গণতন্ত্রের বিকাশে মুক্তবুদ্ধিচর্চার কোনো বিকল্প নেই। অথচ সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মুক্তবুদ্ধিচর্চার সূতিকাগার ডাকসু, চাকসু, জাকসু, রাকসু, অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কলেজগুলোতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, আবাসিক হল ও বিভাগগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। অথচ সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব, আর যোগ্য নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
যোগ্য ও মেধাবী ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বার্থে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি হলেও দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে।
২০০৭ ও ২০০৮ সাল বাদ দিয়ে ১৯৯০ সালের পর থেকে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে একজন সামরিক শাসক যে দৃষ্টান্ত রাখতে পেরেছেন, গণতান্ত্রিক সরকারগুলো তা পারেনি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশমান সময়ে নেতৃত্ব তৈরির কারখানা ছাত্র সংসদকে কেন অচল করে রাখা হচ্ছিল, তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়।
শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়, প্রতিভাবান ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি, মুক্তবুদ্ধিচর্চা, জাতির ক্রান্তিলগ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং জাতি গঠনমূলক কাজে ছাত্র সংসদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্র সংসদের নেতারা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ জাতির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ ধরনের নেতৃত্ব আর পাওয়া যায়নি ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন ব্যাপারটি যখন সবাই প্রায় ভুলতে বসেছিল, তখন দীর্ঘ ২৮ বছর পর সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজন অনুধাবন করে। আগামী ১১ মার্চ ২০১৯ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন এমনি এমনিই অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এর জন্য সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন করতে হয়েছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হয়েছে, আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠতে হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সদিচ্ছা দেখাতে হয়েছে এবং সরকার সদিচ্ছা দেখিয়েছে। ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হলে আশা করা যায় অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরও অর্গল ভেঙে যাবে।
কী কারণে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ ছিল, অনুসন্ধানে গেলে তার অনেক কিছুই হয়তো বেরিয়ে আসবে। তবে মোটা দাগে বলা যায়- নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা চান না ছাত্র সংসদ সচল হোক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ সচল করে তাদের একতরফা সুবিধা ভোগের পথে বাড়তি ঝামেলা চায় না বলেই হয়তো দিনের পর দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে নিরুৎসাহিত করে গেছে।
অথচ এ সময় বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শিক্ষক সংসদ নির্বাচন’ ঠিকই অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষকরা তাদের অধিকার আদায়ে গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করলেও ছাত্রদের অধিকার আদায়ের পথটি করে রাখছিলেন রুদ্ধ। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে এ রুদ্ধ দুয়ার খুলছে। এখন এ দুয়ার হবে অবারিত।
বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা যে কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাচ্ছিলেন না, সে কারণটিও অগণতান্ত্রিক। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের যেসব ছাত্রনেতা আছেন, তারা দলীয় কর্মীদের ভোটে নির্বাচিত নেতা নন; তারা সংগঠনের নেতা হয়েছেন দলীয় হাইকমান্ডের আশীর্বাদে।
তারা ভালো করে জানেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন যদি দেয়া হয়, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মন জয় করে ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন না। কেননা, সেই ইমেজ তাদের নেই। আর যদি নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কর্তৃত্ব ও গুরুত্ব থাকবে না। তাই ছাত্রনামধারী নেতারাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পুঁথিগত জ্ঞানার্জন আর সনদপ্রাপ্তিই শুধু উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে পারে না। পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জনের জন্য আরও অনেক কিছু জানা অত্যাবশ্যক। উচ্চশিক্ষার বিষয়টি আরও ব্যাপক। পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসমাজের এসব অনুষঙ্গ পূরণ করতে প্রয়োজন ছাত্র সংসদ। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্লাটফর্ম হচ্ছে এ ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদের নেতারা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেন, সেখান থেকেই হয়ে ওঠেন ছাত্রনেতা।
শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই ছাত্রনেতা যখন রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন, তখন শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা তাকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদানে ক্রমেই যোগ্য করে তোলে। রাজনীতি পরিণত হয় মুক্তচিন্তার মানুষের মিলনমেলায়।
রাজনীতি এখন চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। যে যত বড় ব্যবসায়ী, তিনি তত বড় নেতা। রাজনৈতিক মনোভাব নিয়ে দেশসেবা আর ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে দেশসেবার মধ্যে তফাত আছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য রাজনৈতিক নেতা বেরিয়ে না আসায় রাজনীতি হয়ে গেছে কলুষিত। সুবিধাবাদী রাজনীতি প্রকট হয়েছে। টাকার বিনিময়ে নেতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে-গরিমায় সমৃদ্ধ মানুষের রাজনীতিতে আগমনের ঝোঁক কমছে।
শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হয়। অপর্যাপ্ত পরিবহন, লাইব্রেরিতে বই সংকট, হলে সিট না পাওয়া, হল ক্যান্টিনে নিুমানের খাবার ইত্যাদি সমস্যা তাদের নিত্যসঙ্গী।
ছাত্র সংসদ না থাকায় এসব সমস্যা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার কোনো মাধ্যম নেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো প্লাটফর্মে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। ফলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বঞ্চিত হচ্ছিল তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।
এই দীর্ঘ সময়ে ছাত্র নামধারী নেতারা ছাত্রদের কল্যাণ করার পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত ছিল। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল, ফাও খাওয়াসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল তারা।
ছাত্র সংসদ সচল থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নামধারী বহিরাগতরা বিতাড়িত হতে বাধ্য হতো। ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল সোনালি সেই অতীত আবার পুনরুদ্ধার হতো। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দল পরিচালনায় যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বের যে চরম সংকট চলছে, তা দূর হতো। অতীতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সর্বসাধারণের যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল- সেই প্রবণতা আবার জেগে উঠত।
২.
ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন- এটি তাত্ত্বিক কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বাধীনতার আগেও ছাত্র সংগঠনগুলো বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই চলত। যারা এসব তাত্ত্বিক কথা বলেন, তারা গণতন্ত্রকেই বাধাগ্রস্ত করতে চান। গণতন্ত্রকে অবারিত করতে হলে ছাত্র সংগঠনকে সহযোগী সংগঠন বলার দিন ফুরিয়ে এসেছে। এখন সময় এসেছে তাদের রাজনৈতিক দলের অপরিহার্য সংগঠন বলার।
প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য কী? আর অনেক ছাত্র সংগঠনে বছরের পর বছর নতুন কমিটি হয় না। অছাত্রদের দিয়ে চলে ছাত্র সংগঠন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির চেহারা কেমন হওয়া উচিত- এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হল, ছাত্র রাজনীতি তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা টিকে থাকার জন্য ছাত্রদের দলে টেনে অস্ত্র ও অর্থ দিয়েছে।
পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসকরা সরাসরি এ কাজটি করেছেন। ফলে ছাত্র রাজনীতি এখন আর ছাত্র রাজনীতিতে নেই। তারা লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে। তারা ছাত্রদের বিষয় নিয়ে কাজ করে না। তারা এখন বিত্তবান, ক্ষমতাবান। মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতিতে নেই। সাধারণ ছাত্রদের রাজনীতির প্রতি তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনীহা।
৩.
ছাত্র রাজনীতির নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের সময় এসেছে। পরাধীন ও স্বাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতির চরিত্র কখনোই এক হতে পারে না। আসলে স্বাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতি কেমন হবে, আমাদের নীতিনির্ধারকরা তা নির্ধারণে গুরুত্ব দেননি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাশ পড়ে- শুধু এই জুজুর ভয় দেখিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া সে ইঙ্গিতই বহন করে। বললে বেশি বলা হবে না যে, নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বহীনতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারেনি এবং দিনের পর দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র রাজনীতি এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
ছাত্র রাজনীতি হতে হবে স্বাধীন। তারা কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না। তারা ছাত্রদের নিয়ে কাজ করবে। তাহলে ছাত্র রাজনীতি আবার গৌরবের ধারায় ফিরবে। জাতির প্রয়োজনে তারাই মাঠে থাকবে।
বাংলাদেশে নেতৃত্বের সংকট কথাটি প্রায়ই শোনা যায়। আরও শোনা যায়, ব্যবসায়ী ও আমলা দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভরে গেছে। বড় দুটি দলের নেতৃত্বেই এখন আমলা ও ব্যবসায়ীদের আধিক্য লক্ষ করা যায়।
জাতীয় সংসদে বর্ন পলিটিশিয়ান, আমলা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন্ শ্রেণীর পার্সেন্টেজ কত- এমন হিসাব করতে গিয়ে দেখা গেছে, আমলা ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৫০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা করে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সেদিন দূরে নয়, যেদিন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে, বিশেষ করে জাতীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে আমলা ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা সার্বক্ষণিক রাজনীতিকদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।
কেন এমন হচ্ছে? এ প্রশ্ন এখন অনেক রাজনীতিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছেন। তাদের ক্ষীণ কণ্ঠে যেসব কথা উঠে এসেছে সেগুলোর মধ্যে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ হল- তৃণমূল থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি হওয়ার, সেটি বিকশিত ও পরিপক্ব হওয়ার প্রক্রিয়া থেমে গেছে। এ প্রক্রিয়ারই একটি হল দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া।
৪.
১১ মার্চ ২০১৯ অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবার যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হলে খুলে যাবে দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দ্বার। ছাত্রদের গঠনমূলক রাজনীতিতে মুখরিত হতে থাকবে দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনীতি যেমন একদিনে কলুষিত হয়নি, তেমনি একদিনেই সমাজে দুর্নীতি ডালপালা বিস্তার করেনি।
যে বিষয়গুলো একদিনেই ঘটেনি, সেগুলোকে নির্মূলের দ্রুত কোনো মাধ্যম নেই। দুদককে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কমিয়ে আনা যাবে; কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে, তাকে নির্মূল করবে কোন দুদক?
এ প্রশ্নেরও উত্তর জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে জন্য তিনি যেখান থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি শুরু হয় সেখান থেকেই শুরু করেছেন। ডাকসু নির্বাচন দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দ্বার খুলে দিয়েছেন।
লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে দেশের রাজনীতিতে প্রকৃত রাজনীতিকদের আধিক্য ঘটাবেন। তিনি ভালো করেই জানেন, ছাত্রাবস্থা (নিজের মতো) থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিকই এমন দেশপ্রেমিক হয়ে গড়ে ওঠেন, যার দ্বারা দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সে কাজটিই শুরু করেছেন।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক
সৌজন্যে: যুগান্তর