চল্লিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হচ্ছে! - দৈনিকশিক্ষা

চল্লিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হচ্ছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসামরিক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লাল মুক্তিবার্তায় নাম এবং ভারতীয় গেরিলা বাহিনীর করা তালিকার বাইরে যারা সনদ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা সাময়িক সনদ গ্রহণ করেছেন তাদের সনদ বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ সামরিক ও রাজনৈতিক সরকারের প্রধানের স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করে এখন মুক্তিযোদ্ধার সঠিক অবিতর্কিত তালিকা করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, আসছে মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চের আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শ্যামল সরকার। 

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, বেসামরিক গেজেট, সাময়িক সনদ এবং বীরাঙ্গনার সাময়িক সনদপ্রাপ্তদের সনদ ও ভাতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গতকাল সোমবারই পত্র দেওয়া হয়েছে। সঠিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত না করা পর্যন্ত এসব সনদধারী ভাতা বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন না। এ সংখ্যা কমবেশি ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার হতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ রয়েছে। এ ছাড়া কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সই করাও কিছু সনদ পাওয়া যায়। মূলত এসব সনদই এখন বাতিল হলো।

যেসব গেজেট বহাল থাকছে সেগুলো হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় তালিকা, কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রণীত শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, বিজিবির শহীদ গেজেট, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, খেতাবপ্রাপ্তদের গেজেট, মুজিবনগর, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা প্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিসিএস, সেনা, বিমান, নৌ, নৌ-কমান্ডো, পুলিশ, আনসার, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দ সৈনিক, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, লালমুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী), ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), যুদ্ধাহত পঙ্গু বিজিবি, যুদ্ধাহত বিজিবি, সেক্টর অনুযায়ী ভারতীয় তালিকা, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা, সুযোগ সুবিধা বহাল থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজার বিভিন্ন শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধার ভাতা প্রদান করে থাকে। সম্মানী ভাতার হার মাসিক জনপ্রতি নিচে ৫ হাজার সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল ভাতা, ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনা খরচায় চিকিত্সা সেবা, বিদেশে চিকিত্সার ব্যবস্থাও সরকার করে থাকে। এ ছাড়া রেশন, শিক্ষাভাতা ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন তারা। ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিও রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।

বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে ১৯৭২ সালে ঘোষিত দি বাংলাদেশ (ফ্রিডম ফাইটারস) ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অর্ডার অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা না মানা, একেক সময় এক এক ধরনের সংজ্ঞা প্রবর্তন সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো আইন প্রবর্তন না করায় বস্তুত সঠিক মুক্তিযোদ্ধা কারা তা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা বির্তকের সুযোগ তৈরি হয়। ১৯৭২ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ ও কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে এ ধারণা পাওয়া যায়।

(মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সম্পর্কে ১৯৭২ সালের অর্ডারের ইংরেজি ভাষায় যা বলা হয়েছে যেটি এখনো বহাল তা হচ্ছে ‘ ফ্রিডম ফাইটারস (এফএফ) মিনস এনি পারসন হু হ্যাড সারভড অগজ মেম্বার অফ এনি ফোর্স ইনগেজড ইন দি ওয়্যার অফ লিবারেশন) ।

মুক্তিযুদ্ধের পর সেক্টর কমান্ডার ও সাবসেক্টর কমান্ডারদের প্রকাশনা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৮০০ এবং অনিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার। অর্থাত্ মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ জন।

সেক্টর থেকে পাওয়া (মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর বিলুপ্তির পর এসব দলিল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রশিক্ষণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইবিআরসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে) দলিলে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৬ জন।

১৯৯৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্কালীন ডিজি মমিনউল্লাহ পাটোয়ারির নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা কমান্ডারদের নেতৃত্বে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে একটি তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এটিই এখন লালবই নামে সমধিক পরিচিত। এতে ১ লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্র জানায়, এই তালিকায় ইবিআরসিতে সংরক্ষিত ৭০ হাজার ৮৯৬ জনের মধ্যে অনেকের নাম নেই। অর্থাত্ এ তালিকাটিও অসম্পূর্ণ বলা যায়।

ইউএনও ও ডিসিদের নিয়ে উপজেলা ও জেলা যাচাই বাছাই কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে দুটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর একটি ছিল বিশেষ গেজেট যেখানে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার জন এবং অপরটি গেজেট নাম অভিহিত করে তাতে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার জন। দুটি মিলে তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার জন। জোট সরকারের সময় সংখ্যা বাড়ে ৪৪ হাজার। এর আগে এরশাদ আমলেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে গেজেট করা হয়।

২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর অবসরের বয়স বাড়ানোর পর ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্কালীন সচিব মোল্ল­া ওয়াহেদুজ্জান একটি পরিপত্র জারি করেন। এতে কারা মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারী হবেন তার সংজ্ঞা বা চারটি শর্ত দেওয়া হয়। এসব শর্ত হচ্ছে যারা চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন অথবা যাদের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়েছিল অথবা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যাদের নাম গেজেটে প্রকাশ হয়েছিল অথবা যাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা সনদ রয়েছে। এ চারটির যে কোনো একটি শর্তে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ পান মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীরা। যদিও এখন আবার বলা হচ্ছে চাকরিতে প্রবেশের সময় মুক্তিযোদ্ধার কোটা সুবিধা না নিলে এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা পাবেন না।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032908916473389