চাকরির বাজারে বিলুপ্ত হবে অনেক পদ - দৈনিকশিক্ষা

চাকরির বাজারে বিলুপ্ত হবে অনেক পদ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

হুমায়ূন আহমেদের অয়োময় নাটকের ‘পাঙ্খাপুলার’-এর কথা মনে পড়ে? বারান্দায় বসে দড়ি টানত, মাঝে মাঝে কেশে উঠত; ভেতরে অতিকায় হাতপাখা একবার ডানে ঘুরত, একবার বাঁয়ে। জমিদার পরিবারের সদস্যদের গায়ে বাতাস লাগত। জমিদার বাড়িতে অন্তত একজন পাঙ্খাপুলার না থাকলে মর্যাদা থাকে না। এতে বেসরকারি খাতেও পাখা টানেওয়ালার পদ সৃষ্টি হয়। সোমবার (৫ আগস্ট) বণিকবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন ড. এমএ মোমেন।

কালেক্টর আর জেলা জজের তো পাঙ্খাপুলার থাকতেই হবে, এমনকি কম ক্ষমতার হাকিমদের আদালতেও পাঙ্খাপুলারের একটি করে পদ সৃষ্টি হয়। সরকারের অনুমোদন পাওয়ায় চাকরিটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পাঙ্খাপুলার সরকারি পদ ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশেও সত্তরের দশকে কোনো কোনো আদালতে এই পাখা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু আদালতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার পর পরই বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যান লাগানো হয়। তিন ব্লেড এবং কোথাও কোথাও চার ব্লেডের শো শো বাতাসের কাছে দড়িটানা পাখার বাতাস তুচ্ছ হয়ে পড়ায় পাঙ্খাপুলার পদটি বিলুপ্ত করা হয়। পুরনো, ছেঁড়া পাখা চলে যায় আদালতের গুদামে।

শ্রম বাঁচানো ‘মেকানিক্যাল মাসল’ মেশিন এবং সুদক্ষ ‘মেকানিক্যাল মাইন্ড’ প্রসেস কাঠামোগত বেকারত্ব সৃষ্টি করে। মসলিন কারিগরের বেকারত্বের উদাহরণ তো বাংলাদেশেরই। প্রযুক্তিগত বেকারত্বকে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ জন মেইনার্ড কেইনস খুব একটা গুরুত্ব দেননি। বলেছেন, এটা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সাময়িক সমস্যা মাত্র। যন্ত্র যে মানব শ্রমকে প্রতিস্থাপন করছে এবং এতে যে বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, এ আলোচনা অ্যারিস্টোটলের সময়ও হয়েছে। যতটা শ্রমক্ষেত্র এবং যতসংখ্যক শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ততটা নতুন শ্রমক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে কিনা এবং অন্তত ততসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে কিনা, তা-ই হয়ে ওঠে বিতর্কের বিষয়। নতুন যন্ত্রের আগমনে ক্ষতি, নতুন বিনিয়োগের কারণে ক্ষতি, শ্রমমূল্য পরিবর্তনে ক্ষতি, উৎপাদনে মূল্য হ্রাস পাওয়া ক্ষতি এবং নতুন ধরনের উৎপাদনের কারণে যে ক্ষতি, তা পুষিয়ে নেয়াটা জরুরি হয়ে ওঠে। প্রযুক্তি এমনই চরিত্রের যে কোনো পেশার দক্ষতম শ্রমিককে অপ্রয়োজনীয় করে তুলতে পারে।

ভিস্তিওয়ালার কথা না হয় বাদই থাক, সে আমলের ঢাকা পৌরসভার বাতিওয়ালাদের কথা আমাদের আগের প্রজন্মের অনেকেরই মনে আছে। হাতে মই আর দেশলাই, কখনো কেরোসিন তেলও। তারা সূর্য ডুবো ডুবো অবস্থায় ল্যাম্পপোস্টের বাতিতে আগুন দিয়ে নেমে আসত। এই বাতিওয়ালা কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরে নয়, পৌরসভার। কিন্তু এটি স্থায়ী চাকরি। ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুৎ এসে জাদুকরি বাতি জ্বেলে সেই বাতিওয়ালার চাকরি খেল এবং একসময় পদটিকে বিলুপ্ত করাল।

প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে সত্য, কিন্তু পুরনো অনেক পেশাজীবীকে পথে বসিয়েছে।

