চলে গেলেন ভাষা সৈনিক শমসের উদ্দিন মোহাম্মদ (কাহার মাস্টার)। শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় বার্ধক্যজনিত কারণে গোপালগঞ্জ শহরে মেয়ের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শুক্রবার বাদ মাগরিব রাতইল পূর্বপাড়া হাফেজিয়া মাদরাসা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে, ভাষা সৈনিক শমসের উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, রাতইল ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, শমসের উদ্দিন মোহাম্মাদ ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যে ভাষা ও দেশের প্রতি তার অকুন্ঠ ভালোবাসা নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছে। তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি খুবই স্বাধীনচেতা ছিলেন। কলকাতা বালিকা বিদ্যামন্দিরে তার পাঠ গ্রহণের সূচনা হয়। পরবর্তী সময়ে কোলকাতার এ.টি মিত্র ইনস্টিটিউশনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর দেশ বিভাগের কারণে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। অতঃপর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে যশোর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করার পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে কৃতিত্বে সাথে আই এ পাস করার পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে তিনবার জেল খেটেছেন তিনি। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বিএজি পাস করার পর শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ১৯৬০-৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাতইল নায়েবুন্নেছা ইনিস্টিটিশনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৬৫-৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে নারায়নগঞ্জ বন্দর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি নারায়নগঞ্জ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার গ্রামের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সে সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আপ্যায়নসহ সব সধরনের সহযোগিতা করেছেন।
তিন বছর বিরতির পর ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গোপালগঞ্জ হাই স্কুলে যোগদান করেন এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জের খন্দকার শামস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ওই স্কুল থেকে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসরে যান ।