অধিকাংশ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয়ে থাকে ঢাকায় যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন পরীক্ষার্থীর পক্ষে অনেকটা পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। এই নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজন করলে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে নিয়োগ পরীক্ষাগুলো অনেকাংশেই স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে। কোনো নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় থাকলে প্রথমেই একজন পরীক্ষার্থীকে ঢাকায় যাওয়ার বাস বা ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য টাকা জোগাড় করতে হয় যা অনেক বেকারের কাছে এক ধরনের বোঝাস্বরূপ। এরপর অন্তত একদিন আগে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। বাস বা ট্রেনে সিট না পেলে সারাদিন বা রাত জেগে দাঁড়িয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে হয়।
আবার রাস্তায় যানজটের ভোগান্তি তো প্রতিদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর ঢাকায় পৌঁছে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হয় খাওয়া এবং টয়লেটের ব্যাপারে। পরিচিত আত্মীয়-স্বজন না থাকলে খুঁজে খুঁজে পাবলিক টয়লেট এবং খাবার হোটেল বের করতে হয়। এরপর রাস্তাঘাট চিনে, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পরীক্ষার কেন্দ্রে যখন একজন পরীক্ষার্থী পৌঁছায় তখন সে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এরপর পরীক্ষা শেষে আবার ফিরে আসার অনুরূপ ভোগান্তি তো থাকছেই। যে পরীক্ষার্থীর বাড়ি পঞ্চগড় বা কক্সবাজার তার অবস্থা হয় আরো শোচনীয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাস্তায় ভোগান্তি, আর্থিক সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একজন প্রার্থীকে ঢাকায় পৌঁছাতে হয় নিয়োগ পরীক্ষা দিতে। অথচ বিভাগীয় পর্যায়ে যে একদম নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না তা নয়। বিসিএস, নিবন্ধন পরীক্ষাসহ বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে। তাহলে তাদের অনুসরণ করে অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও একইভাবে নেওয়ার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করতে পারেন। এছাড়া নারী এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়া আরো বেশি কষ্টকর।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ নারী শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধী মানুষ যাদের বড় শহরে যাওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। সেখানে যাদের নেই কোনো আত্মীয় বা পরিচিতজন। হোটেলে থাকার অনেকের সামর্থ্য নেই এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী মানুষ যারা একা ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না তাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আরও দুই একজন মানুষ এলে থাকা-খাওয়ার খরচও বেড়ে যায়। আবার অনেক অভিভাবক সন্তানদের একা দূরে বিশেষত ঢাকার মতো জনবহুল শহরে পাঠাতে সাহস পান না। এমনিতেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা, অচেনা-অজানা আশঙ্কা আরো মানসিক অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তোলে। এভাবে ছোটাছুটি করায় মানসিকভাবে স্থির থেকে চাকরি পরীক্ষাটিও ভালোভাবে দেওয়া সম্ভবপর হয় না। সেক্ষেত্রে তারা ঢাকা শহরে গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেবেন কিভাবে?
চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনে পে-অর্ডার ও ব্যাংক ড্রাফট ফি কমানোর পাশাপাশি শুধু রাজধানীতে মূল্যায়ন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন না করে বরং দেশের বিভাগীয় শহরে বা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার সমন্বয়ে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বেকারত্ব আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। একজন বেকার যার কোনো উপার্জন নেই ; তাকে ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ড্রাফট পে-অর্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে চাকরির জন্য মেধা মূল্যায়ন ফি দিতে হয়। আবার সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজধানী বা বড় বড় শহরে যেতে হয়। যার খরচ মেটাতে একজন পরীক্ষার্থী বা অভিভাবককে হিমশিম খেতে হয়। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো তাই বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়া হোক। এতে করে অন্তত একটি বিরাট অংশের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশেই দূর হবে।
লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়