ওকি গাড়িয়াল ভাই

ওকি গাড়িয়াল ভাই

কত কাঁদি মুই নিথুয়া পা’থারে রে

ওকি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে।

ব্যথিত নারী গাড়িয়ালের জন্য পথের দিকে আর কত চেয়ে থাকবে? গাড়িয়ালের এ গাড়ি যন্ত্রচালিত নয়, গরুটানা গাড়ি। হাতেগোনা কিছু গাড়ি এখনো আছে, মোটর গাড়ি এসে তো প্রায় সব গাড়িয়ালকে বেকার বানিয়ে দিয়েছে। এটি লুপ্ত হওয়ার পথে একটি পেশা।

মুদি দোকানির চাকরিটিও ভয়ংকর হুমকির সম্মুখীন। প্রায় সব ডিপার্টমেন্ট স্টোর কেবল পণ্যতালিকা আর দাম পাঠিয়েই ক্ষান্ত নয়, কোনটা কিনলে কোনটা ফ্রি সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সেদিনের স্পেশাল অফারগুলোও ভেসে উঠছে। দাম, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুদি দোকানির দামের চেয়ে কম। শুধু তা-ই নয়, কোনো কোনো চেইন শপ ফ্রি ডেলিভারি দিয়েও থাকে।

সুতরাং রাস্তার এক প্রান্তে যে মুদি বাকিতে সওদা দিত, তার অস্তিত্বও হুমকির মুখে। ইউরোপ-আমেরিকায় মুদির হাত থেকে তার চাকরিটা ছিনিয়ে নিয়েছে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট প্রভৃতি অনলাইন শপিং কোম্পানিও।

চেক ভাঙিয়ে টাকা আনতেই হোক কিংবা চেক জমা দিতেই হোক, টোকেন নামীয় পিতলের চাকতি নিয়ে পাশে রেজিস্টার রেখে যে টোকেন ম্যান কিংবা উইম্যানকে বসে থাকতে দেখা গেছে—এখন কোথায়? এমনকি অথর্ব খ্যাতির সরকারি ব্যাংকেও টোকেন নিয়ে কাউকে বসে থাকতে দেখা যায় না। আমার এক বন্ধু সরকারি ব্যাংকের টোকেন বালার প্রেমে পড়ে ঘন ঘন তাকে দেখার জন্য এক চেকে হাজার টাকা না তুলে ২০০ টাকার পাঁচটি চেক নিয়ে পাঁচদিন হাসিমুখে তার সামনে হাজির হয়েছে।

সেই টোকেন বালার চাকরিটি সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

আমার বয়ঃসন্ধিকালে দেখা একটি অসাধারণ জাদুকরি চাকরি ছিল কম্পোজিটর।

আপার ক্যাপ, লোয়ার ক্যাপ হাজার হাজার সিসার অক্ষর। অসাধারণ দক্ষতায়, নিপুণ হাতে একটার পর একটা টেনে এনে গ্যালি প্রস্তুত করে ফেলতেন। আমার দেখা হাতে ও কাপড়ে কালিমাখা সেই কম্পোজিটরের নাম মোহাম্মদ ইসমাইল।

গোটা পৃথিবী থেকেই এ পদটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

টাইপরাইটার মেশিনের ব্যবহার নেই। টাইপিস্ট পদবিও সরকারি খাতা থেকে বিলীন হওয়ার পথে।

বিপন্ন পদগুলো

বিলুপ্তি আশঙ্কা যতই দিন যাচ্ছে, ততই তীব্র হয়ে উঠছে। এমন বিপন্ন কয়টি পদের উল্লেখ করা হচ্ছে:

নিউজপেপার ডেলিভারি বয়/গার্ল

পশ্চিমের কাহিনীগুলোয় পড়েছি সেই ভোর থেকে ফায়ার প্লেসের পাশে বসে বুড়িটা দরজার দিকে ঠায় তাকিয়ে আছে। এখনই দিনের খবরের কাগজটা আসবে। ছেলেটি খুব ব্যস্ত, তাকে আর ১ ঘণ্টার মধ্যে ২০০ বাড়িতে ডেলিভারি দিয়ে তার ভোরের কাজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে। বুড়ির একটা ছেলে, মহাযুদ্ধে নিহত। সেই ছেলের কথা মনে করেই প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজটা দেয়ার সঙ্গে কোনো না কোনো খাবার জোর করেই তার হাতে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে হিটিংটা বাড়ি আয়েশ করে কাগজটা পড়তে শুরু করলেন।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের যেসব বাঙালি উচ্চশিক্ষার্থে উত্তর আমেরিকায় গেছেন, তাদের প্রিয় পেশা ছিল এটি।

এদিকে এমনিতেই খরচে কুলিয়ে উঠতে না পারায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দৈনিকগুলোর বেশ কয়েকটি এর মধ্যে প্রকাশনা (মুদ্রণ) বন্ধ করে কেবল অনলাইন চালু রেখেছে। এখন নামমাত্র খরচ করে অনেকেই ই-নিউজ পড়ছেন। নিউজপেপার হকার কিংবা ডেলিভারি বয়টির আর কী কাজ?

