চট্টগ্রামে ‘শিক্ষার্থীশূন্য’ বেসরকারি কলেজগুলো - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যচট্টগ্রামে ‘শিক্ষার্থীশূন্য’ বেসরকারি কলেজগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চট্টগ্রামে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের রমরমা কোচিং বাণিজ্যে ‘শিক্ষার্থীশূন্য’ হয়ে পড়ছে বেসরকারি কলেজগুলো। শ্রেণিকক্ষের পাঠদান চলছে কোচিং সেন্টার কিংবা শিক্ষকের বাসায়। কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের নিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরাও কোচিংনির্ভর হয়ে পড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে নগরীর বেসরকারি কলেজগুলোতে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার একেবারে নগণ্য। যে কারণে এমপিওভুক্ত কিংবা এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা বেসরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকদের বেতন দিতে হচ্ছে অলস বসিয়ে রেখেই। এ অবস্থায় কলেজে লেখাপড়ার পরিবেশও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের কোনো নিয়মনীতিই কাজে আসছে না। শিক্ষাপাড়া খ্যাত নগরীর চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি কলেজের শিক্ষকদের নামেই রয়েছে অনেক কোচিং সেন্টার। কর্তৃপক্ষের নির্বিকার ভূমিকায় এমন অনিয়মও যেন নিয়মে পরিণত হচ্ছে; যা বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য একপ্রকার অশনিসঙ্কেত। 

নগরীর অধিকাংশ সরকারি কলেজ শিক্ষক নামকাওয়াস্তে কলেজে গেলেও তাদের মনোযোগ বেশি কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট পড়ানোর দিকে। এদের কেউ কেউ নিজেরাই খুলে বসেছেন কোচিং সেন্টার। সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী বা ছাত্রদের ক্লাসে উপস্থিতির বিষয়ে কিছুটা বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেসরকারি কলেজে তেমনটি নেই। এ কারণে বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে কোচিং সেন্টারের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে।

সূত্র জানায়, নগরীর চকবাজার এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের (এইচএসসি) শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন বহুতলা ভবনে রুম ভাড়া নিয়ে এসব কোচিং সেন্টার চালানো হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর সমাগম রয়েছে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলোতে। একেক বিষয়ে একেক শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। বিষয়ভিত্তিক এমন শিক্ষকদের মধ্যে রসায়ন বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের ‘শ্যামা স্যার’ ও চট্টগ্রাম কলেজের ‘কনক স্যার’। গণিত বিষয়ে বাকলিয়া সরকারি কলেজের ‘কামাল স্যার’ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ‘রণজিৎ স্যার’। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে সিটি কলেজের ‘মেহেদী স্যার’। তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের পাশাপাশি আইসিটি বিষয়েও পড়াতে শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করেন বলে অভিযোগ আছে। জীববিজ্ঞানে বাকলিয়া সরকারি কলেজের ‘প্রণব স্যার’ ও ‘সুচারু স্যার’। আইসিটি বিষয়ে সিটি সরকারি কলেজের ‘জামাল স্যার’। তিনি তার কোচিংয়ে মাসিক বেতনের পাশাপাশি নিজের লেখা বই কিনতেও শিক্ষার্থীদের জোর করার অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রামের বেসরকারি হাজেরা তজু কলেজ, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ, পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ, সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এমপিওভুক্ত বিভিন্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক কলেজে উপস্থিতির হার মোট শিক্ষার্থীর ৮-১০ শতাংশ। এমনও অনেক কলেজ রয়েছে যেখানে ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার শূন্যের কোঠায়। যে কারণে শিক্ষকরা কলেজে গেলেও ক্লাসে ছাত্র বা শিক্ষার্থী না থাকায় অলস বসে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা উপস্থিত থেকে ফিরে যান। কোনো কোনো শিক্ষক হয়ত হাজিরা দিয়েই চলে যান। অথচ সরকার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা পূর্ণ বেতনই আদায় করছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব বাকলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল বলেন, সরকারি কলেজের বিশেষ বিশেষ বিষয়ের অধিকাংশ শিক্ষকই কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকদের সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কলেজে থাকতে হয়। কিন্তু দেখা যায় কোচিং বাণিজ্যে জড়িত এসব শিক্ষক ফাঁকে ফাঁকেই কলেজে যান। বেশির ভাগ সময় নিজেদের কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেট পড়ানোতেই ব্যস্ত থাকেন। চট্টগ্রামের চকবাজার, জামালখান, জিইসি মোড় এলাকায় রয়েছে বেশির ভাগ কোচিং সেন্টার। সকাল ৭টায় কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার মানে অফিস সময়েই সরকারি কলেজের শিক্ষকরা থাকেন কলেজের বাইরে। কোচিংয়ের ফাঁকে কলেজে গিয়ে তারা ক্লাস নেন। মূলত এ কারণেই বেসরকারি কলেজগুলোতে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কম, যা পুরো শিক্ষার পরিবেশ ও মানকেই নষ্ট করছে। তিনি এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের কঠোর নজরদারি এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম সরকারি মহসিন কলেজের গণিতের শিক্ষক রণজিত কুমার দত্ত বাইরে কোচিং পড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, সরকারি কলেজে ক্লাসে উপস্থিতির জন্য বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেসরকারি কলেজগুলোতে তা নেই। জরিমানা নিয়েই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয় বেসরকারি কলেজ। তিনি অফিস সময়ের বাইরে সকাল ৭টা থেকে ৯টা ও বিকাল ৪টার পর কোচিং করান বলে জানান। গ্রামের অনেক সরকারি কলেজে শিক্ষকরা সপ্তাহে তিন দিন উপস্থিত থাকেন। বাকি তিন দিন তারা শহরে কোচিং করান। কোনো কোনো শিক্ষক নিজেরাই কোচিং প্রতিষ্ঠানের মালিক।

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক কাজী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘৪০-৫০ জন করে কয়েকটি ব্যাচ পড়াই। তবে আমি কোনো কোচিং সেন্টার খুলিনি। ছাত্রদের প্রাইভেট পড়াই। প্রাইভেট পড়ানোতে সরকারি কোনো বিধি-নিষেধ নেই।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির বিষয়টি উদ্বেগের। এজন্য অনেকাংশেই দায়ী সরকারি কলেজের নাম-ডাকওয়ালা শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য। কিন্তু এটা দেখার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষকরা হয়ত কোচিং সেন্টারগুলো পরিচালনা করছেন। তবে ক্লাসের সময় কোচিং সেন্টারে কোনো শিক্ষক পাঠদান করালে সেটা অপরাধ। সরকারি কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বা কলেজে অনুপস্থিত থেকে কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
 

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039060115814209