চিলির স্কুলগুলোয় ভর্তি নিয়ে গোল - দৈনিকশিক্ষা

চিলির স্কুলগুলোয় ভর্তি নিয়ে গোল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কেতাবি মেধা না তাদের আগ্রহের বিষয়—কোনটিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা নিয়ে গোল বেধেছে চিলিতে। শুক্রবার (১৭ মে) প্রথম আলো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

প্রতিবদনে আরো বলা হয়েছে, চিলির ডান ও বামপন্থী সরকার এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে যার যার আখের গুছিয়ে নেওয়ার তালে থাকলেও আদতে ভুগতে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের। এভাবে চলতে থাকলে চিলির শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে বলে চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন দেশটির শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

নোংরা দালানে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঝুলছে ভাঙা জানালার শার্সি। দেখতে যেমনই হোক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ছেলেদের জন্য শহরের ভেতর নির্মিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট চিলির সবচেয়ে নামকরা স্কুল। ১৮১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ১৭ জন প্রেসিডেন্ট এবং বহু বিশিষ্ট শিল্পী ও বিজ্ঞানী তৈরির কারিগর। দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিশুরা যাতে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ার সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট। অনেকেই বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে সান্তিয়াগোর কেন্দ্রীয় স্কুলটিতে ভর্তি হয়।

গ্রামার স্কুল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট এবং এর মতো অন্যান্য ‘প্রতীকী’ স্কুলের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রামার স্কুলের শুরুটা হয়েছিল মধ্য যুগে। সে সময় যুক্তরাজ্য এবং অন্য ইংরেজিভাষী দেশগুলো সন্তানদের লাতিন ভাষা শেখাতে এ ধরনের বিশেষায়িত স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেয়। পরবর্তী সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লাতিন ভাষার পাশাপাশি একাডেমিভিত্তিক মাধ্যমিক স্কুল চালু করা হয়।

সম্প্রতি চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট বামপন্থী মিশেল ব্যাচলেট বিশেষায়িত স্কুলগুলোর জন্য নতুন একটি নীতি প্রণয়ন করেন। এই নীতি অনুযায়ী এ ধরনের স্কুলগুলো মেধার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বাছাই করতে পারবে না। এ বছর থেকে সান্তিয়াগোর স্কুলগুলোয় এই নিয়ম চালু হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের প্রধান ফার্নান্দো সোতো বলেন, পড়ালেখায় আগ্রহ নেই এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে স্কুলের ‘প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেষ্ঠত্ব’ টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

লিবারেল সেন্টার ফর পাবলিক স্টাডিজের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ সিলভিয়া এইজাগুরি বলেন, নতুন আইন রাজ্যের বাছাইকৃত বিশেষ স্কুলগুলোর ক্ষতি করছে। চিলির বর্তমান ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা এ ধরনের সমস্যা জিইয়ে রাখার পক্ষপাতি নন। তিনি দুটি প্রস্তাব পাস করেছেন। যার ফলে ব্যাচলেটের সংশোধনী আংশিকভাবে বাতিল হয়ে যাবে। পিনেরার প্রথম প্রস্তাবে বিশেষায়িত স্কুলসহ ভালো ফল করা প্রায় ৩০০ স্কুল একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী বাছাই করে নিতে পারবে। এর মধ্যে অর্ধেক আসন বরাদ্দ থাকবে অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের জন্য।

পিনেরার দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী অন্যান্য বেসরকারি স্কুল তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে মিল রেখে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাছাই করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রদের কেতাবি শিক্ষার চেয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য পূরণের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে। সরকারের দাবি, এই ‘স্বচ্ছ ভর্তিপ্রক্রিয়ায়’ মেধা ও শ্রম—দুটোরই মূল্যায়ন হবে।

চিলিতে ‘প্রাতিষ্ঠানিক আভিজাত্য’ একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। এখানকার স্কুলপদ্ধতি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। দ্য গ্রেঞ্জের মতো নামীদামি স্কুলের স্নাতকেরা সমাজের উচ্চ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশ প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ার সুযোগ পায়। অন্যদিকে, রাষ্ট্রসমর্থিত স্কুলগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র এমন সুযোগ পায়। অথচ এসব স্কুলের বেতন অনেক বেশি, আর এখানকার ছাত্ররাই পরীক্ষায় ভালো গ্রেড অর্জন করে। তারপরও ২০১৬ সালে দেশের দুই শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় চিলি এবং ক্যাট লিকায় ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৮ শতাংশ এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত স্কুলগুলো থেকে। 

বামপন্থী চিলিবাসী দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় সমতা আনার দাবি জানাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে সোচ্চার ছিল বিশেষায়িত স্কুলের শিক্ষার্থীদের একাংশ। আন্দোলনের মাধ্যমে তারা আসলে নিজেদের স্কুলেরই ক্ষতি করছে। ২০১১ সাল থেকে অবৈধ দখলে থাকা স্কুল বিল্ডিংয়ের কারণে নিয়োগ ও শিক্ষাপদ্ধতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেরা ২০ স্কুলের তালিকায় নাম নেই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রদের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালে স্কুলটি ৭৮তম অবস্থানে ছিল।

শিক্ষার্থীরা জিতে গেছে, কিন্তু এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে তাদের স্কুলগুলোর। শিক্ষাব্যবস্থায় সমতা আনার লক্ষ্যে বিশেষায়িত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের কেতাবি মেধার ওপর জোর দিয়েছিলেন মিশেল ব্যাচলেট। শিক্ষার মান বাড়ানোর প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন তিনি। অন্যান্য সংশোধনে রাষ্ট্রসমর্থিত স্বাধীন স্কুলগুলোর বেতন কমানো এবং দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বেশি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সেসব প্রস্তাবের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। এবার পিনেরার হাত ধরে পরিবর্তন আসবে—এমনটাই প্রত্যাশা চিলিবাসীর।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিলির ৬৩ শতাংশ অধিবাসী মেধাভিত্তিক শিক্ষার্থী বাছাইপ্রক্রিয়ার পক্ষে। অন্যদিকে, ৭৯ শতাংশ জনগণ দৈবচয়নের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করাতে চায়। বেশির ভাগ চিলিবাসী তাদের গ্রামার স্কুল নিয়ে গর্বিত। শিক্ষাব্যবস্থায় সমতা না এলে নতুন পদ্ধতি স্কুলগুলোয় আর্থসামাজিক বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা করছেন সিলভিয়া।

এই আইন পাস করে নির্বাচনে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন পিনেরা, কিন্তু তবুও লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁকে। কংগ্রেসে তাঁর জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তবে যদি তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী ৩০০ স্কুলও শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করার সুযোগ পায়, তাহলেও অনেকটা এগিয়ে যাবে চিলির স্কুলগুলো। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফিরে পাবে তাদের গৌরবের দিন।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0083539485931396