ঘুষ নিয়ে এমপিওভুক্তি: ডিডি নিভা রাণী পাঠককে শোকজ - দৈনিকশিক্ষা

ঘুষ নিয়ে এমপিওভুক্তি: ডিডি নিভা রাণী পাঠককে শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনার আঞ্চলিক উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অফিস ফাইল-বদলি বাণিজ্য ও হুণ্ডির মাধ্যমে টাকা ভারতে পাচারের অভিযোগের পর এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। খোদ নিভা রাণী পাঠকের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে যাওয়া দুইজন কর্মকর্তাকে পাত্তা দেননি তিনি। এমন অভিযোগে উপপরিচালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে নীভা রাণী পাঠককে শোকজ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) খুলনার আঞ্চলিক উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অফিস ফাইল-বদলি বাণিজ্য ও হুণ্ডির মাধ্যমে টাকা ভারতে পাচারসহ নানা বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ আসে চলতি বছরের শুরুতেই। গত ২৭ জুন পাঠানো এক চিঠিতে নীভা রাণী পাঠকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো তদন্ত করতে শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলে দুদক। তাই অভিযোগ তদন্তে গত ৯ জুলাই দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা অধিদপ্তর। বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজের উপাধ্যক্ষ সেখ মোস্তাহিদুল আলম ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ আলম ফরাজীকে দায়িত্বব দেয়া হয় উপপরিচালকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তে। 

অভিযোগ জানা যায়, নিভা রাণী পাঠক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে ১০ জেলার বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে তার অফিসের দুইজন সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তার ও একজন কর্মচারীর মাধ্যমে নীভা রাণী পাঠক ঘুষ নিতেন বলেও অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম না দিলে এমপিও হবে না বলে জানানো হয়। চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিলেই বিধি বহির্ভূত বিষয়ভিত্তিক শাখা ও সমন্বয় করে প্রভাষকদের এমপিও হয়। খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানার রায়েরমহল কলেজের একজন প্রভাষক ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলেও জাননো হয় অভিযোগে। খুলনা অঞ্চলের সরকারি স্কুল ও জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসের শিক্ষক ও কর্মচারী বদলির জন্য ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন উপপরিচালক। এমনকি টাকার পাশাপাশি মাছ, গোশত ও অন্যান্য জিনিসপত্র নীভা রাণী পাঠক ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। নিভা রাণী পাঠক দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অদ্যাবধি ঘুষ বাণিজ্য-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি। যার অধিকাংশ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। 

গত ৯ জুলাই এসব অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করেন বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেখ মুস্তাহিদুল আলম ও একই কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ আলম ফরাজী। কিন্তু কর্মকর্তাদের অভিযোগ দুদকের তদন্তকে পাত্তা দেননি খুলনার আঞ্চলিক উপপরিচালক নীভা রাণী পাঠক। 

অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘উপপরিচালক নীভা রাণী পাঠকের আচরণে প্রতিমান হয় যে তিনি তদন্ত কমিটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই তদন্ত কমিটি নিভা রাণী পাঠকের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে এবং তদন্ত পরিচালনা করতে বিব্রতবোধ করছে।’ একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নীভা রাণী পাঠক তদন্ত কমিটিকে আসহযোগিতা করেছেন বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

সূত্র আরও জানায়, দুদকের অভিযোগ তদন্তে শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটিকে উপপরিচালক নীভা রাণী পাঠকের পাত্তা না দেয়ার বিষয়টি আমলে নিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে উপপরিচালক নীভা রাণী পাঠককে শোকজ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে শেঅকজ নোটিশ পাঠানো হয়। 

নোটিশে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের তদন্ত কাজে সহযোগিতা না করা কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে চাওয়া হয়েছে ণিভা রানীর কাছে। এ নোটিশের লিখিত জবাব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে তাকে।   

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীভা রাণী পাঠক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু তদন্তে আসা কর্মকর্তারা আমাকে কমিটি গঠনের চিঠিটি দেখোচ্ছেন না। তাদের কাছে চিঠি চাইলে তাঁরা বলেন অসুবিধা আছে। তারা যে আসলেই তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন এ সংক্রান্ত কোন চিঠিও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আমার কাছে আসেনি।’

এদিকে দুদকে আসা ঘুষ গ্রহণ, ফাইল ও এমপিও বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে নীভা রাণী পাঠক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘এসব অভিযোগের বিষয়ের সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা নাই। আপনি আমার সেবাগ্রহিতাদের সথে কথা বললেই  বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’  

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039539337158203