ছাত্রলীগের কমিটিতে শিবির, ছাত্রদল, মাদকাসক্ত - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রলীগের কমিটিতে শিবির, ছাত্রদল, মাদকাসক্ত

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে রুহুল আমিন ছিলেন গাজীপুর সদরের কাউলতিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এক যুগের মাথায় তিনি এখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের একসময়কার সাথি (ছাত্রশিবিরের একটি পদবি) এইচ এম তাজউদ্দিন হয়েছেন ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। যিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা শাখা শিবিরের অর্থ সম্পাদক, পাঠাগার সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আহমেদ জায়িফ ও আসিফ হাওলাদার।

৩০১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন মাদকাসক্ত, বিবাহিত, বহিষ্কৃত, মামলার আসামিসহ বিতর্কিত অনেকে। ছাত্রলীগের একাংশ নতুন কমিটির ১০৭ জনের বিরুদ্ধে এমন নানা অভিযোগ তুলেছে। কমিটি থেকে এসব ‘বিতর্কিতদের’ বাদ দেয়া এবং ‘যোগ্যদের’ পদে বসানোর দাবিতে এক মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৫০ নেতা। গতকালও তাঁদের এই কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। এঁদের ১১ জন বর্তমান কমিটিতে পদ পেয়েছেন, তবে পদ নিয়ে সন্তুষ্ট নন তাঁরা।

কমিটিতে বিতর্কিতদের জায়গা হওয়ার পেছনে আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের মুখপাত্র ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছাড়া বিতর্কিতরা কমিটিতে কোনোভাবেই জায়গা পেতেন না। এখানে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে।’

তবে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরা সবাই ছিলেন সদ্য সাবেক কমিটির (সভাপতি সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন) আস্থাভাজন। পদ-পদবি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় তাঁরা তখন অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পুরোনো সিন্ডিকেট (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্ধারণে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটা চক্র) ভেঙে নতুন সিন্ডিকেট সৃষ্টির কারণে বর্তমান কমিটিতে এঁরা স্থান পাননি।

ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর গত ১৩ মে সংগঠনটির ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেদিন সন্ধ্যায় কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে সংগঠনের কয়েকজন নারী নেতাসহ ১০-১২ জন আহত হন। এরপর ২৬ মে থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন পদবঞ্চিতরা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ অনুযায়ী, কমিটিতে যে ১০৭ জন ‘বিতর্কিত’ স্থান পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২৫ জন বিবাহিত (ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বিবাহিতদের নেতা হওয়ার সুযোগ নেই), ১৯ জনের পরিবার সরাসরি বিএনপি কিংবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, ১১ জন মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, ৮ জন বিভিন্ন মামলার আসামি, ৬ জন ব্যবসায়ী, ৩ জন বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত, ২ জন ছাত্রলীগ থেকে আগে বহিষ্কৃত, ৬ জন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা, ৬ জন চাকরিজীবী বা সরকারি চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত। এ ছাড়া ১৪ জন রয়েছেন যাঁরা প্রথমবারের মতো সংগঠনে পদ পেয়েছেন। ৭ জন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পরও পদবি পেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘আমরা বিব্রত। আগে এমন অভিযোগ আসেনি। কমিটি ঘোষণার পরই অভিযোগ আসা শুরু হয়।’ পদ দিতে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ ‘বানোয়াট ও মিথ্যা’ বলে দাবি করেন তিনি।

আর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর দাবি, ছাত্রলীগকে সিন্ডিকেটের হাতে ফিরিয়ে নিতেই পদবঞ্চিতরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

অনুপ্রবেশকারী ও বয়সোত্তীর্ণ

ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা হয়েও ছাত্রলীগের ধর্ম সম্পাদকের পদ পান এইচ এম তাজউদ্দিন। তিনি দাবি করেন, শিবিরে তাঁর পদ-পদবিসংক্রান্ত যে বৃত্তান্ত ও ফরম আন্দোলনকারীরা প্রচার করছেন, সেটা ঠিক নয়। তাঁকে হেয় করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এটা করছেন।

তবে ওই ফরমের একটি কপি ছাত্রশিবিরের দুজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার কাছে পাঠালে তাঁরা নিশ্চিত করেছেন, ফরমটি সঠিক।

আর একসময় ছাত্রদল নেতা হয়েও ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রুহুল আমিন দাবি করেন, ছাত্রদলের সেই রুহুল আর তিনি একই ব্যক্তি নন।

