ছাত্রলীগে হবে ‘শুদ্ধি অভিযান’ - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রলীগে হবে ‘শুদ্ধি অভিযান’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শুদ্ধি অভিযানের উদ্যোগ নিচ্ছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আশা, এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে বিতর্কমুক্ত হবে সংগঠন। অনুপ্রবেশ ঠেকানো গেলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও কমবে বলে ধারণা তাঁদের। এ লক্ষ্যে শিগগিরই ছাত্রলীগের প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে এই অভিযান শুরু হবে। পদধারী বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় ও ছাত্রলীগে সক্রিয়তাকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে ভাবছেন তাঁরা। রোববার (২০ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রফিকুল ইসলাম ও হাসান মেহেদী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১১ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় অনেকে বিরোধী মত পাল্টিয়ে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। আগের পরিচয় গোপন রেখে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ছাত্রলীগের পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন। মত পাল্টানোর পর ছাত্রলীগার বনে যাওয়া এসব নেতাকর্মী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন, যা সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করছে ছাত্রলীগ। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি সংগঠনের অন্য নেতারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পক্ষে সরব হয়ে উঠেছেন।

চলতি বছরের ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তবে অভিযোগ ওঠে এই কমিটির এক-তৃতীয়াংশই বিতর্কিত। কেউ বিবাহিত, অছাত্র, শিবিরকর্মী, মাদকাসক্ত, হত্যা মামলার আসামি, আগে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ছাত্রলীগের বড় পদও বাগিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও বিগত কমিটির বেশ কয়েকজন নেতাকে পদ না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কমিটি ঘোষণার পরপরই এ নিয়ে ক্ষোভ জানান পদবঞ্চিতরা। দীর্ঘ ৩৪ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি ও চার দিনের আমরণ অনশন করেন পদবঞ্চিতরা। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তাঁরা।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতাদের দাবি, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে কর্মী সংকটে পড়ে সংগঠনটি। সে সময় ১৯টি হলের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল,কবি জসীমউদ্দীন হল, জগন্নাথ হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও অমর একুশে হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে সক্ষম হয়। বাকি হলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মী সংকটের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। ছাত্রলীগ সক্রিয় থাকায় অনেককে পদ দিতে চাইলেও পদ না নিয়ে বাড়ি চলে যান। পদ পেয়েও কেউ কেউ কান্নাকাটিও করেন। সরকার পরিবর্তনের ভয়ে ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগের ঘটনাও ঘটে।

আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে নেতাকর্মী সংকটে থাকা হলগুলোই তখন নেতা তৈরির ‘কারখানায়’ পরিণত হয়। গঠনতন্ত্রে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও করা হয় ১৫১ সদস্যের। কোনো কোনো হলে আরো বেশি সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়। সে সময় ছাত্রলীগে বড় ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এই বিষয়ে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, ‘৫১ সদস্যের কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ১৮ জনের নাম পাওয়া যায়। বাকি পদগুলো তাদেরকে না জানিয়েই দেওয়া হয়, তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগ করবে না বলেও জানায়। এখন তারা ছাত্রলীগের বড় বড় নেতা বনে গেছে।’

ছাত্রলীগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্যের মধ্যে ১০৮ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রবহির্ভূত নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জনের নাম প্রকাশ না করেই পদ শূন্য করেন তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে এই পদগুলোতে নতুন করে কাউকে পদায়ন করা হয়নি। কিছুদিন আগে নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ গড়তে অঙ্গীকার করেন। তবু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেননি।

তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া ও পদবঞ্চিতদের নতুন করে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তাঁরা।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, নেতৃত্ব বাছাইয়ে খুঁটিনাটি খতিয়ে না দেখায় ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ছাত্রলীগের সক্রিয়তা ও আগের পদ বিবেচনায় না নিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে পদায়ন করা অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ। কেন্দ্রীয় সংসদেই নয়, জেলা পর্যায়ের ইউনিটেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করা ও অনুপ্রবেশ রোধে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতার ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো এখন সময়ের দাবি।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে অনেক ইউনিটের বেশ কিছু অনুপ্রবেশের তথ্য পাওয়া গেছে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করে পদধারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ছাত্রলীগ নেতারা।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য অনুপ্রবেশের বিষয় স্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনীতিতে সক্রিয় হতে সংগঠনের বিধি মোতাবেক কর্মী যাচাই-বাছাই করা হবে। ছাত্রলীগের সব ইউনিটে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেতা বানানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হবে। ছাত্রলীগে কোনো অনুপ্রবেশকারী থাকবে না। বিতর্কিত কাউকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগ হবে আদর্শিক সংগঠন।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগে বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শীর্ষ নেতারা সংগঠনকে নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে ব্যক্তি সম্পর্কের ভিত্তিতে নেতা বানিয়েছে। অনেকে এক দিনও রাজনীতি না করে পদ পেয়েছে, যা ছাত্রলীগকে দুর্বল করেছে। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পায়নি অনেকে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছে। ত্যাগী কর্মীদের যথার্থ মূল্যায়ন না করলে সংগঠন টিকবে না। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিতর্ক ও অনুপ্রবেশমুক্ত করা।’

ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করার আন্দোলনের মুখপাত্র এবং ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগে নানাভাবে অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে আর এই অনুপ্রবেশকারীরাই ছাত্রলীগকে সর্বনাশ করছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদেও বিতর্কিতরা জায়গা পেয়েছে। সংগঠনকে কলঙ্কমুক্ত করতে বিতর্কিতদের বাদ দিতে হবে। এটা নিয়ে টালবাহানা শুনতে চাই না।’

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071079730987549