নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনের উহান শহর থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি সরকারের বিশেষ উদ্যোগে দেশে ফেরত এসেছে ৩১২ জন বাংলাদেশি। খাদ্য সংকট ও বদ্ধ জীবনের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে এবার দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন উহানের পাশের শহর ইচাংয়ে থাকা বাংলাদেশি ১৭২ জন শিক্ষার্থী। ইচাং শহরের চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন এ শিক্ষার্থীরা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আবু ছালেহ বলেছেন, ‘আমরা এখানে খাবার আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে আছি। খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। দিন যত যাচ্ছে, সময় তত কঠিন হয়ে পড়ছে।’ ফেরার আকুতি জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি তিনি বলেন, ‘আমদের এখান থেকে অতি দ্রুত বের করে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। আমরা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই।’
নিজেদের পরিস্থিতি তুলে ধরে ছালেহ বলেন, ‘আমরা নিজেরা চাইলেও নিজেদের ডরমিটরি থেকে বের হতে পারছি না। কারণ আমাদের শহর পুরোপুরি লক-ডাউন। এয়ারপোর্ট, এক্সপ্রেসওয়ে, ট্রেন সার্ভিস, পাবলিক বাস, দোকানপাট, সুপারমার্কেট, ব্যাংকসহ সব সার্ভিস বন্ধ। ইউনিভার্সিটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।’
গত বছরের শেষ দিন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এরপর তা দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। এ পর্যন্ত চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ১৪৩ জনে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছে ৬৩৬ জন। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি দেশে আড়াই শতাধিক মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
উহান থেকে গত সপ্তাহে আসা ৩১২ বাংলাদেশিকে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ইচাংয়ে অবরুদ্ধ দশায় থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, সব মিডিয়া উহান নিয়ে যতটা বলছে আশপাশের শহরে একই পরিস্থিতির মধ্যে থাকা অন্য শহরগুলোর কথা ততটা বলছে না। শিক্ষার্থী দ্বীন মুহাম্মদ প্রিয় বলেন, ‘আমাদের জীবনযাত্রা দিনকে দিন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। আমরা এখানে অবরুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যান্টিন থেকে খাবার দিলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়।’
বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সদুত্তর পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন দ্বীন মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন; কিন্তু তিনি কিছু না বলে বেরিয়ে গেছেন। দেশে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, আমাদের ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, দূতাবাসকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলে, তারা দেশ থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা দেশে ফিরতে চাই, আমাদের এটাই এখন একমাত্র চাওয়া।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ফায়সাল আহমেদ অনিক বলেন, ‘আমরা ২০ দিন ধরে রুমের মধ্যে আটকে আছি। আমাদের এখানে পানি আর খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি কিছু চাইলে তিন বা চার দিন পর পাচ্ছি। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে ইউএসএ, ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া, নেপাল, মরক্কো, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেল তাদের দেশ। অথচ আমাদের নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই।’
শিক্ষার্থীরা খাবার ও পানিসংকটের যে অভিযোগ করেছেন, তাকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব খাইরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘আমি ইউনির্ভাসিটির কোর্স কো-অর্ডিনেটর লি খর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যান্টিন চালু রেখেছেন। ওখানে ফোন করে অর্ডার করতে হয়। সকালে অর্ডার করলে দুপুরের খাবার দিয়ে যাচ্ছে। দুপুরে অর্ডার করলে রাতের খাবার দিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফোনে অর্ডার করলে ইউনির্ভাসিটির গাড়ি দিয়ে রুমে দিয়ে যাচ্ছে। তারা সেসব অভিযোগ করেছে সেগুলোর বাস্তবতা পাওয়া যায়নি। ইউনির্ভাসিটি এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।’