্রাণী বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে। একই পদে শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের কলেজটিতে রয়েছে ৩০ নম্বরে। আর কে এম জাহিদ হাসানের নাম মুন্সীগঞ্জের কলেজটিতে রয়েছে আইসিটি প্রভাষক হিসেবে ১৮ নম্বর তালিকায়। পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক পদে শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের কলেজটিতে কে এম জাহিদ হাসানের নাম রয়েছে ২৭ নম্বর তালিকায়।
শামসুর রহমান ডিগ্রি কলেজটি ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট জাতীয়করণ হয়েছে। এই জাতীয়করণের যাবতীয় কাগজপত্রেও এই দুই শিক্ষকের নাম রয়েছে। তাতে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা স্পষ্ট করেছেন এই দুই শিক্ষক এখন সরকারি কলেজের প্রভাষক। মোট অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি কলেজ শাখায়। এমন অভিযোগ সবার মুখে মুখে।
মহান পেশায় চাকরি করে এই অনৈতিকতার ঘটনায় নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তাশদীদ হোসেন অলীভ মূল প্রশ্ন থেকে এড়িয়ে গিয়ে পালটা প্রশ্ন করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। আরেক শিক্ষক কে এম জাহিদ হাসান একইভাবে নিজের দায় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এটি কলেজ কর্তৃপক্ষই ভুল করেছে।
অন্যদিকে শামসুর রহমান ডিগ্রি কলেজে সদ্য যোগদানকারী অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক বলেন, আমি সদ্য এই কলেজে যোগদান করেছি, বিষয়গুলো বুঝতে আমার একটু সময় লাগবে এবং উক্ত শিক্ষকদ্বয়ের নামের সামনে মন্তব্য কলামে অনুপস্থিত কথাটি লিখে দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, ঐ শিক্ষকদ্বয় মাঝে মাঝে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে গেছেন।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুন্সীগঞ্জের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কলেজটির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত দুই প্রভাষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। তিনি মঙ্গলবার জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। তবে খোঁজখবর নিয়ে কোনো রকম অনিয়ম বা অসংগতি থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সোমবার সরেজমিনে শামসুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গিয়ে জানা গেছে, তাশদীদ হোসেন অলীভ গত ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল শামসুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে প্রাণী বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক পদে এবং কে এম জাহিদ হাসান ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল একই কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান পদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কলেজের অধ্যক্ষ এই শিক্ষকদ্বয় অনেক দিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন দাবি করলেও তাদের বিরুদ্ধে একটি শো-কজ পর্যন্ত করা হয়নি কেন এর সদুত্তর দিতে পারেননি।
কলেজটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসাইন এই প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তিনি অবহিত হয়েছেন। তালিকায় তাদের নামের পাশে মন্তব্যের ঘরে অনুপস্থিত লেখা রয়েছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।