ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক বাণিজ্য, অর্থের বিনিময়ে বিরোধী মতাদর্শীদের দলে স্থান দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের বাদ দেয়া হয়। গত শনিবার গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় গুরুতর সব অভিযোগ ওঠে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে ৮৬ কোটি টাকার চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ ওঠে উক্ত দুই নেতার বিরুদ্ধে। তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তাদের অপরাধের প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। সোমাবর (১৬ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
চাঁদাবাজির জন্য ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দেয়ার সংশ্লিষ্টদের আমরা সাধুবাদ জানাই। ছাত্র সংগঠনটির ইতিহাসে চাঁদাবাজির জন্য এবারই প্রথম এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হলো। ছাত্রলীগের উক্ত দুই নেতার অন্যায়-অপকর্ম ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছিল। সংগঠনের ভেতর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত যে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে সেটি একটি সুখবর। আমরা চাইব, যেসব অভিযোগে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে সেসব অভিযাগের সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু পদ থেকে সরিয়ে দেয়াই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করার স্বার্থে তো বটেই, ছাত্রলীগের স্বার্থেও ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী নিপীড়ক, সহপাঠী নিপীড়ক, অনুপ্রবেশকারী প্রভৃতিতে ছাত্রলীগ তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণীর নেতা ছাত্রলীগের চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। কারা ছাত্রলীগের নেতাদের অন্যায় মদদ দেন সেটা সরকারের না জানার কথা নয়। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের গডফাদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তাদের কারণে ছাত্রলীগকে সঠিক পথে ফেরানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে সংগঠনটির সাংগঠনিক পদ থেকে সরে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। তাতেও ছাত্র সংগঠনটি বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে বিরত হয়নি। সংগঠনের কোন পদ থেকে সরে দাঁড়ানো বা সরিয়ে দেয়া কার্যকর কোন সমাধান দিতে পারে না। অন্যায়-অপরাধ কার্যকরভাবে বন্ধ করতে হলে আইনি পদক্ষেপ নিতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার কাছে ছাত্রলীগের উক্ত দুই নেতার অপরাধের প্রমাণ আছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়াই বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।