চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর আর নেই - দৈনিকশিক্ষা

চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর আর নেই৷ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে রাজধানী ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার (১৫ আগস্ট) তিনি মারা যান৷

তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর৷ শিল্পীর মেয়ে মুনিরা বশীর তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সকাল ৯টা ১০মিনিটে মুর্তজা বশীর মারা যান। আজ র জোহর থেকে আসরের মধ্যে কোনো এক সময়ে মুর্তজা বশীরকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট। মুর্তজা বশীর একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও ঔপন্যাসিক। মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। 

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর রক্তাক্ত আবুল বরকতকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, মুর্তজা বশীরও তাঁদের মধ্যে ছিলেন।

৮৮ বছর বয়সী এ চিত্রশিল্পীকে এর আগেও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ফুসফুস ও কিডনি জটিলতার পাশাপাশি তার হৃদরোগও ছিল।

মুর্তজা বশীরের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনে, এরপর তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেছেন বগুড়ার করোনেশন ইনস্টিটিউশন, ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস (এখন যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) ও কলকাতা আশুতোষ মিউজিয়ামে।

এছাড়াও ইতালির ফ্লোরেন্স একাডেমি দেল্লে বেল্লে আরতিতে চিত্রকলা ও ফ্রেস্কো বিষয়ে ও পরে প্যারিসের ইকোলে ন্যাশিওনাল সুপিরিয়র দ্য বোজার্ট এবং আকাদেমি গোয়েৎসে মোজাইক ও ছাপচিত্রে অধ্যয়ন করেন তিনি। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে এক মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি রাজ্যের বিভিন্ন জাদুঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদর্শন করেন তিনি।  

পরে আইসিসিআর ফেলোশিপে তিনি ‘বাংলার শিল্প ঐতিহ্যের’র উপর গবেষণার জন্য ভারতের বিভিন্ন জাদুঘর প্রদর্শন করেন। পরে ‘মন্দির টেরাকোটা শিল্প’ বিষয়েও তিনি ভারতে গিয়ে গবেষণা করেন।

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে  ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রইং শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে  কমিউনিস্ট পার্টি আহুত ময়মনসিংহের হাজং, ভারতের তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে মুক্ত এলাকা দিবস এই প্রচার অভিযান চলাছিল। ওই সময়ে গ্রেপ্তার হন মুর্তজা বশীর। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ মাস জেল খাটেন তিনি।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে  কলকাতা থেকে প্রকাশিত সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের ওপর ‘পারবে না’ শিরোনামে তার কবিতা ছাপা হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একুশের স্মরণিকায় ‘ওরা প্রাণ দিল’ কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত হয়।
২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার ওপর ‘রক্তাক্ত ২১শে’ শিরোনামে ১২৫২ খ্রিষ্টাব্দে  তিনি লিনোকোটে চিত্রটি আঁকেন,যা হাসান হাফিজুর রহমান  সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ শীর্ষক সংকলনে ১৯৫৩ সালে প্রথম মুদ্রিত হয়।‘রক্তাক্ত ২১’ কে ভাষা আন্দোলনের ওপর আঁকা প্রথম ছবি হিসেবে গণ্য করা হয় বলে এশিয়াটির সোসাইটি জানিয়েছে।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে  ১৬ মার্চ শহীদ মিনার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত বাংলাদেশে চারু ও কারুশিল্পী পরিষদের উদ্যোগে ‘স্বা-ধী- ন-তা’ মিছিলে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে স্বৈরাচারী শাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন।

‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘কালেমা তাইয়্যেবা’, ‘পাখা’ শিল্পী মুর্তজা বশীরের আঁকা উল্লেখযোগ্য সিরিজ। তিনি ‘বিমূর্ত বাস্তবতা’ নামে একটি শিল্পধারার প্রবর্তক। এছাড়াও ফিগারেটিভ কাজে পূর্ব পশ্চিমের মেলবন্ধনে তিনি স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মুর্তজা বশীরের পঁচাশিতম জন্মদিনে এশিয়াটিক সোসাইটিতে ‘মুর্তজা বশীর: মানুষ ও শিল্পী’ শিরোনামে এক বক্তৃতায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, “আমার মনে হয়, আমাদের দেশের অনেক শিল্পীর মতো তার মধ্যেও একটা দোলাচাল আছে। নিজের ছবিতে তিনি কী ফুটিয়ে তুলবেন-স্থানকালের বিশিষ্টতা না আন্তর্জাতিক শিল্পধারার আধুনিক উদ্ভাবনের সংলগ্নতা। 

“তিনি দেশীয় রীতির ঝুঁকেছেন। তবে এখানেই স্থিত থাকেননি। শিল্পী মাত্রেরই মনোজগতের রূপ ও রং বদলায়, বশীরের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে।” চিত্রকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক, ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি পদক পেয়েছেন মুর্তজা বশীর।

তিনি ১৯৬৩ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘কারোয়াঁ’র কাহিনি ও চিত্রনাট্য রচনা করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে  হুমায়ূন কবীর রচিত ‘নদী ও নারীর’ চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক ও প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে  উর্দু চলচ্চিত্র ‘ক্যায়সে কাহু’র শিল্প নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার প্রকাশিত গল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ‘কাঁচের পাখির গান’, ‘গল্প সমগ্র’। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ত্রসরেণু’, ‘তোমাকেই শুধু’, ‘এসো ফিরে অনুসূয়া’, ‘সাদায় এলিজি’। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘আল্ট্রামেরিন’, ‘মিতার সঙ্গে চার সন্ধ্যে’, ‘অমিত্রাক্ষর’।  নির্বাচিত রচনার মধ্যে রয়েছে : ‘মূর্ত ও বিমূর্ত’, ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’। গবেষণাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে বাংলার হাবশী সুলতান ও তৎকালীন সমাজ’।
এছাড়াও ভারতের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জার্নাল অব দ্য নিউম্যাসটেকি সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার’ প্রাক মুঘল যুগের মুদ্রার ওপর বেশ কয়েকটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

মুর্তজা বশীর বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের আজীবন সদস্য। এছাড়াও তিনি জাপানের ফুকুওকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ কমিটির নমিনেটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কলা ও মানবিক গবেষণা মূল্যায়ন কমিটি ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নির্বাচন কমিটির সদস্য ছিলেন।

মুর্তজা বশীর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে আমিনা বশীরকে বিয়ে করেন। তিনি দুই মেয়ে মুনীরা বশীর ও মুনিজা বশীর ও এক ছেলে মেহরাজ বশীর যামীর বাবা। 

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে স্ত্রী আমিনা বশীরকে হারানোর পর তিনি আমিনা বশীর স্মৃতি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073010921478271