তবে রুহুল আমিন ছাত্রদলের যে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন, সেই কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ছাত্রদলের নেতা রুহুল আমিনের ছাত্রলীগ নেতা হয়ে ওঠা তাঁদের কাছে বিস্ময়।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হতে হলে বয়স ২৯ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি তানজিল ভূঁইয়ার ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯ তম সম্মেলনের সময় তাঁর বয়স ছিল ২৯ বছর ৬ মাস। বয়সোত্তীর্ণ হওয়ায় সে সময় নির্বাচন কমিশন সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল। অথচ সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। আরেক সহসভাপতি সোহেল রানার জন্ম ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর। বয়স না থাকার কারণে তিনিও গত বছর মনোনয়ন নিতে পারেননি। অথচ এখন তিনি সহসভাপতি পদ পেয়েছেন। 

বহিষ্কৃত ও মামলার আসামি

ছাত্রলীগ কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম হত্যা মামলাসহ ছয়টি মামলার আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি খালিদ হাসান ওরফে নয়ন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি এখন সহসভাপতির পদবি পেয়েছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হয়েছিলেন সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আবু সাঈদ আকন্দ। বর্তমান কমিটিতে তিনি সহসভাপতি। আবু সাঈদ দাবি করেন, সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রোষানলে পড়ায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসম্পাদকের পদ পাওয়া সোহেল রানাকেও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল। উপসম্পাদক মেশকাত হাসানের বিরুদ্ধে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সূর্য সেন হলের একটি কক্ষ থেকে ল্যাপটপ, বিভিন্ন মুদ্রা, জামাকাপড় চুরির অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করে। মেশকাত হাসানের দাবি, হলে ছাত্রলীগের দলাদলির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়।

ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মধ্যে মারামারির ঘটনায় বরকত হোসেন হাওলাদারকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি এবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতির পদ পান।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একের পর এক সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বারবার আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ। মাদক ব্যবসা, টেন্ডার-বাণিজ্য, পুলিশকে মারধরসহ একের পর এক নানা অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১২ মে নকলে বাধা দেওয়ায় পাবনার শহীদ বুলবুল কলেজের এক প্রভাষককে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগ আয়োজিত কনসার্টে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অর্থের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে কনসার্ট স্থলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তার আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকে তাঁর ওপর ময়লা দিয়ে হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ১৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে ৬০ লাখ টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।

বিবাহিতদের ছড়াছড়ি

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি সংগঠনের কমিটিতে স্থান পাবেন না। অথচ বিবাহিত হয়েও সহসম্পাদক পদ পেয়েছেন আঞ্জুমান আরা। এ বিষয়ে তিনি দাবি করেন, বিয়ে করে তিনি বিষয়টি অন্যদের মতো ধামাচাপা দিয়ে রাখেননি। আর রাজনীতিতে সুযোগ করে দেয়ার জন্য সংগঠন থেকে নারীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ছাড় রয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, আঞ্জুমানা আরা ছাড়াও উপসম্পাদক রকিবুল ইসলাম, খন্দকার নূর কুতুবুল আলম, রুশি চৌধুরী, আতিকুল ইসলাম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আসিফ ইকবালসহ আরও অন্তত ১৮ জন রয়েছেন, যাঁরা বিবাহিত হয়েও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবি পেয়েছেন।

আছেন চাকরিজীবীরা

ছাত্রসংগঠন হলেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন চাকরিজীবীরাও। কমিটির সহসভাপতি এস এম রাকিব ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উপসম্পাদক শফিউল ইসলাম ৩৯তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চাকরি পান। আরেক সহসভাপতি বি এম শাহরিয়ার অগ্রণী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি করছেন। সহসভাপতি জিয়ান আল রশিদ একটি কোম্পানির পরিচালক, রাকিব উদ্দিন ব্যবসায়ী। উপসম্পাদক সালাউদ্দিন জসিম একটি জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক। গণযোগাযোগবিষয়ক উপসম্পাদক সুশোভন অর্ক কাজ করেন একটি অনলাইন গণমাধ্যমে।

আন্দোলনকারীদের একজন টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এনামুল হক বলেন, চাকরির অনেক সুযোগ তাঁদের সামনেও এসেছে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি করবেন বলে চাকরিতে যোগ দেননি। অথচ চাকরিজীবীরাই এখন কমিটি দাবড়ে বেড়াচ্ছেন।

পুরাতন সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন সিন্ডিকেট?