এ পদটি বিপন্ন। বিলুপ্তির পথে।

পোস্টম্যান

জ্যাক নিকলসন ও জেসিকা ল্যাঙ্গ অভিনীত ‘দ্য পোস্টম্যান অলওয়েজ রিংস টোয়াইস’ সিনেমাটির কথা মনে পড়ে? কিংবা কেভিন কস্টনার অভিনীত সায়েন্স ফিকশন ‘দ্য পোস্টম্যান’?

পোস্টম্যান আমাদের জীবনের, আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছিল। এই পোস্টম্যান একসময় রানার হয়ে ছুটত (রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/রানার ছুটেছে খবরের বোঝা হাতে)। এই পোস্টম্যান বা ডাকহরকরা কিংবা পিয়ন কদাচিৎ নজরে পড়েন। চিঠিপত্র যিনি বিলি করেন তিনি কুরিয়ার সার্ভিসের চাকুরে। কেবল বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়ে পোস্টাল সার্ভিস সংকুচিত হয়ে আসছে। পোস্ট অফিসের চিঠিপত্র হস্তান্তরের ভার চলে গেছে বেসরকারি খাতের কুরিয়ার সার্ভিসের হাতে, মানি অর্ডার পৌঁছে দেয়ার কাজ করে বি-ক্যাশ ও এ ধরনের সেলফোনভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। একদা ভীষণ আদৃত লাল ডাকবাক্স এখন ভীষণ উপেক্ষিত। হয়তো আরো কিছুকাল পোস্টম্যান পদটি বর্তমান অবস্থায় থাকবে—ডাকঘর পুনর্গঠনের বৈঠকে যাবে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—পোস্টম্যানের কাজকর্ম রাষ্ট্র খাতের হাতছাড়া হয়ে ব্যক্তি খাতের ব্যবসায়ের অংশ হয়ে গেছে।

ক্যাশিয়ার

খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদটি উন্নত দেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, উন্নয়নশীল দেশেও বিলুপ্তির পথে। সত্তরের দশকে একটি পত্রিকার ক্যাশিয়ার গাঙ্গুলি বাবুকে পত্রিকার মালিক কিংবা সম্পাদকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো। অনুমোদিত বিলের তালিকা তার কাছে থাকত—হোক অনুমোদিত, গেলেই টাকা পাওয়া যাবে মনে করার কারণ নেই। নতুন করে লেখা ভাউচার অথেন্টিকেট করে আবারো অনুমোদন নিয়ে তার কাছে পেশ করা হলে বলতেন, লাঞ্চ করার সময়ও দেবেন না, একদিন বললেন, সব ঠিক আছে, কিন্তু ক্যাশ ক্রাইসিস; একদিন সবই ঠিক ছিল, কিন্তু ক্যাশিয়ার নেই। যখন ক্যাশ ও ক্যাশিয়ার দুই-ই আছে, ১০ টাকার পাঁচটি নোট কমপক্ষে পাঁচবার গুনতেন—দুই আঙুলের মাঝখানে নোট রেখে পুরুত্ব পরীক্ষা করতেন, একসঙ্গে দুটো জড়াজড়ি করে মিশে নেই তো?

যা-ই হোক, ৫০ টাকা নিয়ে উঠে আসার সময় শুনলেন আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা—আমি মাসে কত বেতন পাই? কী সব তাইরে নাইরে না লিখে ৫০ টাকাই নিয়ে গেলেন!

ক্যাশিয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিও বিলুপ্তির পথে। এ কালের লেখককে এসব কথা কমই শুনতে হয়, টাকা যদি আদৌ দেন, তাহলে টাকাটা সরাসরি লেখকের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। মুদিখানার মুদি সাহেবও (মোদি নন) যেহেতু অপসৃত হচ্ছেন, ‘সেলফ চেক আউট কিয়স্ক’ পুরো দায়িত্বটাই নিয়ে নিয়েছে।

এ কালের অফিস যেমন হয়ে উঠছে পেপারলেস অফিস, তেমনি সমাজও হয়ে উঠছে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’।

ক্যাশই যদি না থাকল, ক্যাশিয়ারের কী দরকার!

