মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ছাত্রলীগের কমিটির জন্য নতুন নেতৃত্ব খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চান না বর্তমান কমিটি আর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করুক। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এ নির্দেশ দেন। তবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা রাতে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রেজাউল করিম প্লাবন ও মাহমুদুল হাসান নয়ন।
সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ধারাবাহিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি চাচ্ছেন না বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে আর ছাত্রলীগ পরিচালিত হোক। সেজন্য দুই বছর মেয়াদী কমিটির দশ মাস বাকি থাকতেই নতুন নেতৃত্ব খোঁজার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বর্তমান কমিটি আর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করবে না। সোমবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক নেতা ছাত্রলীগের বিষয় নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে যান। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, কমিটির দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ হতে বাকি আছে ১০ মাস। এ সময়টুকু বর্তমান কমিটিকে দেয়া যায় কিনা- এমন অনুরোধ জানালে প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদককে নতুন নেতৃত্ব খোঁজার নির্দেশনা দেন। সংসদ থেকে ফিরে রাতে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক আলোচনা করেন। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, শনিবার দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং অযোগ্যতার কারণে এ কমিটি ভেঙে দিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। রোববার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সারাদেশে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
কমিটির বিষয় নিয়ে কথা বলতে সেদিনই গণভবনে ছুটে যান ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। কিন্তু সেখানে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কথা বলেননি। পরদিন সোমবার গণভবনে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসেন তারা। পরপর দু’দিন গণভবনে যাওয়া ও সেখানে দলীয় সভাপতি সাক্ষাৎ না পাওয়া, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল নিয়ে কৌশলী বক্তব্যে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে তারা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত জাতীয় চার নেতার সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তারাও এ নিয়ে কোনো সুপথ দেখাতে পারেননি। বরং বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা না বলে সরাসরি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দেন।
এদিকে কমিটি ভেঙে দেয়ার খবরে ছাত্রলীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা সোমবার এই কমিটি বহাল থাকছে- এমন জোর প্রচারণা চালালেও রাতে তাতে কিছুটা ভাটা পড়ে। অন্যদিকে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়া গত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা নেতারা এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পদবঞ্চিত আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক রাকিব হোসেন বলেন, আমরা শুধু নেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছিলাম। তার কাছে সব তথ্য রয়েছে এই বিশ্বাস আমাদের ছিল। অন্যায়-অনিয়ম করলে বঙ্গবন্ধুকন্যা কাউকে ছাড় দেন না সেটা আবার প্রমাণিত হল। আমরা চাই আগামী দিনে ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন কাউকে নেতৃত্বে নিয়ে আসুক, যার মাধ্যমে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।