চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্র সংসদে ৭ বছর ধরে বিনা ভোটে প্যানেল নির্বাচিত হচ্ছে। চমেক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ২০টি পদের সবকয়টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিবার জিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থীরা। সর্বশেষ ২০১১-২০১২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র শিবির ও স্বতন্ত্র একজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ২০১২-২০১৩ সেশনে ছাত্র শিবির নির্বাচনে প্যানেল জমা দিলেও ছাত্রলীগের হুমকির মুখে প্রত্যাহার করে নেয়। বেশকিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ছাত্রলীগের কিছু নেতার হুমকি-ধমকির কারণে প্যানেল তা দূরের কথা, ভয়ে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীও হয়নি। আজ নির্বাচনের দিনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
গতবছরের ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মনোনীত পূর্ণ প্যানেল। নির্বাচনের মাধ্যমে ২০তম সহ-সভাপতি (ভিপি) হিসেবে মো. জামিউর রহমান আকাশ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া প্রো ভিপি হিসেবে সাইফুল ইসলাম মুরাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এমএ আউয়াল রাফি মনোনীত হন।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, চমেকসুর মতো প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়া খুবই অপ্রত্যাশিত। চমেকসু নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, সবাই অংশ নেবে- সেটাই প্রত্যাশিত।
চমেকসুর সাবেক জিএস ডা. ইমরানুর রহমান সনেট বলেন, সারাদেশের মতো দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সরকারপন্থি ছাত্রসংগঠনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে অন্যসব সংগঠনের নেতাকর্মী কোন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। প্রত্যেক সংগঠনের সহাবস্থান তৈরি করে নির্বাচন হলে সেটা অর্থবহ হবে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ যা হচ্ছে সেটা নির্বাচন নয়, তা চমেক প্রশাসনের নাটক মাত্র।
চমেকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ারুল আউয়াল (রাফি) বলেন, সবার অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে ভালো লাগত। তবুও আমাদের প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ইশতেহার প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে সংসদ কাজ করে যাবে। ছাত্র সংসদ থাকায় ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে অনেক পজেটিভ পরিবর্তন এসেছে। সেটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব অধ্যাপক ডা. আকরাম পারভেজ চৌধুরী বলেন, সব নিয়ম ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র অনুয়াযী নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে একটিমাত্র প্যানেল জমা পড়েছে। সেটাই কাল (আজ) ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার ভোটের দিনে বিজয়ী ঘোষণা হতে পারে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের (চমেকসু) সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, দেশের একমাত্র মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ চমেকসু। প্রতিবছর চমেকসুর ২০টি পদে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। চমেকসুর ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক একাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার। কলেজে সংসদ থাকায় একাডেমিকসহ সার্বিক কাজ পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা হয়।
২০১৯-২০২০ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, মুজিবের আদর্শে সন্ত্রাস ও মৌলবাদমুক্ত আধুনিক ও প্রগতিশীল ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়ে ছাত্রলীগ মনোনীতরা হলেন- সহ-সভাপতি মোস্তফা আনোয়ারুল আউয়াল (রাফি), সাধারণ সম্পাদক প্রীতম কুমার সাহা, উপ সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ মাহিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এমএ কাইয়ুম ইমন, সমাজসেবা বিভাগের সম্পাদক মিনহাজ আরমান লিখন, সিনিয়র সদস্য ইফরান চেীধুরী, জুনিয়র সদস্য হাসান রাব্বি, সাহিত্য বিভাগ সানি হাসনাইন প্রান্তিক, সিনিয়র সদস্য মুত্তাকিম চৌধুরী সিফাত, জুনিয়র সদস্য মুহাম্মদ ইফরাইন, সাংস্কৃতিক বিভাগ সম্পাদিকা সামিয়া আরশ ইরা, সিনিয়র সদস্য শাওন দত্ত, জুনিয়র সদস্য রওনক সাজিন, আন্তঃক্রীড়া ও মিলনায়তন বিভাগ সম্পাদক মুঈদ সাকিব, সহ-সম্পাদিকা ফারাহ নানজিবা ইয়াকা, সিনিয়র সদস্য সাদ বিন মেহের ও জুনিয়র সদস্য আনিকা তাসনিম খান, বহিঃক্রীড়া ও বার্ষিক ক্রীড়া বিভাগ সম্পাদক নাহিদ শিকদার, সিনিয়র সদস্য, আরফাত আহমেদ শিহাব ও জুনিয়র সদস্য তনয় সরকার।
এর আগে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট কলেজের নতুন একটি একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে এ ভবনের পাশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে নতুন এ ভবনেই চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ভিপি হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন বোরহান উদ্দিন।