রেফারি ও আম্পায়ার

আমি ঢাকা স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে বিখ্যাত ফুটবল রেফারি ননী বসাককে (বিখ্যাত অভিনেত্রী শবনমের বাবা) গোল খাওয়া দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের হাতে রক্তাক্ত হতে দেখেছি। পরদিন খবরের কাগজে সে ছবি ছাপাও হয়েছে।

আম্পায়ারের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালে উঠতে দেয়নি।

ইউরোপিয়ান লিগে রেফারির গুরুত্ব এমনিতেই কমে গেছে, সেখানে কাজ করছে গোললাইন টেকনোলজি ও ভিডিও অ্যাসিস্টেড রেফারিং (ভিএআর) সিস্টেম। প্রযুক্তি চলে এসেছে রাগবি, টেনিস ও ক্রিকেটে। ২০২০-এ জাপানের টোকিও অলিম্পিক বিভিন্ন আইটেমের ফলাফল নির্ধারণে মানুষের ভূমিকা থাকবে অতি সামান্য।

এ সময় কোনো তরুণ যদি খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অবশ্যই স্বাগত, কিন্তু যদি রেফারি জেড আলম কিংবা আম্পায়ার ভিকি বার্ড হতে চায়, তার জন্য পরামর্শ—ভুল পথে এগোবে না, দুপেয়ে রেফারি ও আম্পায়ারের দিন ফুরিয়ে গেছে।

সংবাদপত্রে (মুদ্রিত) চাকরি

সম্পাদক হোক কি মফস্বল সংবাদদাতা হোক, সার্কুলেশন ম্যানেজার হোক কি বিজ্ঞাপন বিভাগের এক্সিকিউটিভ—সোজা কথা প্রিন্ট মিডিয়ার কোনো পদে চাকরির বাসনা যদি থেকে থাকে, যত শিগগির সম্ভব এই ভূত মাথা থেকে নামানো যাবে ততই মঙ্গল। যারা ঢুকে পড়েছেন তাদের প্রার্থনা হতে পারে—পত্রিকাটির প্রকাশনা যেন আর কয়েক বছর অব্যাহত থাকে।

মুদ্রিত সংবাদপত্রের মৃত্যু ঘটবে, এ ঘোষণাটি অনেক দিন আগের। আশাবাদীরা বলেন, কেয়ামতের ঘোষণাও তো শুনেছি, হচ্ছে না তো। তবে ১ কোটি ৩০ লাখ কপি সার্কুলেশনের সংবাদপত্র যেমন আছে, একদা বিখ্যাত সংবাদপত্র, সে অফিসে এখন তালা ঝুলছে, এমন সংখ্যাও কম নয়।

২০০৫ থেকে এ পর্যন্ত ব্রিটেনে সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন প্রকাশনা বন্ধ হয়েছে প্রায় ২০০টি। যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদপত্রের সংখ্যা দৈনিক ছয় কোটি থেকে সাড়ে তিন কোটিতে নেমেছে; ২০০০ সালে বিজ্ঞাপন থেকে পত্রিকার আয় ছিল ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬-তে তার পরিমাণ ১৯ বিলিয়ন ডলার; সংবাদপত্রের কর্মচারীর সংখ্যা কমেছে ৪০ শতাংশ। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাত বছরে নন-ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ১২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১১৭ বিলিয়নে নেমেছে আর ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ৩২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে।

সোজা কথা, প্রিন্ট মিডিয়া আর্থিকভাবে টিকে থাকার সামর্থ্য হারাচ্ছে। কাজেই মুদ্রিত সংবাদপত্রে ক্যারিয়ার দাঁড় করানোর কোনো কামনা যদি থেকে থাকে, তাহলে সেখান থেকে সরে আসার সময় এসে গেছে, দেরি করলে পরে পস্তাতে হবে। বিশিষ্ট সাংবাদিক বা বিশিষ্ট সম্পাদক হিসেবে পরিচিত হওয়ার আগেই পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাবে।

লাম্বার জ্যাক বা করাতি

বাংলাদেশ ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও বন বিভাগে করাতি স্থায়ী চাকরি রয়েছে, কিন্তু কয়দিন? কাঠ সবচেয়ে বেশি কাটা হয় কাগজ কলের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের কাগজের কলগুলোর ব্যবসা বছরে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করে কমে আসছে। আগামী দিনগুলোয় যখন মুদ্রিত সংবাদপত্র বেরোবে না, বইপত্র পঠিত হবে স্মার্টফোনে (এখনই ব্যাপক পঠিত) মুদ্রণের জন্য কাগজের কী দরকার? কাগজ দরকার না হলে গাছ কাটার কী দরকার? গাছ কাটতে না হলে করাতির কী দরকার?

