অন্তর্দ্বন্দ্বের জের ধরে আবার সংঘর্ষে জড়াল ছাত্রলীগ। গত শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে চলা সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ও শিক্ষকদের বহন করা বাস। কোনো ক্লাস-পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। অন্যদিকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। রোববার রাত ৮টা থেকে দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর এবং হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
অন্তঃকলহ, আধিপত্য বিস্তার কিংবা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগের সংঘাতের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্ব গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। টানা তৃতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য অনেক। কিন্তু সাফল্য অনেক ক্ষেত্রে ম্লান হয়ে গেছে এই সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কারণে। অতীতে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘ক্যাম্পাসে যারা গণ্ডগোল করছে সেই ছাত্রলীগের প্রয়োজন নেই’ বলেছেন। তার পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য কমেনি, বরং বেড়েছে। টেন্ডারবাজি থেকে ভর্তি বাণিজ্য, সব কিছুতেই সংগঠনটি অপ্রতিরোধ্য। কারো নিয়ন্ত্রণই মানছে না ছাত্রলীগ।
অতীতের গৌরবময় ছাত্ররাজনীতি এখন শুধুই স্মৃতি। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন মেধাবী ছাত্রনেতারা। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ—সব ক্ষেত্রেই ছাত্রদের ভূমিকা উজ্জ্বল। সামরিকতন্ত্রের কবলে পড়ে নীতি ও আদর্শের সেই পথ থেকে সরে আসে ছাত্ররাজনীতি। আজকের ছাত্রলীগ যেন সেই ধারাবাহিকতাই বহন করছে। এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ছাত্রলীগ ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে নিজেদের এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখান থেকে ফিরে আসার কোনো পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না। দলের সাবেক নেতাদের বিভিন্ন সময় সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকেই সংগঠনটি সম্পর্কে বিভিন্ন সময় হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাতে কোনো পরিবর্তন যে হয়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা যেন বলে দিচ্ছে, ছাত্রলীগে শৃঙ্খলা নেই। সংগঠনটি যেন অরাজকতার লাইসেন্স নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শুধু ছাত্রদের কাছে নয়, দেশের মানুষের আস্থা হারাবে ছাত্ররাজনীতি। তার দায় বর্তাবে ছাত্রলীগের ওপর। কাজেই সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনই ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযানও চালাতে হবে।