ছাত্রদল নেতা রুহুল আমিন রাতারাতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হননি। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। তারও আগে ছিলেন গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আর শিবিরের ‘সাথি’ তাজউদ্দিনও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হওয়ার আগে গত কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও সহসভাপতি ছিলেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া যেসব নেতাকে নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের অনেকে এর আগেও সংগঠনটিতে একাধিক পদে ছিলেন।

আন্দোলনকারীরা তাঁদের যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে ৭ জন সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, ১৬ জন উপসম্পাদক, ৭ জন সহ-সম্পাদক, ৫ জন সদস্য, ১২ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ৪ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদধারী এবং তিনজন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা।

আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক রাকিব হোসেন ছিলেন গত কমিটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক। সেই কমিটির নেতা ছিলেন রুহুল আমিন ও তাজউদ্দিনও। আগে কেন তাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনেননি—এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রাকিব হোসেন।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশব্যাপী ছাত্রলীগের রাজনীতি এত দিন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার। প্রায় এক যুগ ধরে তাঁর অনুসারীরাই কেন্দ্রীয় ও অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় ছাত্রলীগের পদে ছিলেন। ছাত্রলীগে তাঁর একটা অনুসারী গোষ্ঠী তৈরি হয়। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নেতৃত্বে আনা হয়েছে এই অনুসারী গ্রুপের বাইরে থেকে। পদবঞ্চিতদের আন্দোলনের পেছনে এটাও একটা কারণ বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে লিয়াকত শিকদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, লিয়াকত শিকদার কেন্দ্রিক বলয় ভাঙার কথা বলা হলেও ছাত্রলীগকে কেন্দ্র করে নতুন একটি সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে লিয়াকত শিকদারের অনুসারী নেতারা এবার পদবি পাননি। তাঁদের দাবি, নতুন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।

সাবেক সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক রানা হামিদ বলেন, ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া চার নেতার সুপারিশে এবার অনেকে পদ পেয়েছেন। এই চার নেতার মধ্যে একজনের ভাতিজা কোনো দিন রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকেও কমিটিতে উপসম্পাদকের পদ পেয়েছেন। ছাত্ররাজনীতিতে এটিই তাঁর প্রথম পদ। এমন আরও অন্তত ১৪ রয়েছেন, যাঁরা প্রথমবারই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীরা কখনো ছাত্রলীগের সঙ্গে আদর্শিকভাবে ছিল না। তারা কোনো ভাই বা সিন্ডিকেটের রাজনীতি করেছে। এই নেতার ভাষ্যমতে, সিন্ডিকেট হলো তারাই, যারা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে অর্থ, সম্পদ, বিত্ত, বৈভব বানিয়েছে।

বহিষ্কার নিয়ে টালবাহানা 

গত বছরের মে মাসের ১১ ও ১২ তারিখে সংগঠনটির ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনের পর কমিটি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও শীর্ষ পদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে সময় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আড়াই মাস পর তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে দুই বছরের জন্য রেজওয়ানুল হক চৌধুরীকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে গিয়ে অধিকসংখ্যক বিতর্কিতকে স্থান দেয়ায় বিষয়টি তাই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছায়। ১৫ মে আন্দোলনকারীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের কার্যালয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী মুঠোফোনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ১৭ জন অভিযুক্ত নেতার নাম ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরপর ২৯ মে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯টি পদ শূন্য করা হয়েছে। ১৮ জুন সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমকে জানান, ১৯ জনের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তাঁদের নাম ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এখনো নাম ঘোষণা করা হয়নি।

ডাকসুর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য তানভীর হাসান বলেন, বিতর্কিতদের বহিষ্কারের যে কথা বলা হচ্ছে, এটাই তাঁদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। তবে এই বিতর্কিতের সংখ্যা ১১ বা ১৯ নয়, এটি আরও অনেক বেশি। তাঁর দাবি, অনেকের সঙ্গেই লেনদেন থাকায় তাঁদের বাদ দেয়ার সাহস করছেন না সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

এই অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। ‘বিতর্কিতদের’ বাদ দেয়া এবং যোগ্যদের পদায়নসহ চার দফা দাবিতে তাঁরা ১৮ জুন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের উপদপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ, ছাত্রলীগের কমিটির যে ১৯ জন বিতর্কিত নেতার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের নাম প্রকাশ, বিতর্কিত সব নেতার পদ শূন্য ঘোষণা এবং পদবঞ্চিতদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে শূন্যপদ পূরণ এবং মধুর ক্যানটিন ও টিএসসিতে তাঁদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আন্দোলনকারীদের স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হবে।

এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর বিষয়টি সুরাহা করার দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগের চার নেতা। তাঁদের একজন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। ছাত্রলীগ কমিটি ঘোষণা করেছে, বিতর্কিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান, ভুল পথ পরিহার করে ছাত্রলীগের সঠিক স্রোতোধারায় আসুন।’

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0092368125915527