সুতরাং এটিও বিপন্ন গোষ্ঠীভুক্ত একটি চাকরি।

ড্রাইভার

বাংলাদেশেই সরকারি খাতে ড্রাইভার নিয়োগ কমেছে। যারা গাড়ির প্রাধিকারভুক্ত তারা গাড়ি কেনার ঋণ পান, খোলাবাজার থেকে কম বেতনে ড্রাইভার নেন, একজনকে পছন্দ না হলে অন্য একজনকে। চাকরিতে ঢুকে বেতনের দ্বিগুণ ওভারটাইম পাওয়া আর নিশ্চিত পেনশনের দিন ফুরিয়ে এসেছে। এমনকি স্মার্ট গণমাধ্যমও গাড়ি কিনছে না, ড্রাইভার পদে চাকরি দিচ্ছে না। বিশিষ্ট অতিথিকে টকশোতে নিতে হলে ভাড়াটে ট্যাক্সি কিংবা উবারকে খবর দেয়। চুক্তির ট্রিপ কোম্পানির জন্য লাভজনক, টাকা কম লাগে, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে লাগাতার অর্থ ব্যয় হয় না, আজীবন ড্রাইভারের বোঝা বইতে হয় না। এটা প্রায় নিশ্চিত বছর দশেক পর সরকারকে বিশাল ট্রান্সপোর্ট পুল রাখতে হবে না। কোম্পানির চেয়ারম্যান আর সিইও ছাড়া আর কারো সম্ভবত চাকরিরত ড্রাইভারও থাকবে না।

কাজেই ড্রাইভিং জানতে হবে নিজের গাড়ি চালাতে, ড্রাইভার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে নয়। স্মরণ করানো দরকার, ২০২০-এ টোকিও অলিম্পিকে অতিথিদের চলাচলের জন্য থাকবে ড্রাইভারবিহীন গাড়ি।

আপনার হাতের স্মার্টফোন আপনার ও আপনার বাড়ির কতগুলো জিনিসকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে একবার ভাবুন:

ল্যান্ডফোন: সুতরাং সুইচ বোর্ড অপারেটর, লাইনম্যান, কমপ্লেইন্ট রিসিভার এসব পদও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে; টেলিফোন তৈরির জন্য টেলিফোন শিল্প সংস্থা, টেলিফোন কেবল সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সব চাকরি এখন রিডানডেন্ট; নতুন করে সেখানে লোক নিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই; অ্যান্সারিং মেশিন; টেলিফোন বুথ, পে ফোন; স্ক্যানার; ক্যামেরা, ফিল্ম; ক্যামকর্ডার; রিস্ট ওয়াচ, ক্যালেন্ডার; অ্যালার্ম ক্লক, টাইমার; ভয়েস রেকর্ডার; আইপড, ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার; ক্যালকুলেটর; ম্যাপ, গ্লোব, কম্পাস; টেলিভিশন; জিপিএস নেভিগেশন ডিভাইস; রেডিও; ই-বুক রিডার; ফ্লাশ লাইট; নির্মাণকাজে ব্যবহূত লেভেলার; পোর্টেবল গেমিং ডিভাইস, গেম কনসোল কন্ট্রোলার, বোর্ড গেম; বারকোড স্ক্যানার; পোর্টেবল ভিডিও প্লেয়ার; ইউএসবি থাম্বড্রাইভ; ওয়াকিটকি; বইপত্র; সংবাদপত্র; ফটো অ্যালবাম; ফোনবুক, কন্টাক্ট লিস্ট; নোটবুক, নোটপ্যাড, স্কেচপ্যাড; মুভি; ইন্টারনেট, ই-মেইল, নেট সার্ফিং; ভিডিও চ্যাট; ফর্মোস্ট্যাট; মেজারিং টেপ; গিটার টিউনার; লাইট মিটার; এটিএম/ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড; এয়ারলাইনস টিকিট, রেলওয়ে টিকিট; রিমোট কন্ট্রোল, কার কি; ল্যাপটপ এবং আরো অনেক কিছু।

৫০ বছর আগে অ্যাপোলো ১১ চাঁদে পৌঁছে ফিরে আসতে যত ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, তা যেকোনো স্মার্টফোন প্রযুক্তির সামান্য অংশ মাত্র।

যে তালিকাটি দেয়া হলো এগুলোর নির্মাণ ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত চাকরিগুলোর জন্য কে-ইবা এখন স্বপ্ন দেখবে?

লেখক : সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040979385375977