চার স্কুলে আট প্রধান শিক্ষক! - দৈনিকশিক্ষা

চার স্কুলে আট প্রধান শিক্ষক!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশ অমান্য করে আদালতে বিচারাধীন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার প্রধান শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও নতুনভাবে আরো চারজনকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করার অভিযোগ ওঠেছে। ফলে চার বিদ্যালয়ে আটজন প্রধান শিক্ষক রয়েছেন! এতে স্কুলগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটছে।

নতুনভাবে পদায়নকৃত চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন প্রধান শিক্ষক নভেম্বর মাসে ‘দলবল’ নিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করলেও আগের প্রধান শিক্ষকরা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। তবে তাঁরা নিজেরা একটা হাজিরা খাতা কিনে তাতে স্বাক্ষর করছেন এবং সেটা প্রতিদিন সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

আগের প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সরকারিকৃত যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের আদালতে রিট মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোতে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন না করার জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের স্পষ্ট আদেশ রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শূন্যপদ দেখিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে নতুনভাবে পদায়নকৃতদের সাথে বর্তমানে কর্মরত প্রধান শিক্ষকদের এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। চার স্কুলের মধ্যে তিনজন প্রধান শিক্ষক আলাদা হাজিরা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করলেও একজন এখনো বিদ্যালয়ে যাননি। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে আদালতে রিটের কপি জমা দিতে গেলেও তা গ্রহণ না করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব বিদ্যালয়ে শূন্যপদ দেখিয়ে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর কারণেই মূলত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস বলছে, অধিদপ্তরের আদেশ ও রিট মামলার বিষয়টি নতুনভাবে ৪ শিক্ষকের পদায়নের পর তাঁরা জেনেছেন। 

উপজেলা শিক্ষা অফিস ও অভিযোগে জানা যায়, ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সরকারিকৃত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জঙ্গল সরফভাটা হাজী ছবিউল খাঁ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা আসমা ইসলাম, পোমরা মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিমিক বড়ুয়া, মধ্য পারুয়া শাহেদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাসিনা বেগম, আন্ন সিকদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অলোক নাথ বিশ্বাস হাইকোর্টে রিট মামলা করেন তাঁদেরকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্থায়ীভাবে পদায়নের জন্য। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে।

এদিকে সারাদেশে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব প্রদানের উদ্যোগ নেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে কিছু কিছু বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের রিট মামলা থাকায় পদায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। গত ২২ এপ্রিল শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব-পলিসি ও অপারেশন) বিজয় ভূষণ পাল স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে চলমান রিট পিটিশন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাধীন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বদলি-পদায়ন সমীচিন হবে না এবং এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্যপদ হিসেবে গণনা না করতে আদেশ দেওয়া হয়।

বিচারাধীন রিট পিটিশন মামলা ও অধিদপ্তরের এ আদেশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে রাঙ্গুনিয়ার চার বিদ্যালয়ে নতুনভাবে প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা হলো জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দীন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদায়নে জটিলতার বিষয়ে চার বিদ্যালয়ে আগে থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের সাথে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কথা হয়েছে। তবে শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশ ও রিট মামলার বিষয়টি তাঁরা আমাদের আগে জানাননি। চার শিক্ষকের পদায়নের পর আমরা জেনেছি।’ শিগগিরই বিষয়টি সুরাহা হবে বলে তিনি জানান।

ভুক্তভোগী চার প্রধান শিক্ষক আসমা ইসলাম, সিমকি বড়ুয়া, হাসিনা বেগম ও অলোক নাথ বিশ্বাস বলেন,  উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন চলমান রয়েছে। রিট পিটিশনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মরত প্রধান শিক্ষকরা সপদে থাকার প্রজ্ঞাপনও জারি করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নতুনভাবে পদায়নের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬টি দপ্তরে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় আদালত ও শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশকে অমান্য করে ৪ বিদ্যালয়ে ৪ জন প্রধান শিক্ষক গত ৫ নভেম্বর পদায়ন করেন। এখন ৪ বিদ্যালয়ে ৮ জন প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করলেও নতুনভাবে পদায়ন করা তিনজন আলাদা হাজিরা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। তারা কোনো ক্লাস নেন না। পূর্বের রুটিনেই বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। নতুনদের তাঁরা দায়িত্ব বুঝে দেননি বলে জানান।

সিমকি বড়ুয়া বলেন, ‘সরকারিকরণের আগে এই স্কুলে ৫০০ টাকা বেতনে শিক্ষকতা করেছি। শিক্ষার্থী ভর্তি করতে বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। পাহাড়ি এলাকা আর খামারে কাজ করা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে স্কুলে এনেছি। আর এখন আমাকে স্কুলের মূল দায়িত্ব থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র চলছে। যা খুবই দুঃখজনক।’

আসমা ইসলাম বলেন, ‘পদায়ন করা শিক্ষক নিজে একটি খাতা স্কুলে এনে নিজেই স্বাক্ষর করে খাতাটি নিয়ে চলে যান। স্কুল কর্তৃপক্ষ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না দেওয়ায় এই নিয়ে স্কুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটছে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আকতার বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার চারটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকারা আদালতে রিট মামলা করলেও এর কপি অফিসে জমা দেননি। তাঁদেরকে আদালতের আদেশের কপি জমা দিতে বলা হয়েছে।’ ওই কপি জমা দিলেই যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে তাঁদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032050609588623