চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে |

অষ্টম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রী চাঁদনী আক্তার। ক্লাস করছেন চতুর্থ শ্রেণিতে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় চাঁদনীর মতো আরো একজন ভাড়াটে শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। তার নাম মো. মাসুম। প্রায় তিন বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় লেখাপড়া বাদ দিলেও মাদরাসায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখাতে তাকেও বসানো হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মদরাসার পঞ্চম, তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রথম শ্রেণিতে পাওয়া গেলো দুই শিশু শিক্ষার্থী হাবিবা ও স্বাগতা। তারা অবশ্য ক্লাসে ছিলো না। ছিলো মাদরাসার পেছনে গাছের নিচে বড়ই কুড়াতে ব্যস্ত। অথচ কাগজপত্রে মাদরাসাটির শির্ক্ষাী ৫০ জন। শিক্ষা অফিস থেকে এ বছর বই পেয়েছেন পাঁচটি শ্রেণির ২৫ সেট। যার ১৬ সেট এখনও বিতরণ করা হয়নি।

চুঙ্গাপাশা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা

কলাপাড়ার চুঙ্গাপাশা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার মতো একই অবস্থা জাতীয়করণের তালিকায় থাকা  ২৪ মাদরাসার অধিকাংশ। অথচ এ মাদরাসাগুলোকে জাতীয়করণ করার আশ্বাস দিয়ে একটি দালালচক্র মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইতোমধ্যে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানালেন, উপজেলা থেকে ১১টি মাদরাসার তালিকা জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় আছে চুঙ্গাপাশা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার নাম।

মো. মাসুম

জানা গেছে, বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো(ব্যানবেইস) থেকে ২৪টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার তালিকা কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয় পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়। এ তালিকায় কুমিরমারা স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার নাম ছে রয়েছে দুইবার। উপজেলা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা যাচাই-বাছাই কমিটি সরেজমিন তদন্ত শেষে গত ২৯ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর ১১টি মাদরাসার তালিকা পাঠায়। সেই তালিকার চার নম্বরে রয়েছে চুঙ্গাপাশা মাদরাসার নাম। 

মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী আক্তার

ব্যানবেইসে পাঠানো সেই তালিকার সূত্রধরে চুঙ্গাপাশা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসায় গেলে বের হয়ে আসায় ভাড়ায় শিক্ষার্থী হাজির করার চমকপ্রদ তথ্য। ৫০ জনের উপরে শিক্ষার্থী রয়েছে, মাদরাসা সুপার মো. মোখলেছুর রহমান এমন দাবি করলেও সব ক্লাসরুমে শিক্ষার্থী বসার বেঞ্চ রয়েছে সরব মিলিয়ে মাত্র ছয় জোড়া। তাতে ধুলোর স্তর দেখে সহজেই বোঝা যায়, এক মাসেও এই বেঞ্চে কেউ বসেনি। টিনসেড মাদরাসার চারটি শ্রেণিকক্ষের দুইটিতে কোন বেঞ্চ নেই। মাদরাসায় চারজন শিক্ষক রয়েছেন বলা হলেও উপস্থিত ছিলেন দুইজন। শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় পঞ্চম শ্রেণিতে দুই জন, চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন, তৃতীয় শ্রেণিতে একজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন পাওয়া যায়। আর প্রথম শ্রেণিতে ছিলো ১৬ জন। সব মিলিয়ে মোট ২৪ জনের নাম রয়েছে। এর বেশিরভাগ নামে কোন শিক্ষার্থী নেই বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীরা।

মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে ক্লাস নিচ্ছিলেন মাদরাসার সুপার মো. মোখলেছুর রহমান। শির্ক্ষাথী চাঁদনী প্রথমে নিজেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বললেও পরক্ষণেই জানায় সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু তার ক্লাসের লেখার খাতায় দেখা যায় বীজগনিতের সমাধান। এটা কীভাবে সম্ভব জানতে চাইলে সে স্বীকার করে শিক্ষকরাই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে ছাত্রী উপস্থিতি দেখাতে। শিক্ষকরা ভাড়ায় শিক্ষার্থী আনার চেষ্টা করলেও গোটা মাদরাসায় উপস্থিত পাওয়া গেছে মাত্র চারজনকে। যারা কেউই এখানকার শিক্ষার্থী না। অথচ জাতীয়করণের তালিকায় রয়েছে মাদরাসাটির নাম। শিক্ষক মো. শাহজালাল মাদরাসা থেকে নিয়মিত বেতন তুলছেন। অথচ তিনি তার পাঁচজন শিক্ষার্থীর নাম বলতে পারেন নি। পারেননি অন্য শিক্ষকদের নাম বলতে।

চুঙ্গাপাশা গ্রামের মামুন হাওলাদার, আলাউদ্দিন মীর ও নইম উদ্দিন মৃধা বলেন, এই মাদরাসা প্রায় দেড় যুগ বন্ধ ছিলো। গত বছর থেকে মাদরাসা মাঝেমধ্যে খুলে আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। এখানে কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই। শিক্ষকদের আত্মীয় দু’একজনের সন্তানকে মাঝে মধ্যে এনে মাদরাসার ক্লাসে বসানো হয়, যদি কোন কর্মকর্তা তদন্তে আসে। তদন্ত শেষে তারা আবার মাদরাসা তালা দিয়ে চলে যায়। অভিভাবকরা বলেন, মাদরাসা প্রথম যখন চালু হয় তখন অনেক শিক্ষার্থী ছিলো। কিন্তু লেখাপড়ার মান ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীরা অন্যত্র চলে যায়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় মাদরাসাটি। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা অফিসের কোন তদারকি না থাকায় এ মাদরাসার মতো অবস্থা উপজেলার অন্য স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর।

মাদরাসার সুপার মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের ২০ ফুটের মধ্যে আরেকটি নূরানী মাদরাসা থাকায় শিক্ষার্থীরা সব সেখানে চলে গেছে। তবে শিক্ষার্থী ভাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এস শির্ক্ষাথী এমনিতেই পড়তে এসেছে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীও কী পড়তে এসেছে? জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি। ান,বেতন জানান বেতন না পাওয়ায় শিক্ষকরা ঠিকমতো মাদরাসায় সময় দিতে পারেন না।

স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার যাচাই-বাছাই কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ব্যানবেইস প্রেরিত তালিকা থেকে যাচাই-বাাছাই শেষে যে ১১টি মাদরাসার তালিকা পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ মন্দের ভালো। চুঙ্গাপাশা মাদরাসার এক শিক্ষক বেতন পান বলে ওই মাদরাসার নাম পাঠানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংকট থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.025568008422852