চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা - দৈনিকশিক্ষা

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ এলাকা। বরাবরের মতো দুর্ভোগে নগরবাসী। ‘দুর্ভোগ’ শব্দটা দিয়ে নগরবাসীর কষ্টের তীব্রতা ঠিক কতটা প্রকাশ করা যায় জানি না, তবে নগরের বাসিন্দাদের জন্য এটা নগরের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বাজে উপহার তা হলফ করে বলা যায়। যেখানে আধঘণ্টার বৃষ্টিতেই শহর হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় সেখানে টানা চার-পাঁচ দিন বৃষ্টিতে শহর পানিতে থই থই করবে না—এমন চিন্তা করাটা অস্বাভাবিক।

কিন্তু এমনটা কেন হয়? এটা কি দুর্ঘটনা? মানে এটা কি অনাকাঙ্ক্ষিত, হঠাত্ করে ঘটে গেল এমন? উত্তরটা হলো—‘না’। কারণ, চট্টগ্রাম শহরে বলতে গেলে জলাবদ্ধতা একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক দশক এর সরব উপস্থিতির সুফল নগরবাসী ভোগ করে আসছে, আগামী কয়েক দশকও যে এই জলাবদ্ধতা নগরবাসীর সঙ্গে গলাগলি করে নগর প্লাবিত করবে না তা বলা মুশকিল। রোববার (১৪ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকার নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন আরাফাত বিন হাসান।

সে যাই হোক, এই জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে যে কম কথা হয়েছে তা কিন্তু নয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এফেক্টিভ কোনো প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।

আচ্ছা, জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্পগুলো ফলপ্রসূ না হওয়ার সঙ্গে নগরবাসীর কোনো সম্পৃক্ততা কি আছে? উত্তরটা হলো—‘হ্যাঁ, অবশ্যই আছে’। নগরবাসী জলাবদ্ধতার জন্য কীভাবে দায়ী তা জানার আগে জেনে নেওয়া যাক জলাবদ্ধার কারণ। জলাবদ্ধতা হয় মূলত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে।

আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরে সত্তরটির মতো খাল থাকলেও এখন বেঁচে আছে দশটারও কম। বেঁচে আছে ঠিক নয়, আধমরা হয়ে আছে। খালগুলো দখল এবং ময়লা জমে ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশিত হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফিরে আসি পূর্বের কথায়, এই যে সত্তরটি খাল থেকে খালের সংখ্যা এখন এক অঙ্কে নেমে আসেছে,—কেন? এর জন্য কি নগরবাসী দায়ী নয়?

যে সব খালগুলো দখল হয়ে গেছে সেগুলো কোনো না কোনোভাবে নগরবাসীদের মধ্যে কেউ না কেউ দখল করেনি? যেসব খাল ময়লা জমে ভরাট হয়ে আছে, সেসব খালে ময়লাগুলো কি মেয়র সাহেব কিংবা সিডিএর চেয়ারম্যান সাহেব এসে ফেলেছেন? নগরবাসী ফেলেনি? তাহলে ঢালাওভাবে জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেসন কিংবা সরকারকে দায়ী করা হবে কেন? আমরা শুধু সিঙ্গাপুরের মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আলোকোজ্জ্বল শহর চাইতে জানি, নিজেরা সিঙ্গাপুরের নাগরিকের মতো পরিচ্ছন্ন দায়িত্বশীল নাগরিক হতে জানি না।

যত্রতত্র ময়লা ফেলে নালা কিংবা খাল ভরাট করা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে আমাদের শহরটা এমন অপরিচ্ছন্ন আর জলাবদ্ধ। আর সিঙ্গাপুরের মতো পরিচ্ছন্ন শহরের নাগরিকদের কাছে ময়লা ফেলে নালা-নর্দমা ভরাট করা তো বহু দূরের ব্যাপার, নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে ময়লা ফেলা গুরুতর কিছু। তাই তাদের শহর পরিচ্ছন্ন, জলাবদ্ধতামুক্ত।

আমাদের শহরগুলোর নালা নর্দমায় প্রতি বর্গমিটারে যতগুলো প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল আর ময়লা পাওয়া যাবে, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান বাদে পুরো সিঙ্গাপুর খোঁজেও ততগুলো প্লাস্টিকের বোতল আর ময়লা পাওয়া যায় কি না সন্দেহের বিষয়। তাই নাগালের মধ্যে থাকলেও আঙুর ফল আমাদের জন্য টক-ই।

জলাবদ্ধতার জন্য নগর কর্তৃপক্ষও কোনোভাবে দায় এড়াতে পারবে না, কারণ নাগরিক হিসেবে নগরের কাছে কিছু সুবিধা আমরা অবশ্যই পাবো। আর সেই সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নগর কর্তৃপক্ষের। তবে জলাবদ্ধতার মূল সমস্যাটা যেহেতু আমি বা আমরাই তৈরি করছি, সেহেতু জলাবদ্ধতার জন্য মূলত আমি বা আমরাই দায়ী। তবে হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে যে সবাই অসচেতন— এমনটা নয়।

এটা ঠিক যে, সচেতন নাগরিকের সংখ্যা খুবই কম। এই সচেতন নাগরিকদেরই দায়িত্ব নিয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। যতদিন না আমরা এই সচেতনতা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য নগরের উপযুক্ত উপহার হয়েই থাকুক।

 লেখক:শিক্ষার্থী, ওমরগনি এম ই এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010339021682739