ছাত্র হত্যাকারী সামরিক শাসকের পক্ষে রুবানা হকের ভূমিকা ফের আলোচনায় - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্র হত্যাকারী সামরিক শাসকের পক্ষে রুবানা হকের ভূমিকা ফের আলোচনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের কথা। সেনা শাসক জেনারেল এরশাদের যুগ। ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা ভবনের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের পৃথক মিছিলে পুলিশ পৃথকভাবে ট্রাক চাপা দেয় ও গুলি করে। এতে নির্মমভাবে নিহত ও  আহত হন অনেক ছাত্রছাত্রী। এর জেরে কয়েকমাস বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার অধিকার আদায় করতে গিয়ে পুলিশের ট্রাক চাপা ও গুলিতে নিহত ছাত্রদের সম্পর্কে সেদিন বিটিভির এক অনুষ্ঠানে ডাহা মিথ্যাচার ও কটূক্তি করেন রুবানা। প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাজেহাল করে চিরদিনের জন্য ক্যাম্পাসছাড়া করেছিলেন রুবানাকে। ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। 

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারির ছাত্রআন্দোলনের খণ্ড চিত্র | ছবি : সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনার এই মহামারি সময়ে সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও এক কঠিন সময় পার করছে। করোনার আক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। সরকারের নির্দেশে সব মানুষ যখন ঘরবন্দি ঠিক তখনই গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাধ্য করা হচ্ছে কাজে যোগ দিতে। গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠনের বিজিএমই’র সভাপতি সেই রুবানা হক। করোনার এই মহামারির কালে তিনি লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মীর জীবনের নিরাপত্তার চাইতে ব্যবসায়িক দিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। ডাকসুর সাবেক নেতা, লেখক, বুদ্বিজীবী, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, সাবেক ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতাসহ অসংখ্য মানুষ তীব্র সমালোচনা করছেন গার্মেন্টস মালিকদের। সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের অতীত ভূমিকা। 

আরও পড়ুন: ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান বিজিএমইএ সভাপতির

রাজধানীতে শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বর। ছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকম 

ডাকসুর সাবেক নেতা ও কবি জাফর ওয়াজেদ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, “ফজলে লোহানী ও হানিফ সংকেতের ‘যদি কিছু মনে না করেন’ নামক অনুষ্ঠানে একটি অংশে ছিল ‘কইনছেন দেহি’। যাতে অংশ নিতেন ঢাবির ছাত্রী রুবানা। আমরা তা ভুলি কি করে?”

বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী লায়লা আফরোজ লিখেছেন, “১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরশাসক এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হাজার ছাত্রছাত্রীর এক শ্বান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালায়। আমাদের চারপাশ থেকে একে একে টুপটাপ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জাফর-জয়নাল-দীপালি। আহত হয় আরো অনেক ছাত্রছাত্রী। এরপর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক নাগাড়ে ৫ মাস তালাবদ্ধ করে রেখে আমাদের শিক্ষা জীবনকে ঠেলে দেওয়া হয় এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সেই দিনগুলোর কথা।”  

“সেই সময়, বিটিভি-র এক উল্লেখযোগ্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে রুবানা সম্পূর্ণ বানোয়াট এক মিথ্যা রিপোর্ট প্রচার করে দেশবাসীকে বলে, ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি কিছুই হয়নি। এই জন্য ইউনিভার্সিটি খোলার পর তৎকালীন ছাত্ররা তাকে হেনস্থা করে বলে জানা যায়। স্বামী আনিসুল হকের (সাবেক মেয়র, ঢাকা উত্তর সি. ক.) মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন বাদে তিনি দেশবাসীর সকল সমবেদনা পুঁজি করে আবার লাইম লাইটে এসে পড়েন। সেই রুবানা এখন পোশাক শিল্পের মালিকদের প্রতিষ্ঠান ‘বিজিএমিএ’-এর সভাপতি। এই উদ্ভূত বিশ্ব পরিস্থিতিতে তার কাছ থেকে আমরা এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কি আশা করতে পারি।”

আরও পড়ুন : ১৪ ফেব্রুয়ারি : স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস ও শিক্ষা ভবন চত্বর

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারির ছাত্রআন্দোলনের খণ্ড চিত্র | ছবি : সংগৃহীত

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছেন, “১৯৮৩’র ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা অধিকার আদায় করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদের সম্পর্কে বিটিভিতে কি কটূক্তি করেছিলেন রুবানা তা আজও কানে বাজে চোখে ভাসে।”

প্রগতিশীল লেখক অদিতি ফাল্গুনী গায়েন ফেসবুকে লিখেছেন, “রুবানা হকের কাছ থেকে আশা করার কবেই বা কি ছিল? যদিও এতটা নীচতা, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা ও স্বার্থপরতা শয়তানের কাছ থেকেও মানুষ আশঙ্কা করে না। তবে এই মহিলাই আশির দশকে সামরিক সরকারের বন্দনা গেয়েছেন । তারপর সময়ের পরিক্রমায় তারা তাদের মুখে ভালমানুষীর মাস্ক পরেছেন। বিস্মৃতিপরায়ণ বাঙ্গালী সব ভুলে আবার তাদের ক্ষমা করেছে। আজ রুবানা তার পুরণো চেহারাই চেনালেন। কিন্ত ঈশ্বর যেন রুবানা-বিজিএমইএ-রাষ্ট্র-সরকার সহ আমাদের মত সুবিধাভোগী উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের কাউকে কখনো ক্ষমা না করে- এই চৈত্রের গরমে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার লম্বা পথে অসংখ্য শ্রমিক ভাই-বোনকে হাঁটিয়ে এনে আবার কাল তাদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের জন্য। আমরা সবাই যেন অতি দ্রুত সমূলেই ধ্বংস হই।”

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারির ছাত্রআন্দোলনের খণ্ড চিত্র | ছবি : সংগৃহীত

 আরো অনেকের লেখায় বিটিভির অনুষ্ঠান ও রুবানা হকে বক্তব্য নিয়ে যা উঠে  এসেছে তা মোটামুটি এরকম: 

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি কুখ্যাত মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ১৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে বিশাল মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্রা শুরু করে হাইকোর্টের কাছে পৌঁছলে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের নির্দেশে মিছিলে গুলি চালানো হয়। মৃত্যুবরণ করেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, ফারুক, দিপালী সাহাসহ আরও অনেকে। সামরিক জান্তা লাশ গুম করে অনেকের। সেই দিন রাতে বিটিভিতে ফজলে লোহানী - ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানে সদ্য ঝরে যাওয়া তাজা প্রাণ ছাত্র-ছাত্রীদের এবং শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে নানা ব্যঙ্গ এবং কটূক্তি করে। দোষারোপ করে বিরোধী দলগুলোকে!

রাজধানীতে শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বর। ছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকম 

সেই কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, স্বৈরশাসকের নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন এবং বৈধতা দিতে কয়েক জন টোকাইকে বিটিভির অনুষ্ঠানে ধরে এনে তাদের দিয়ে বলানো হয়- ছাত্ররা তাদের টাকা দিয়ে আর পাউরুটি কলা খাইয়ে পুলিশের উপর ইট পাটকেল মারায়, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ায় এবং পুলিশের চোখ তুলে নেয় ছাত্ররা। বাধ্য হয়ে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। আর ইতিহাসের সেই জঘন্য সাক্ষাৎকারটি যিনি নেন তিনিই হলেন আজকের বিজিএমইএ -এর সভাপতি রুবানা হক। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ ছাত্রসমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে রুবানা হককে। 

...... তিন মাস পর গোপনে পরীক্ষা দিতে এলে তারই সহপাঠিনীরা মধুর ক্যান্টিনে এসে খবর দেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীদের। খবর পেয়ে জ্বলে ওঠে ছাত্রসমাজ। ছুটে যায় পরীক্ষা হলে। খুঁজে বের করে ওই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র.... রুবানাকে পরীক্ষা হল থেকে টেনে বের করে .........বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062408447265625