প্রথম কথা হল, ছাত্র রাজনীতির নামে আমরা যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছি, সেটি তো চলতে পারে না। শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করছে; কিন্তু পড়ালেখা উন্নত হতে হবে, ক্যাম্পাসে জ্ঞানার্জনের পরিস্থিতি থাকতে হবে- সে ধরনের কোনো দাবি-দাওয়া তো তারা করছে না। রোববার (১৩ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, হওয়ার কথা ছিল নিজেদের অধিকার সচেতনতার পাশাপাশি ছাত্ররা জ্ঞানার্জনে মগ্ন। কিন্তু সে রকম পরিবেশ তো তৈরি করা যাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের শিক্ষক সমিতি, আমরা শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাংগঠনিক রাজনীতি বুয়েটে নিষিদ্ধ থাকবে।
তবে আমরা জানি, ছাত্রদের প্রাণশক্তি অফুরন্ত। সেই প্রাণশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু এ প্রাণশক্তি ব্যবহার করা যাবে না, যদি ছাত্রদের বিভিন্ন ইতিবাচক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করা না হয়। দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নানা কাজে ছাত্রদের জড়িত রাখা না গেলে তাদের প্রাণশক্তি থেকে উপকার পাওয়া যাবে না। ছাত্ররা সব সময় অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে। সুতরাং এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে তারা উন্নয়নমূলক ও উন্নয়ন-অনুকূল কাজে জড়িত থাকে। যেমন- বয়স্ক শিক্ষা, স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাঘাট মেরামত ইত্যাদি ছাত্রদের দিয়ে করানো গেলে দেশের প্রতি তাদের ভালোলাগা কাজ করবে। মা তার সন্তানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কেন? কারণ তিনি সন্তানের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এভাবে ছাত্ররা যদি দেশের নানা প্রয়োজনীয় কাজে নিজেদের জড়িত রাখে, তবে তারাও দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হবে।
ঢাকায় যে যানজট, এটি দূর করার জন্য ঢাকার চারপাশে চক্রাকার রাস্তা দরকার। এটি ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে করতে পারে। তবে এর জন্য দরকার নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্ব যেমনটি বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন। এমনভাবে দিয়েছেন যে, ভোঁতা-নিরস্ত্র, সহজ-সরল বাঙালিকে মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি শ্রেষ্ঠ গেরিলা বানিয়ে ফেলেছেন। এমনভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু যে, মানুষ বুঝতেই পারেনি তিনি তাদের কী স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, কী দিতে যাচ্ছেন। ছাত্রদের মধ্য থেকে এ ধরনের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সে ধরনের কিছু তো এখন হচ্ছে না।
স্বাধীনতার সময়, পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর থেকে শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে ছাত্ররা। কিন্তু এখন ছাত্ররা জড়িয়ে পড়েছে নানা অপকর্মে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সংযোগের সুবিধা ব্যবহার করে হয়ে পড়েছে বেপরোয়া। এখন দলীয় রাজনীতির বাইরে নিয়ে ছাত্রদের আবারও দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ এবং ইতিবাচক মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র সংসদ ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সেটি করা যেতে পারে। এখন সেদিকে নজর দিতে হবে। নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক বানাতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সেটি করতে পারে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ আমরা একটা ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখনই আমাদের অন্যরা অনুসরণ করতে যাবে কেন? তবে ছাত্রদের দলীয় রাজনীতি যেহেতু ভালো কিছু এখন আর দিচ্ছে না, সেহেতু এটি না রেখে ছাত্রদের কল্যাণমূলক, দেশ ও সমাজের প্রতি নানা উদ্যোগে নিঃস্বার্থভাবে জড়িত রাখার দিকে মনোযোগী করানোই বেশি দরকার।
ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ : অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট।