সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনে বিগত দশ বছরে ছাত্র রাজনীতির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিহত হয়েছে ৫৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই নিহত হয়েছে ৩৯ শিক্ষার্থী। আর ছাত্রলীগের হাতে নিহত হয়েছে ১৫ জন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা পরিচয় গোপন করে অনুপ্রবেশ করেছে ছাত্রলীগে। সেই হত্যকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের অনেকেই প্রকৃত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নন। ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। বিগত দশ বছরের বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। ছাত্রলীগের হাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্দয় নিষ্ঠুর নির্যাতনে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর আলোচনায় এসেছে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শংকর কুমার দে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ এই সময় একাধিক সহিংসতা, সন্ত্রাসসহ নানা অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার ছাত্রলীগের পদস্থলনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগে একাধিক কমিটি হয়েছে ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনুসন্ধানের জন্য। প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব টিম দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ছাত্রলীগের ব্যাপারে এই সমস্ত অনুসন্ধান এবং রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ছাত্রলীগকে গিলে খাচ্ছে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র শিবিরের কার্যক্রমগুলো আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে যায়। এই সময় ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদল পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১২ এর পর থেকে ছাত্র শিবিরের কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্রলীগে যোগদান করে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ছাত্রশিবিরের পরিচয় গোপন রেখে নতুন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ হিসেবে যোগদান করানো হয়েছে।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হন ঢাকা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদ। তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে এ নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ছাত্রশিবির থেকে আসা কিছু লোকজন এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নসরুল্লাহ নাসিমকে হত্যাকাণ্ডের পেছনেও ছাত্রশিবির থেকে আসা ছাত্রলীগ কর্মীদের ভূমিকা ছিল বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ছাত্রলীগের বিগত কমিটি গঠিত হওয়ার পর ছাত্রলীগের এই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এই সময় দলের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আন্ষ্ঠুানিকভাবে এটাও বলেছিলেন যে, ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছাত্রশিবির প্রবেশ করেছে। ২০১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে শুধু ছাত্রশিবির নয়, ছাত্রদলেরও একটা বড় অংশের প্রবেশ ঘটে। এরাও ছাত্রলীগের মধ্যে প্রবেশ করে বিভিন্ন রকম অপকর্ম ঘটাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের শিবিরকরণের যে পরিকল্পিত নীলনক্সার বহির্প্রকাশেই এখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।